অর্থসংকটে ১৪শ’ হজ এজেন্সি, নগদ প্রণোদনা ও সুদহীন ব্যাংক লোন চায় হাব

জাহাঙ্গীর আলম আনসারী ◾

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনার কারণে চলতি বছরের হজ অনুষ্ঠান সীমিত আকারে আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। শুধু মাত্র সৌদির ভেতর থেকেই এবারের হজে ১০ হাজার লোক অংশ নিতে পারবেন। বাইরের দেশ থেকে কোনো হজযাত্রী আসতে পারবে না।

সৌদির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকেও এবার কোনো হজযাত্রী হজ করার জন্য সৌদি আরবে যেতে পারবেন না। এতে করে চরম অর্থসংকট ও ক্ষতিরমুখে পড়েছে দেশের প্রায় ১৪শ’ হজ এজেন্সি। অর্থসংকটের কারণে তারা কয়েক মাস ধরে অফিস ভাড়া ও স্টাফদের বেতন-ভাতা দিতে পারছেন না। ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই এখন তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
কয়েকজন হজ এজেন্সি মালিকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, প্রতিবছর ওমরা থেকেও তারা ভাল একটা ব্যবসা করে থাকেন। কিন্তু গত ফেব্রæয়ারি মাস থেকেই বন্ধ রয়েছে ওমরা। এরপর এখন আবার হজে লোক পাঠাতে না পারায় ফেরত দিতে হবে নিবন্ধনকৃত হজযাত্রীদের টাকাও। অফিস কিভাবে টিকিয়ে রাখবেন এনিয়ে তারা খুব দুশ্চিন্তায় আছেন।
হজ এজেন্সি মালিকরা বলছেন, সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই করোনা সংকটের মধ্যে হজ ব্যবসা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। সরকার যদি আমাদের জন্য কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা করে তাহলে আপাতত আমরা অফিসটা ধরে রাখতো পারবো।

এবিষয়ে কথা বললে-জে আর আই এইচ ইন্টারন্যাশনালের মালিক আবুল কাশেম চৌধুরী দেশনিউজকে বলেন, আমার অফিস থেকে এবার হজে যাওয়ার জন্য ৬০ জন নিবন্ধন করেছিলেন। তাদেরকে পাঠানে না পারায় খুব সংকটে পড়েছি। প্রতি মাসে অফিস ভাড়া, স্টাফদের বেতন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এখনতো আমাদের ব্যবসা একেবারে বন্ধ। এই সংকটে আমরা সরকারের কাছে প্রণোদনার দাবি জানাচ্ছি। অন্যান্য সেক্টরের মতো আমাদেরকেও লোন দেয়া হোক। যাতে আমরা টিকে থাকতে পারি।

আরেক হজ এজেন্সি এটি এম ট্রাভেলসের মালিক আবুল কালাম আজাদ দেশনিউজকে বলেন, আমার অফিস থেকে এবার ৯২ জন হজযাত্রী হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন। হয়তো এখন তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমার অফিস ভাড়া, স্টাফদের বেতন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি মাসে ১ লাখ ২০ হাজার খরচ আছে। কয়েক মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ। অফিস ভাড়া ও স্টাফদের বেতনের টাকা কোথাও পাবো সেটাই এখন বুঝতেছি না। করোনার কারণে আমরা অর্থনৈতিকভাবে চরম সংকটে পড়েছি। আমরা হাবের মাধ্যমে সরকারের কাছে প্রণোদনার দাবি জানিয়েছে। সরকার যদি সহযেগিতা করে তাহলে আমাদের সংকট কিছুটা নিরসন হতে পারে।

এবার হজে লোক পাঠাতে না পারায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে জানিয়েছেন আরেক হজ এজেন্সি ইউনাইটেড স্টার ট্রাভেলসের মালিক ফরিদ আহমেদ। দেশনিউজকে তিনি বলেন, এবছর ৯৭ জন হজযাত্রী হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন। করোনার কারণে কাউকে পাঠাতে পারছি না। আমাদের সামনে এখন শুধু অন্ধকার।
তিনি বলেন, অফিস ভাড়া, স্টাফদের বেতনসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি মাসে খরচ আছে আড়াই লাখ টাকা। গত ফেব্রæয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে ওমরা। এখন আবার করোনার কারণে হজযাত্রীদেরও পাঠাতে পারছি না। কয়েক মাস ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য একেবারে বন্ধ। পরিবার নিয়ে কিভাবে চলবো, অফিসের স্টাফদের বেতন কিভাবে দিবো ও অফিস ভাড়া কোথা থেকে দিবো এনিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
ফরিদ আহমদ বলেন, সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই মুহূর্তে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই-আমাদের জন্যও প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। কমপক্ষে আমাদের জামানতের টাকা থেকে লোন হিসেবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্ধেক টাকা ফেরত দিতে হবে। আমরা পরে আস্তে আস্তে আবার এগুলো দিয়ে দিবো। সরকার এ কাজটা করলেও সংকটকালীন সময়ে আমরা টিকে থাকতে পারবো।

আর হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি সাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেছেন, সংকটকালীন সময় উত্তোরণের জন্য সরকারের কাছে তারা প্রণোদনা ও সুদহীন ব্যাংক লোনের দাবি জানিয়েছেন।
হজ এজেন্সি মালিকদের ক্ষয়ক্ষতি ও সরকারের কাছে দাবি দাওয়ার বিষয়ে সোমবার দুপুরে দেশনিউজকে সাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে হজ এজেন্সির সংখ্যা প্রায় ১৪শ’। সবগুলো এজেন্সির ক্ষয়ক্ষতি আমরা এখনো হিসাব করিনি। তবে, এবার হজে লোক পাঠাতে না পারায় বড় একটা ক্ষতির মুখে পড়েছে এজেন্সিগুলো। অধিকাংশ এজেন্সির মাসে খরচ আছে ২-৩ লাখ টাকা করে। কয়েক মাস ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। তারপর আগামী দিনগুলো চলতে হবে। সব মিলিয়ে এজেন্সি মালিকরা চরম সংকটের মুখে আছে।

তিনি বলেন, এই সংকট থেকে উত্তোরণের জন্য আমরা সরকারের কাছে নগদ প্রণোদনা দেয়ার দাবি জানিয়েছি। এই দাবি সরকার কতটা পূরণ করে বলা যায় না। এছাড়া সুদহীন ব্যাংক লোনের দাবিও জানিয়েছি আমরা। অন্যদের মতো না। হজ এজেন্সি মালিকদের জন্য যাতে সুদহীনভাবে ব্যাংক লোন দেয়া। এগুলো নিয়ে আমরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের সঙ্গে কথা বলছি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেখি কি হয়।


ডিএন/এইচএন/জেএএ

Print Friendly, PDF & Email