কোনো পক্ষেই কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই

করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তকরণ পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনের শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৬৮৮ জনে পৌঁছেছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছিল ৬৬৫ জন। অর্থাৎ, এখন প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ২০ জনের বেশি নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। সোমবার পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার পেরিয়ে গেছে।

মে মাসে সংক্রমণ বাড়ার পূর্বাভাস এপ্রিলেই অনেকবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা অবিরাম বলে চলেছেন, বাংলাদেশ এখনো করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায়নি; সেটা আমাদের সামনে রয়েছে। তাঁরা বলছেন, পুরো মে মাস আমাদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সময়।

ঝুঁকি লাঘবের ক্ষেত্রে একটি গুরুতর উভয়সংকট রয়েছে। মানুষের জীবন রক্ষা করতে হবে, একই সঙ্গে জাতীয় অর্থনীতিকেও গুরুতর
বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে হবে। উভয় লক্ষ্য সাধনের জন্য প্রয়োজন অতি সূক্ষ্ম বিচার-বিবেচনা; পরিকল্পনা প্রণয়নে ও তা বাস্তবায়নে এমন ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অর্থনীতির ক্ষতি ন্যূনতম মাত্রায় সীমাবদ্ধ রেখে মানুষের জীবন রক্ষা করা যায়। অর্থনৈতিক বিবেচনাই যেন মুখ্য হয়ে না দাঁড়ায়।

অর্থনীতি রক্ষার তাগিদে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এতে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে এবং আরও বাড়বে। সেই ঝুঁকি শুধু কারখানাগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, শ্রমিকদের বাসস্থান ও লোকালয় পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিটি পোশাক কারখানার সবার মেনে চলা নিশ্চিত করা। শ্রমিকদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানসম্মত মাস্ক ও গ্লাভস পরে কাজ করতে হবে। প্রতিটি কারখানার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে এটা নিশ্চিত করতে হবে; তাদের দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য কঠোর নজরদারির প্রয়োজন হবে। কোনো পক্ষেই কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই।

সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারা যত দিন অব্যাহত থাকছে, তত দিন আমাদের সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতি অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু লকডাউন শিথিল করার কথা কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আমরা এখনো লকডাউন শিথিল করার উপযোগী সময়ে পৌঁছাইনি। পিক সময় বা সর্বোচ্চ মাত্রায় সংক্রমিত হওয়ার সময় পেরিয়ে যখন সংক্রমণ কমতে শুরু করবে, শুধু তখনই লকডাউন শিথিল করা এবং পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করা যাবে। এখন সংক্রমণ যাতে আরও ব্যাপক এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই বিচ্ছিন্নতা ও দূরত্ব রক্ষা করে যেতে হবে।

সংবাদমাধ্যমে ইতিমধ্যে খবর বেরিয়েছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ আরও কিছু এলাকা থেকে কিছু মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পর সেসব এলাকায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের এলাকাগুলো থেকে মানুষের অন্যত্র যাওয়া কিংবা অন্য কোনো এলাকা থেকে এসব এলাকায় মানুষের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করা দরকার। সে জন্য সর্বোচ্চ সংক্রমিত জেলাগুলোতে লকডাউন আরও জোরালো করতে হবে। আর যেসব জেলায় সংক্রমণের হার কম, সেগুলোতে লকডাউন কিছুটা শিথিল করা যেতে পারে।

অর্থাৎ এলাকা বাছাই করে ভিন্ন ভিন্ন রকম পদক্ষেপের মাধ্যমে সংক্রমণের বিস্তার রোধ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করতে হবে। 

Print Friendly, PDF & Email