শিরোনাম :

  • রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫

রাজনীতির চোরাবালিতে বিএনপি!

কাফি কামাল: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্যহীন রাজনীতির পথেই হাঁটছে বিএনপি। রাজনৈতিকভাবে আত্মঘাতি এই পথ রাজনীতির চোরাবালিতে ডুবিয়ে দিচ্ছে তাদের। লব্ধ প্রতিষ্ঠিত এ দলটি কোনো ইস্যুতেই দিতে পারছে না দূরদর্শীতার পরিচয়। জনসমর্থন থাকার পরও সাফল্য পাচ্ছে না জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দাবি আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে। সরকারের স্বৈরাচারি মনোভাব, মামলা-কারাভোগসহ বৈরি পরিবেশের পাশাপাশি নেতৃত্বের দূরদর্শী ও সাহসী পদক্ষেপের অভাবে দাবি আদায়ের লড়াইয়ে কেবল পরাজয়ই আসেনি, দলটিকে রাজনীতির মাঠেও করেছে কোনঠাসা। সাহসী নেতৃত্বের অভাবে মোসাহেবী প্রাধান্য পাওয়ায় গণতন্ত্রহীনতা তৈরি হয়েছে দলের অভ্যন্তরে। সুবিধাবাদীরাই এখন দলটির অগ্রভাগে। সংগঠন কিংবা আন্দোলন কর্মসুচি প্রণয়নে সব সিদ্ধান্তই শীর্ষ নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের নীতিনির্ধারক ফোরামসহ সিনিয়র নেতারা যেমন দৃশ্যমান কাক্সিক্ষত ভূমিকা রাখতে পারেনি, তেমনি তাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ কতটুকু আছে সেটা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। যা সংগঠনের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রহীনতা প্রকাশ ও শীর্ষ নেতৃত্বকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। এভাবেই বারবার রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দলটি রাজনীতিক কূটকৌশলের চোরাবালিতে খাবি খাচ্ছে এখন। বিএনপি সংসদে গিয়েছে, কিন্তু চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি মেলেনি। সংসদে না গেলে কি করা যেত তা যেমন দৃশ্যমান হয়নি, সংসদে পাঁচজনের একটি টিম কতটুকু কি করতে পারবে তাও প্রশ্নসাপেক্ষ। সর্বোপরি আগামীতে তাদের কর্মপন্থা ও গন্তব্যের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যও পরিষ্কার নয়। উল্টো নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দল।

স্বৈরাচার এরশাদ আমলে গণতন্ত্রের পক্ষে দীর্ঘ লড়াইয়ে নিজের আপসহীন ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। চলমান দশকেও দলটি গণতন্ত্রের পক্ষে চালিয়ে আসছে অব্যাহত আন্দোলন-সংগ্রাম। কিন্তু পরিবর্তিত বৈরি রাজনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে দলটি পাল্লা দিতে পারছে না। কেন পারছে না, এক কথায় এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। কিন্তু কিছু কারণ দৃশ্যমান। বিএনপির অভিযোগ- মহাজোট সরকারের আমলে এক ব্যক্তির শাসনে চলছে দেশ। এ অভিযোগের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা কঠিন। কিন্তু নিজেদের দলে তারা কতটুকু গণতন্ত্র বা যৌথনেতৃত্বের চর্চা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন? বিএনপির অভ্যন্তরে যতটুকু গণতন্ত্র চর্চাই হোক না কেন নেতাদের বক্তব্যে সে চর্চার প্রকাশ মেলে না। তৃণমূলের অভিযোগ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য ও কর্মকান্ডে অনেকক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্বের (চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) রাজনৈতিক ইমেজ রক্ষার দিকে মনোযোগ দেননি। ইস্যুর পর ইস্যুতে তাদের কৌশলী পদক্ষেপ ইমেজ ক্ষুণ্ন করেছে শীর্ষ নেতৃত্বের। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএনপির কর্মসূচিতে তেমন ছাপ ছিল না জনমুখী অবস্থানের। অবশ্য নীতিনির্ধারক ফোরামের এক সদস্য দ্বিমত পোষন করে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতিটি ক্ষেত্রে চেয়ারপারসনের ইমেজ রক্ষা করেছে, কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে সে সুযোগ ছিল না।

দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের একটি হিসেবে বিএনপির সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক রয়েছে সারা দেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়। দল পরিচালনায় একটি কেন্দ্রীয় কমিটি রয়েছে বিশাল আকারের। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যার আকার সর্ববৃহৎ। কিন্তু নেতৃত্বের সাংগঠনিক যোগ্যতা, গণমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা, চিন্তাভাবনার উদারতা, রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে দূরদর্শীতা এবং সর্বোপরি তাদের প্রতি কর্মী-সমর্থকদের আস্থা দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এখন। চলতি দশকে বিএনপি যেভাবে পরিচালিত হয়েছে তা চিহ্নিত করা যায় তিনপর্বে। ক. ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুক্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, খ. ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পরামর্শ ও যৌথনেতৃত্বে নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত এবং গ. ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা ও মহাসচিবের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের নভেম্বর পরবর্তী সময়।

রাজনৈতিক দলের নীতি, কর্মপন্থা ও কর্মসূচি নির্ধারণে ভূমিকা থাকে নেতৃত্বের শীর্ষস্থানীয় ও মাঝারি কয়েকটি স্তরের। বড় কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সে স্তরগুলো কি প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে পারে? প্রয়োজনে তৃণমূল নেতৃত্বের মতামত নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচি নির্ধারণ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচি প্রণয়নের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। জেলা পর্যায় ও নির্বাহী কমিটির মতামত নেয়ার পর স্থায়ী কমিটি আলোচনা শেষে সিদ্ধান্তের ভার দিত চেয়ারপারসনের ওপর। সেটা আবার মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ করতেন। চেয়ারপারসন সিদ্ধান্ত দেয়ার পর কর্মসূচি ঘোষণা হতো। আর তাদের কর্মসূচি ঘোষণার কৌশলগত দুর্বলতার কারণে তার পুরো দায়ভার চেপে বসতো চেয়ারপারসনের কাঁধে। আন্দোলন-সংগ্রামের ক্ষেত্রে রাজপথের কর্মসূচিগুলো প্রণয়নের দায়ভার নেতারা নিজেদের কাঁধে বণ্টন করে নেয়ার মতো প্রজ্ঞা বা দূরদর্শীতার পরিচয় দিতে পারেননি। অনেকক্ষেত্রে তারা রাজপথের কর্মসূচি ঘোষণা করিয়েছেন খালেদা জিয়ার মুখে। ফলে দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রহীনতার চর্চা যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি সব দায়ভার চেপেছে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ওপর। বিএনপি নীতিনির্ধারকদের মতে- দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের চূড়ান্ত ক্ষমতা চেয়ারপারসনের। তিনি ছাড়া অন্য কেউ সেটা করলে নেতাকর্মীরা কতটুকু মানতেন, সেটাও বিবেচ্য বিষয়। নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া মুক্ত থাকাকালে তিনিই সিদ্ধান্ত দিতেন। তবে একটি বিশেষ চক্র মোসাহেবগিরি ও কৌশলে সিদ্ধান্তগ্রহণে উনাকে বিভ্রান্ত করতেন। নেতাদের সঙ্গে তাকে সঠিকভাবে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। আর তখন মহাসচিবেরও রোল ছিল স্বল্প। তবে নীতিনির্ধারক ফোরামের সদস্যদের মতামতকে গুরুত্ব দিতেন চেয়ারপারসন। অনেকে মনে করেন, কর্মসূচি ঘোষণার ভুল প্রক্রিয়ার কারণে খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামী করে মামলা দায়ের সহজ হয়েছে। তবে বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানান, নীতির্নিধারক ফোরামের সঙ্গে আলোচনা করে দেয়া কর্মসূচির ক্ষেত্রে নয়, বরং তাদের অন্ধকারে রেখে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের প্ররোচনায় দেয়া সিদ্ধান্তগুলোই এক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর সে বছর নভেম্বর পর্যন্ত দলটি পরিচালিত হয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পরামর্শ ও স্থায়ী কমিটির যৌথ নেতৃত্বে। মহাসচিবও প্লে করেছেন গুরুত্বপূর্ণ রোল। এ সময়ে দলের তরফে বড় কোনো সিদ্ধান্ত যেমন আসেনি, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে করা যায়নি জোরালো। কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, জনসমর্থন তুঙ্গে থাকলেও দশকজুড়ে টানা বিপর্যয় এবং নানামুখী সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে সংগঠনে যে ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা বিরাজমান তাতে আন্দোলন করার সামর্থ নিয়ে তারাও সন্দিহান।

২০১৮ সালের নভেম্বরের পর শুরু হয়েছে বিএনপির নতুন পর্ব। পূর্বের রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সরে এসে তারা অংশ নেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। বৈরি পরিবেশ ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রত্যাখ্যানও করে। সংসদীয় বিধি অনুযায়ী সংসদে যোগ দেয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়ায় দলের এক নির্বাচিত প্রার্থী জাহিদুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু শেষদিনে এসে অনঢ় অবস্থান থেকে সরে অপ্রত্যাশিত ইউটার্নের মাধ্যমে সংসদে যোগ দেয় বিএনপি। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন- ‘দল, রাজনীতি ও দেশের স্বার্থে তারা সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’ অবশ্যই এর আগে সংসদ ইস্যুতে দলের স্থায়ী কমিটির প্রতিটি বৈঠকেই নেতিবাচক সিদ্ধান্ত এসেছিল। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের মতামত শুনেন। সেখানে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে মাত্র একজন পক্ষে বলেছিলেন, মহাসচিব নিরবতা পালন করেছেন। শেষে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। পরোক্ষ বিবেচনায় এখানেও সব দায়-দায়িত্ব চেপে বসলো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাঁধে। তৃণমূল নেতারা বলছেন, ‘মার্জিত রুচি ও গোছালো বক্তব্যের জন্য প্রশংসিত মহাসচিব তার বাক্যচয়নে একথা বলতে পারেননি যে, পরিবর্তিত পরিস্থিতি দলের সকল পর্যায়ে আলোচনা করেছি, মতামত নিয়েছি এবং ইতিবাচক মতামত আসায় আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দিয়েছিলাম।’ তাছাড়া সে ঘোষণা অনুষ্ঠানে দলের অন্য কোনো নেতাই উপস্থিত ছিলেন না। নীতিনির্ধারক নেতারা বলেছেন- তারা সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এটুকু বুঝতে পারছেন, বড় কোন বিবেচনায় পুরো দায়িত্বটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজের কাঁধে নিয়েছেন। এছাড়া বিএনপির নির্বাচিত এমপিদের শপথ গ্রহণের চাপ ছিল। বিএনপি মহাসচিব নিজেই সে সরকারি চাপের কথা বলেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি বিষয়টি জাতির সামনে পরিষ্কার করতে পারেননি। বলতে পারেননি, বিএনপি অনুমতি না দিলেও তারা সংসদে যেতো বা তাদের নেয়া হতো এবং ভাঙার নতুন অপচেষ্টাকে ঘনিভূত করা হতো। প্রশ্ন উঠেছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তে অন্যরা গেলেও মহাসচিব কেন শপথ নেননি? তার মানে তিনি বুঝতে পেরেছেন দলের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীরাই এতে খুশি হবেন না। বিএনপি মহাসচিব আগের দিন বলেছেন- কৌশলগত কারণে তারা সংসদে যাচ্ছেন, পরদিন তিনি বললেন- কৌশলগত কারণে তিনি শপথ নেননি। সবশেষ রোববার তিনি বলেছেন, ‘প্রথমে সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল না।’ প্রশ্ন উঠেছে, এটা কেমন কৌশল? এ কৌশলের খেলায় শীর্ষ নেতৃত্বকে সেভ করা হলো, নাকি প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়া হলো? বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ২০১৮ সালের নভেম্বর পরবর্তী সময়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেমন সর্বোচ্চ তৎপর হয়েছেন; তেমনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করছেন মহাসচিব। গৌণ হয়ে পড়েছে নীতিনির্ধারক ফোরামের ভূমিকা। এখানেও একটি বিশেষ চক্রের দিকেই সংশ্লিষ্টদের অভিযোগের তীর।

সংসদে যোগদান প্রশ্নে বিএনপির আকস্মিক অবস্থান বদল নিয়ে তৈরি হয়েছে নানাপ্রশ্ন। ডালপালা ছড়াচ্ছে নানামুখী গুঞ্জন। সংসদে যোগদানের বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ‘চমক’ ও ‘ইউটার্ন’ শব্দ দুটি ব্যবহার করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভাষাতত্ত্ব অনুযায়ী দুটির একটিও রাজনীতিতে ইতিবাচক শব্দ নয়। কলিন্স ডিকশনারি
বলছে- If you describe a change in a politician’s policy, plans, or actions as a U-turn, you mean that it is a complete change and that they made the change because they were weak or were wrong.
বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে ‘চমক’ শব্দটির অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে- ১. প্রভা; ঝলকানি; দীপ্তি (বিদ্যুতের চমক)। ২. আকস্মিক আতঙ্ক; ভয়। ৩. চমৎকার; বিস্ময় (চমক লাগা)। ৪. চৈতন্য; জ্ঞান (চমক হওয়া)। ৫. আচ্ছন্নতা; মগ্নতা। ৬. তন্দ্রা; নিদ্রা। বাংলা ভাষায়ও, বিশেষত রাজনীতিতে ‘চমক’ শব্দটি সবসময় ইতিবাচক অর্থ প্রকাশ করে না। মহাসচিবের মুখে শব্দ দুটির উচ্চারণ কৌতুহলকে জিইয়ে রাখছে রাজনৈতিক মহলে। মহাসচিবের শপথ না নেয়ার বিষয়টিও ধরে রেখেছে সমান কৌতুহল। তিনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, এই সিদ্ধান্ত দলের কোনো পর্যায়েই স্বতস্ফূর্তভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। বরং শপথ না নিয়ে রেকর্ড গড়া, স্যাক্রিফাইসের মনোভাব প্রকাশ করে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন। রাজনৈতিক দুর্মুখরা অবশ্যই এ নিয়ে নানা কথা বলছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এখানে মহাসচিবের দায় কতটুকু? রাজনৈতিক মহল মনে করে, মহাসচিব যেহেতু দলের সাচিবিক প্রধান এবং স্বীকৃত মুখপাত্র, তাই সার্বিক ব্যর্থতায় সমালোচনার তীরের প্রধান লক্ষ্যও স্বাভাবিকভাবেই তিনি। তবে স্বার্থপর ও সুবিধাবাদী মনোভাব, অদূরদর্শীতার দায় দলটির নীতিনির্ধারক ফোরামসহ কেন্দ্রীয় নেতারাও এড়াতে পারবেন না।

আপসহীন ভাবমূর্তি ধরে রাখতে গিয়ে কি নিঃসঙ্গ কারাভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে খালেদা জিয়ার? তার মুক্তি কখন হবে? গুঞ্জন ছিল বিএনপির এমপিরা সংসদে গেলে মুক্তি মিলবে তার। এখন পর্যন্ত সে লক্ষণ দৃশ্যমান নয়। অন্যদিকে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে দিনের পর দিন বক্তব্য দিয়েছেন দলটির নেতারা। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী শারীরিক অসুস্থতা ও উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে পঙ্গুত্বের পথে। এমনকি তারা নেতিবাচক আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন বারবার। কিন্তু তার চিকিৎসার প্রশ্নে তারা কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছেন? অন্তত সুচিকিৎসার ব্যাপারে তারা সরকারের উপর কতটুকু চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছেন? কিছুদিন আগে একটি গুঞ্জন ছড়িয়েছিল- চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া। সরকারের তরফে একটি পরোক্ষ প্রস্তাবও এসেছিল। এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার পারিবারিক একটি সূত্র তৎপরতা চালাচ্ছে বলেও সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু নেতারা সেটার কার্যকর পরিণতি দিতে পারেনি। রাজনীতিতে আপসহীনতার ভাবমূর্তির কারণে সহসা অবস্থান বদলাতে পারেন না তিনি। কিন্তু নেতাকর্মীরা পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিল, খালেদা জিয়ার যথোপযুক্ত চিকিৎসা দরকার। এক্ষেত্রে নেতারা মোটেই কৌশল করতে পারেননি। তৃণমূল নেতারা বলছেন, কিছুটা আপসের মনোভাব দেখিয়ে সিনিয়র নেতারা বলতে পারতেন- ‘আমরা যে কোনো মূল্যে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চাই। কিন্তু তিনি প্যারোলে মুক্তিতে আগ্রহী নন।’ নেতারা বারবার এ কথাটি বললে মানুষের মধ্যে যে আবেগ তৈরি হতো তাতে হারিয়ে যেতো প্যারোল শব্দটির মর্যাদা হানিকর ইমেজ এবং প্রাধান্য পেতো চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা। এক্ষেত্রে নেতাদের কাঁধে কিছুটা আপসের দায় নেয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মহাসচিব তখন বলেছেন- ‘প্যারোলের বিষয়টি খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।’ এই বক্তব্যের পর প্যারোলে মুক্তি হলে দায়টি সরাসরি চেপে বসতো খালেদা জিয়ার কাঁধে। ফলে রুদ্ধ হয়ে গেল সে পথ। দলটির তৃণমূল নেতারা বলছেন, কেন্দ্রীয় নেতারা দেশের কোটি কোটি বিএনপি সমর্থককে বিএনপি পরিবারের সদস্য বিবেচনা করে বক্তব্য দিলে কঠিন পথ অনেকটাই সহজ হতো। এখন দেখার বিষয় কৌশলের পর কৌশল বিএনপিকে কোন গন্তব্যে পৌঁছে দেয়।
dolupotra@gmail.com
# কাফি কামাল, সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক মানবজমিন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষ।
# লেখাটি তার ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত