জীবন বদলানোর টিপস-১


মুফতি ড. ইসমাইল মেন্ক

[জিম্বাবুয়ের ড. মুফতি ইসমাইল মেন্ক এ সময়ের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী স্কলার। মদিনায় শরিয়াহর ওপর তিনি উচ্চতর পড়াশোনা করেন। দাওয়া কাজের জন্য তিনি মুসলিম বিশ্বের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রশংসা অর্জন করেছেন। ২০১০ সাল থেকে ‘বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিমের মধ্যে একজন’ তিনি। তিনি অলডারগেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোশ্যাল গাইডেন্সের ওপর ডক্টরেট করেছেন। সামাজিক গণমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে বিশ্বজুড়ে কয়েক মিলিয়ন ফলোয়ার তার রয়েছেন। ড. মেন্ক তার গভীর জ্ঞান, সুদৃঢ় এবং বাস্তব পদ্ধতি অনুসরণ এবং বুদ্ধি ও কৌতুক মেশানো উপস্থাপনার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত ও জনপ্রিয়। তিনি ব্যাপকভাবে বিশ্ব ভ্রমণ করে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের দর্শকদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি আর সাধারণের সাথে একই রকম স্বাচ্ছন্দ্যময় সম্পর্ক তার। ড. মেনকের বার্তা একেবারে সহজ সরল। ভালো কাজ করুন, পরকালের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য অন্যের কাছে পৌঁছান। জাতি বা ধর্ম নির্বিশেষে তার এই বার্তাটি সবার মধ্যে অনুরণিত হয়। তিনি ব্যাপক পরিসরে মানবিক ও শিক্ষামূলক কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। ড. মেনক টুইটারে কোভিড-১৯ এর লকডাউনের সময় অনুশীলনের জন্য দু’টি বই গিফট করেছেন। জীবনাচরণের বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে সহজ সরল কিছু টিপস দিয়েছেন এখানে। লকডাউন গিফটের জীবন বদলানোর প্রথম আলোচনার বিষয়টি হলো সবর বা ধৈর্য। এই পরিচ্ছেদের টিপসগুলো দুই বা তিন অংশে তুলে ধরা হচ্ছে। ইংরেজি থেকে এর অনুবাদ করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক, দৈনিক নয়াদিগন্তের উপসম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী।]

আপনি যখন ক্ষতির সম্মুখীন হন, তখন মনে রাখবেন যে, সর্বশক্তিমান (আল্লাহ) আপনাকে আপনার ধৈর্য ও সহনশীলতার জন্য পুরস্কৃত করবেন, আপনি যা হারিয়েছেন তার চেয়েও অনেক বেশি তিনি দেবেন।

আপনার সাথে অন্যায় করা হয়ে থাকতে পারে, যা আপনার জন্য অনেক বেদনার কারণ হয়েছে। তবে মনে রাখবেন যে সর্বশক্তিমান আপনাকে এই প্রক্রিয়ায় অনেক বেশি শক্তিশালী করে তুলছেন।

আপনি যদি নিজের আত্মার শক্তি সম্পর্কে জানতে চান তবে যাচাই করে দেখুন আপনি কতটা ধৈর্যশীল, আপনি সর্বশক্তিমানের ইচ্ছাকে কতটা স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করেন। আপনি বেঁকে যাবেন কিন্তু ভাঙবেন না!

ভবিষ্যতের বিষয়ে উদ্বেগ চিন্তা আপনার গন্তব্যকে পরিবর্তন করবে না। কোনো মতে বেঁচে থাকুন। আর পূর্ণ আস্থা রাখুন যে, সর্বশক্তিমান কেবল আপনার জন্য মঙ্গলই চান।

কষ্ট ক্লেশ আসলে সর্বশক্তিমানের পক্ষ থেকে একটি উপহার। যদি আপনি তা সহ্য করেন এবং দৃঢ় থাকেন তবে যতই কঠিন সমস্যা হোক না কেন পরাক্রমশালী আপনাকে পুরস্কৃত করবেন এবং আপনার মর্যাদা উন্নীত করবেন।

সর্বশক্তিমান। আমরা চেষ্টা করে যাবার সময়ে বাস করছি। আমাদের বিশ্বাসকে মজবুত করে দিন। আমাদের সুরক্ষা দিন। আমাদের ভালো লোকদের সংঘ বজায় রাখতে সাহায্য করুন এবং আমাদের দরকারি জ্ঞানের দিকে পরিচালিত হতে সহায়তা করুন।

ভাববেন না যে, দুর্ভোগ আপনাকে দুর্বল করে দেবে। এটা কখনো হয় না। এটি সর্বশক্তিমানের সৃষ্ট জীবনের গভীরতারই প্রকাশ ঘটায়। সুতরাং যখন ব্যথা আপনাকে কাতর করবে, তখন মনে করবেন, তিনি পাশেই আছেন!

মানুষ সমালোচনা করবে। লোকেরা ভুল বুঝবে। ঠিক আছে। যতক্ষণ ভালো অভিপ্রায় এবং খাঁটি হৃদয় নিয়ে আপনি শান্তিতে থাকেন, সেটাই হলো গুরুত্বপূর্ণ।

যদি কেউ আপনাকে নিয়ে গল্প বানায় অথবা ব্যাকবাইট করে, তবে শান্ত থাকুন। তারা আপনার খারাপ কাজগুলো (গুনাহ) নিয়ে নিচ্ছে এবং খারাপ কাজে জড়িত হওয়ার সাথে সাথে তাদের ভালো কাজগুলো (সওয়াব) আপনাকে দিয়ে দিচ্ছে।

আমরা হতাশ বোধ করি, কারণ আমরা অন্যের কাছ থেকে খুব বেশি আশা করি। এটি করবেন না। মানুষ পাল্টে যায়। তারা সব সময় একই থাকবে এমন আশা করবেন না। সর্বশক্তিমানের পরিকল্পনায় বিশ্বাস আনুন!

সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার সর্বোত্তম উপায় হলো শান্তভাবে ও ধৈর্য নিয়ে এটি করা। সবাইকে বলে বেড়ানোর দরকার নেই। তাঁর মধ্যেই স্বস্তি সন্ধান করুন। আপনি আবার ঘুরে দাঁড়াবেন।

যতই রাগ হোক না কেন, অন্যের প্রতি কখনো কঠোর শব্দ ব্যবহার করবেন না; এটি তার সাথে বলা আপনার শেষ কথাও হতে পারে। সর্বদা সদয় হওয়াটাকে বেছে নিন।

আপনি যা প্রার্থনা করছেন তা যদি আপনি সত্যিই চান, তবে আপনি কখনোই অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হবেন না। সর্বশক্তিমানই সব জানেন। সংগ্রামের মধ্যে নিহিত রয়েছে সৌন্দর্য। পরম করুণাময়ে বিশ্বাস রাখুন।

অন্যরা আপনাকে হেয় করলে অথবা মিথ্য গুজব ছড়িয়ে দিলে তাতে কিছু মনে করবেন না। আপনার সম্পর্কে কারো অযাচিত কথাকে নিয়ন্ত্রণ আপনি করতে পারবেন না। যিনি গুরুত্বপূর্ণ তাকে সন্তুষ্ট করার প্রতি মনোনিবেশ করুন।

অযথা বিতর্কে আপনার সময় নষ্ট করবেন না। বিশেষত যারা ঔদ্ধত্য ধরনের তাদের সাথে। আপনি কী বললেন বা কী করলেন তা তার কাছে কোনো বিবেচ্য হবে না, সহজ কথাটি হলো তারা সত্যকে গ্রহণ করবে না।

পরাক্রমশালী! যারা নানা সমস্যার মুখোমুখি তাদের অশান্ত হৃদয়কে স্বাচ্ছন্দ্য দিন। তাদের সুন্দর ধৈর্য সহণশীলতা দান করুন এবং তাদের মধ্যে তৈরি করুন সত্যনিষ্ঠতা।

যখন খারাপ কোনো কিছু ঘটে যায় তখন নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, ‘এটি থেকে আমার কী শিখতে হবে?’ পাঠ খুঁজুন, বুঝতে চেষ্টা করুন। শক্তি পাওয়ার জন্য সর্বশক্তিমানের দিকে তাকান।

আপনি যেভাবে চান সেভাবে সব কিছুই হবে তা আশা করবেন না। ধৈর্য ধরতে শিখুন। আপনার কাছে যা কিছু আছে তার প্রশংসা করুন এবং সর্বদা সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ দিন, কৃতজ্ঞতা জানান।

কষ্ট, বেদনা, চাপ এবং উদ্বেগ যার মুখোমুখি আপনি হচ্ছেন সে সম্পর্কে অভিযোগ করবেন না। আপনি যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তার সব কিছুই সর্বশক্তিমান জানেন। তিনি সেই অনুসারে আপনাকে পুরস্কৃত করবেন।

কখনো কখনো আপনাকে যখন অপমান করা হয়, তখন আপনার কাছে চুপ থাকা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। সর্বশক্তিমানকে এটি ফয়সালা করতে দিন। শান্তি রক্ষা সবচেয়ে ভালো কাজ।

আপনি যদি সর্বশক্তিমানকে ভালোবাসার দাবি করেন তবে সর্বদা ধৈর্য প্রদর্শন করুন। তাদের মতো হবেন না যাদের যখন কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করা হয় তখন তারা অভিযোগ করে এবং অধৈর্য হয়ে ওঠে।

আপনি যখন সর্বশক্তিমানকে আরো বেশি বেশি করে বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তখন আপনার আত্মবিশ্বাস, আশা এবং হৃদয় পূর্ণ হবে। এমন শান্তিতে থাকবেন যা আগে কখনো ছিলেন না। সর্বশক্তিমানের কৃপার মধ্যে থাকুন।

আপনার সর্বশক্তিমানের কৃপা বা আশীর্বাদ লাভের কারণে যদি লোকেরা আপনাকে অপছন্দ করে তবে প্রতিশোধপরায়ণ হবেন না। প্রার্থনা করুন যেন তিনি তাদেরও এটি দান করেন এবং তাদেরও সুখী রাখেন।

বলুন, হে পরাক্রমশালী। যখন অবস্থা আমার অনুকূলে না যায় তখন আমাকে ধৈর্য দিন। আপনি যা চান তা গ্রহণ করে নেয়ার মধ্যে আমার হৃদয়ে প্রশান্তি পেতে আমাকে সহায়তা করুন। আর আপনি তো সেরা পরিকল্পনাকারী।

আপনি যা চান তার জন্য অভিযোগ করবেন না আর অপেক্ষা করতে কৃপণতা করবেন না। ধৈর্যের মধ্যে মঙ্গল রয়েছে। সর্বশক্তিমান যদি চান যে আপনি তা পান, তবে তিনি সেটি দেবেনই।

কিছু ব্যক্তি এমন আচরণ করে যে, তারা যেন আপনাকে জানে না এবং কেবল তারা তখনই বন্ধুত্বপূর্ণ হয় যখন আপনার সহায়তা তাদের প্রয়োজন হয়। তাই হতে দিন। আপনি যদি পারেন সাহায্য করুন। তিনি আমাদের পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন লোক পাঠান।

অপেক্ষা কখনোই সহজ কাজ হয় না। আপনি যখন খুব তীব্রভাবে কিছু চান এবং সর্বশক্তিমানের সাড়া তাতে পাচ্ছেন না মনে করেন। তখন ভুলে যাবেন না যে, প্রতিটি বিলম্বের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে।

লোকদের আপনাকে বিচার করতে দিন এবং তারা যা চায় তা বলতে দিন। লোকেরা যেমন করে বিচার করে তেমনিভাবে বিচার করেন না সর্বশক্তিমান। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সঠিক কাজটিই করুন।

কাল : জীবন বদলানোর টিপস : ধৈর্য- দুই

Print Friendly, PDF & Email