‘হজরত’ মানে কী? কোথায় এর ব্যবহার?


মুসান্না মেহবুব :

ভারত উপমহাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে বহুল চর্চিত শব্দ ‘হজরত’। বাংলাভাষায়ও শব্দটির অবাধ ব্যবহার যুগ যুগ ধরে। সাধারণত ধর্মীয়ভাবে মর্যাদাবান ও জ্ঞানী মুসলিম ব্যক্তিবর্গের নামের শুরুতে এ শব্দটির ব্যবহার লক্ষ করা যায়। শব্দটির ব্যবহার নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা ও ট্রল করা হচ্ছে। জাতীয় সংসদের অধিবেশনে একজন সংসদ সদস্য বক্তব্যদানকালে এ শব্দটির বিশেষ ব্যবহার করেছিলেন, তারপর থেকেই মূলত এ আলোচনার জন্ম।

‘হজরত’ মানে কী?

বাংলা একাডেমি প্রণীত ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (২০১১) ঘেঁটে দেখা গেছে হজরত শব্দের একাধিক অর্থ করা হয়েছে। যথাক্রমে সম্ভ্রমের পাত্র; মহাত্মা; পয়গম্বর; অতি সম্মানিত ব্যক্তি। উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে—হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম।

বাংলা একাডেমির এই অভিধানে ‘হজরত’-এর উৎসভাষা হিসেবে আরবিকে উল্লেখ করা হয়েছে। এবং আরবিতে হজরত শব্দটিও লিখে দেওয়া হয়েছে।

শব্দটির আরবি অর্থ এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে কথা বলেছিলাম রাজধানীর মুহাম্মদপুরে অবস্থিত আরবি ভাষা বিষয়ক বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ‘মারকাযুল লুগা’র পরিচালক মাওলানা মাওলানা মহীউদ্দীন ফারুকীর সঙ্গে।

মাওলানা মহীউদ্দীন ফারুকী প্রসিদ্ধ একাধিক আরবি অভিধানের সূত্রে জানান, আরবিতে মূল শব্দ হচ্ছে ‘আল-হাদরাতু’। এর প্রাথমিক ও সরাসরি অর্থ উপস্থিতি বা অবস্থান। আর ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে দূরবর্তী অর্থ হিসেবে এর দ্বারা বোঝানো হয়—’যিল মাকানাহ’—যাঁর সামাজিকভাবে বিশেষ অবস্থান বা সম্মান রয়েছে। অর্থাৎ এককথায় আমরা বলতে পারি ‘সম্মানিত’, ‘মাননীয়’ বা মহামান্য।

কোথায় এর ব্যবহার?

মাওলানা মহীউদ্দীন ফারুকী বলছেন, আরব দেশগুলোতে ‘হজরত’ শব্দটি সাধারণভাবে ‘সাইয়্যিদ’ বা ‘জনাব’ অর্থে ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। তবে আমাদের ভারত উপমহাদেশে এই শব্দটার ব্যবহার আরেকটু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে করা হয়। অর্থাৎ এখানকার মুসলিম জনগোষ্ঠী ইসলাম ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিশেষ মর্যাদা বা জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রে এ শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন। এই অঞ্চলে ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের বাইরের কোনো সম্মানিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সাধারণত ‘হজরত’ শব্দ ব্যবহার হয় না।

তিনি বলেন, একসময় ভারত উপমহাদেশের মুসলিম রাজা-বাদশাহদের ক্ষেত্রেও ‘মাননীয়’ বা ‘মহামান্য’ অর্থে শব্দটির ব্যবহার ছিল, অতীতের ন্যায়নিষ্ঠ ও ইনসাফগার শাসকদের নামের পূর্বে এখনও অনেকে এ শব্দ ব্যবহার করেন, কিন্তু বর্তমানকার কোনো শাসক বা ধর্মীয় অঙ্গনের বাইরের কোনো সম্মানিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে শব্দটি ব্যবহার করতে দেখা যায় না।

মাওলানা মহীউদ্দীন ফারুকী বলেন, ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে এই শব্দটি ব্যবহারের কারণে আমাদের অঞ্চলের জন্য এটা পারিভাষিকভাবে ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের বিশেষণ হিসেবে নির্দিষ্ট হয়ে গেছে বলে আমার মনে হয়। তাই ধর্মীয় অঙ্গনের বাইরের কোনো সম্মানিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে শব্দটির ব্যবহার আভিধানিকভাবে সঠিক হলেও পরিভাষাগতভাবে বেমানান লাগাটা স্বাভাবিক।

Print Friendly, PDF & Email