অভিজিতের বাবার প্রশ্ন: হঠাৎ হত্যাকারী আবির্ভূত হলো কীভাবে?

image_158694_1_132311ঢাকা: দেশে ব্লগার অভিজিৎ রায় ও নিলাদ্রী নিলয় হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত এক সন্দেহভাজন ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশ দাবি করেছে।।

ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ বলছে, নিহত শরিফ এই দু’জনের হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলো।

পাশাপাশি সমকামীদের পত্রিকা রূপবানের সম্পাদক জুলহায মান্নান হত্যাসহ আরো সাতজন ব্লগার ও প্রকাশক হত্যার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

তবে অভিজিৎ রায়ের পরিবার বলছে, এসব ঘটনায় পুলিশের তদন্তের প্রতি তাদের আস্থা কমে আসছে।

গোয়েন্দা পুলিশের ভাষ্যমতে শরীফ নামে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তি আরো অন্তত পাঁচটি নামে পরিচিত ছিলো।

তাকে আনসার আল ইসলাম গোষ্ঠীর একজন শীর্ষ সংগঠক বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।

পুলিশ বলছে, শরিফ জঙ্গি সদস্য সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ ও সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতো।

সব ব্লগার হত্যায় জড়িত শরীফ: পুলিশ

ব্লগার অভিজিৎ রায়, নীলাদ্রী নিলয়, ওয়াশিকুর রহমান, নাজিমুদ্দিন সামাদ ছাড়াও প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন ও জুলহায মান্নানের হত্যাকাণ্ডেও শরিফ নামের এই ব্যক্তির সম্পৃক্ততার কথা জানাচ্ছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেছেন, “এই প্রত্যেকটা হত্যার সংগে তার সম্পৃক্ততা ছিলো। প্রশিক্ষণ, রিক্রুটমেন্ট এবং অপারেশন এই সবগুলোতে তার সরাসরি অংশগ্রহণ ছিলো। নীতি নির্ধারণেও সে সরাসরি জড়িত ছিলো। বিভিন্ন অপারেশন বাস্তবায়নেও ছিলো তার সক্রিয় ভূমিকা।”

মি বাতেন বলেছেন, আগে গ্রেফতার হওয়া আনসার আল ইসলামের কয়েকজন সদস্যের কাছে এই শরীফ সম্পর্কে তারা তথ্য পেয়েছিলেন।

গোয়েন্দা পুলিশের ভাষ্যমতে রাতে ঢাকার মেরাদিয়া থেকে ডেমরা যাওয়ার সড়কে একটি মোটরসাইকেলে তিনজন আরোহীকে ধাওয়া করে তাদের একটি দল।

পুলিশের দিকে তারা গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে একজন নিহত হয়।

পরে নিহত ব্যক্তিকে শরিফ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, তাদের কাছে ২০১৫ সালের বই মেলার যে সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে তাতে শরিফ নামে ঐ ব্যক্তিকে ব্লগার অভিজিৎ রায়কে অনেকক্ষণ অনুসরণ করতে দেখা গেছে।

ক্রসফায়ারের সমালোচনা

এরকম একজন গুরুত্বপূর্ণ অভিযুক্ত নিহত হলে তদন্ত কিভাবে এগুবে তার জবাবে মিস্টার বাতেন বলেন, “তদন্তে অসুবিধা হবে না। কারণ অন্যান্য আসামি যারা আছে নিশ্চয়ই আমরা তাদেরকে ধরতে পারবো। তাদের কাছ থেকে আমরা স্টেটমেন্ট আদায় করবো।”

গত সপ্তাহে চলা পুলিশের দেশব্যাপী অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে বেশ ক’জনের নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকেই।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই ঢাকায় এক কথিত বন্দুকযুদ্ধে দু’জন নিহত হয় যার একজন ওসমান ছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবির উচ্চ পর্যায়ের নেতা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামী।

অপর নিহত ব্যক্তি কামাল ছিল বগুড়ায় শিয়া মসজিদে গুলি চালিয়ে একজনকে হত্যার মামলার অভিযুক্ত।

বন্দুকযুদ্ধে এভাবে চাঞ্চল্যকর মামলার অভিযুক্ত নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনা চলছে।

মাদারীপুরে একজন কলেজ শিক্ষকের উপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্ত ফাইজুল্লাহ ফাহিম পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের ২৪ ঘণ্টার মাথায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

এসব বিতর্কের মাঝেই আজ অভিজিৎ রায়সহ আরো সাতটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত একজনের বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর খবর এলো।

অভিজিৎ রায়ের বাবার সন্দেহ

অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায় তার ছেলে হত্যার প্রধান অভিযুক্তের ক্রসফায়ারে হত্যার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি বলছেন, “এই কিছুদিন আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বলেছিলেন অভিজিতের হত্যাকারী তিনজনই দেশের বাইরে চলে গেছে। দেশের বাইরে চলে গেলে হঠাৎ করে এই হত্যাকারী আবির্ভূত হলো কি করে?”

মি রায় বলছেন, তার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার হবে কীনা সেবিষয়ে তিনি ধীরে ধীরে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন।

“মানুষ আশা নিয়েই বেঁচে থাকে। তবে যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, এভাবে যদি প্রকৃত হত্যাকারীরা ক্রসফায়ারের নামে নিহত হয় তো সেইভাবে তো আর তদন্ত বিভাগের প্রতিও আস্থা রাখতে পারি না, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমের ওপরেও আস্থা রাখতে পারি না। এমনকি সরকারের ওপরেও ক্রমশ আস্থাটা ক্ষীণ হয়ে আসছে।”

তার মতে অনেকগুলো হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত একজন প্রধান অভিযুক্ত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় বিচার বাঁধাগ্রস্ত হবে।

মি রায় বলছেন যেকোনো ক্রসফায়ারের ঘটনা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং আদালত এই ধরনের মৃত্যুকে কোন সময় আইনিভাবে বৈধ বলে মনে করে না।

Print Friendly, PDF & Email