সৌদি-পাকিস্তান সংঘটিত প্রতিরক্ষা চুক্তি, কাতার-মিশর ও কাতার-তুরস্ক সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা চুক্তি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে বড় ধরণের প্রভাব সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। এর আগে সৌদি-পাকিস্তান ইনফরমাল সামরিক চুক্তি থাকলেও এবার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে দেশ দু’টি নিজেদের আত্মরক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। মূলত ইসরাইলী আগ্রাসনের সামনে যুক্তরাষ্ট্র যে তাদের কোন সহযোগীতা করবে না তা উপলব্ধি করতে পেরেছে।
অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হলেও পাকিস্তানকে বিশ্বশক্তিগুলো কিছুটা সমীহ করে তাদের পারমানবিক শক্তি এবং সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠা ও দক্ষতার কারণে। এতদিন ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে সৌদি আরব প্রকাশ্যে ভারতের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতো না। এখন তারা প্রথমত যা করবে তা হচ্ছে, প্রায় ৫০ লক্ষ ভারতীয় শ্রমিকদের একটি অংশকে নিজ দেশে পাঠিয়ে দিবে। পাকিস্তানকে অস্ত্র কেনার পেট্রো ডলার দিবে। তা দিয়ে পাকিস্তান চীন থেকে অস্ত্র কিনবে, সাথে জাতিসংঘে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের পঞ্চপাণ্ডবের এক পাণ্ডবের সমর্থনও পাবে। ভারত আপাতত পাকিস্তানের সাথে নাক গলাবে না।
তবে এ সুযোগে বাংলাদেশের সাথে ভারত নতুন করে ঝামেলা সৃষ্টি করবে। কারণ স্থিতিশীল বাংলাদেশকে তারা নিজের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে। এক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদ আমলের মত কিছু রাজনৈতিক-সামরিক-ব্যবসায়িক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে নতুন পরিকল্পনা দিয়ে মাঠে নামাবে অথবা ইতিমধ্যে নামিয়েছে। সামনের নির্বাচন হতে পারে তাদের টার্গেটেড হটস্পট।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা উন্নয়নে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবরের মতোই ভারতের বিরুদ্ধে গিয়ে উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা পালন করতে পারেনি। এখনো পাকিস্তান, চীন কিংবা তুরস্ক কারো সাথে প্রকাশ্যে সামরিক সহায়তা চুক্তি করতে পারেনি। ফ্যাসিবাদ পরবর্তি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও ভারতের বিরুদ্ধে যায় এমন সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি কিংবা প্রতিরক্ষা উন্নয়নের জন্য সরকারের প্রতি প্রকাশ্য দাবি ও চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি।
এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়ে গেল। যদিও এদেশকে নিয়ে মার্কিন বাণিজ্য সহযোগীতার আড়ালে একধরণের সামরিক বোঝাপড়ার কথা শোনা যায়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থ রক্ষাকারী বড় দেশ কাতারে যখন ইসরাইল বিমান হামলা চালালো, যুক্তরাষ্ট্র কাতারকে রক্ষা করেনি। বাংলাদেশে ভারতের হামলা হলে, যুক্তরাষ্ট্র এখানেও একই ভূমিকা পালন করবে।
এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ-পাকিস্তান-চীন অথবা বাংলাদেশ-পাকিস্তান-তুরস্ক অথবা বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া অথবা এধরণের আরো কোন শক্তিশালী সামরিক এলায়েন্স গড়ে তোলার বিকল্প নেই। সামরিক বাহিনীর বাজেট ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বি-ভারতীয়করণ করতে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে যে কোন সময়ে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাবে।