জামায়াত ছাড়াও ৫ রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পথে

221596_1নিউজডেস্ক: দলবদ্ধভাবে করা যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর জন্য বিশেষ বিধান রেখে সংশোধন করা হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন (আইসিটি), ১৯৭৩’। সূত্র জানায়, সংশোধিত আইনে রাজনৈতিক দল হিসেবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী সব দল ও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করাসহ এদের বিচারের পথ সুগম হবে। এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী কর্মকা-ে জড়িত জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী অন্য পাঁচটি দল নিষিদ্ধ হতে পারে। ওই পাঁচটি দল হলোÑ পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি), নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ (কনভেনশন), মুসলিম লীগ (কাউন্সিল) ও কৃষক শ্রমিক পার্টি।

জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল। বিষয়টি উল্লেখ করে ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ দল হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। জানা গেছে, সংশোধিত আইনটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর সংসদ অধিবেশনে পাস হলেই জামায়াতের বিচারের ল্েয ট্রাইব্যুনালে মামলার চূড়ান্ত পদপে নেবে প্রসিকিউশন।

এদিকে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দলটি এবং এর অঙ্গ-সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির (সেই সময়কার ইসলামী ছাত্রসংঘ) ও ইসলামী ছাত্রী সংস্থা, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামসের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত চাওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর আলোকে তৈরি এ তদন্ত প্রতিবেদনে জামায়াত ও এর সব অঙ্গ-সংগঠন নিষিদ্ধ ও অবলুপ্ত করারও আরজি জানানো হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে জামায়াতের বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের বিরুদ্ধেও। ভবিষ্যতেও যেন কেউ এ ধরনের রাজনীতির আলোকে রাজনৈতিক দল গঠন বা রাজনীতি করতে না পারেন, সে রায়ও চাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি), নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ (কনভেনশন), মুসলিম লীগ (কাউন্সিল) ও কৃষক শ্রমিক পার্টিরও বিচার হতে পারে। এসব দল মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছিল। এ ছাড়া একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে এসব দলের বিরুদ্ধে। জামায়াত ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধেও তদন্ত প্রতিবেদনে একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। জামায়াতের নীতিনির্ধারক, সংগঠক, পরিচালক এবং কেন্দ্র থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এসব অপরাধের জন্য দায়ী করা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জামায়াত, এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর নানা নৃশংস অপরাধ এবং জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের যাবতীয় অপরাধের অভিযোগ তুলে আনা হয়েছে এ তদন্ত প্রতিবেদনে।

এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনটি সংশোধনের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত। শিগগির এটি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে তোলা হবে। এতে জামায়াত ছাড়াও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত দলগুলো নিষিদ্ধ করাসহ বিচারের আওতায় আসবে কিনা সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটি আইসিটি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরই বলা যাবে। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধী কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না বলে জানান আইনমন্ত্রী। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত কোনো দলকেই বিচারের বাইরে রাখা উচিত হবে না, তা সে ছোট বা বড় যে কোনো দল বা সংগঠন হোক। সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সঠিক তথ্য-প্রমাণসাপেক্ষে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিচার হতে পারে। তবে তা যেন কোনোভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হয়। অথবা কাউকে ঘায়েল করতে বা নিজেদের স্বার্থে করা না হয়।

Print Friendly, PDF & Email