১১ বছর ধরে দেশের মানুষ ‘আওয়ামী ভাইরাসে’ আক্রান্ত: বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক।

বিগত ১১ বছর ধরে বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশের মানুষ ‘আওয়ামী ভাইরাসে’ আক্রান্ত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা। একই সঙ্গে দেশ রক্ষায় প্রয়োজনে করোনার মধ্যেই রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেখুন দেশের মানুষের অধিকারগুলো কীভাবে হরণ করা হয়েছে। মেজর  (অব.) সিনহা মো রাশেদ খানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে। মিডিয়ার কারণে জনগণ এখন কথা বলতে শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্র হরণ ও মানুষ অধিবার কেড়ে নিতে ১/১১ সরকারের সময় থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেই সময় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যে বিভক্তির সৃষ্টি করা হয়েছে, বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করা হয়েছে এখনো আবার তাই শুরু হয়েছে। এখন বিএনপির সামনে যে কাজ তা হচ্ছে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, মানুষের অধিকার ফিরে পাওয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্ত করা এবং দেশে একটি নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই সরকারের দুর্নীতি আজ নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আজকে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি অব্যবস্থাপনা, লুটপাট, করোনা পরীক্ষা নিয়ে কেলেঙ্কারি বিদেশে ভাবমূর্তী বলতে কিছু নেই। আমাদের নেতাকর্মীদের সামনে বিশাল দায়িত্ব। দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, সমাজে যে পচন ধরেছে সেখান থেকে দেশকে উদ্ধার করা। সব মিলিয়ে দেশকে রক্ষা করা-এ দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের ও আমাদের দলের নেতাকর্মীদের।’ 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে দুটা ভাইরাস। একটা হচ্ছে আওয়ামী ভাইরাস। এই ভাইরাসে গত ১১ বছর দ্বারা আমরা আক্রান্ত, আমাদের জর্জড়িত করেছে। আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মীরা নামে মামলা দেওয়া আছে। মামলার সংখ্যা ১ লক্ষের উপরে চলে গেছে। এই সরকার কত না চেষ্টা করেছে বিএনপিকে নিঃশেষ-নিশ্চিহ্ন করে  দেয়ার জন্য। আমার নেত্রীকে কারাগারে পর্যন্ত নিয়েছে।  তবে যে শক্তি সংগঠন বলতে যা বোঝায় সেটা নষ্ট করতে পারেনি। আর আরেকটা হচ্ছে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস। এ সময়টা বিএনপির জন্য পরীক্ষার সময়। এই দুই ভাইরাসকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এই ভাইরাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে চিন্তা করতে হবে।’

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমার মনে হলো কোনো একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী আসছে। কথাটি আমি অন্যভাবে বললাম। এমনভাবে তাকে রিসিভ করা হয়েছে। আমাকে আমার ছেলে জিজ্ঞাস করল লোকটা কে এবং কেন আসছে? আমি বললাম সে বিশেষ দেশের লোক। যখন আসছে আমার মনে রাখতে হবে সে কোনো উপকার করার জন্য আসেনি। বরং ক্ষতি করার জন্য আসছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি হচ্ছে দেশটাকে শেষ করে দেয়া। এখন আমাদের কাজটা কী? এসময় আমাদের কাজ হচ্ছে নিজেদের সুসংগঠিত করে এই হায়না বাহিনীকে প্রতিরোধ করা ও প্রতিহত করা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা করোনার জন্য বাইরে বের হতে পারি না, কথা বলতে পারি না, কাজ করতে পারি না। এই করোনার মধ্যে যদি আওয়ামী লীগ দেশকে একেবারেই ধ্বংস করা শুরু করে দেয়। তাহলে কিন্তু এই করোনা টরোনা মানা যাবে না যদি সম্ভব হয়। হয়ত আমি বেশি বলে ফেললাম। যদি বলেন আপনি নামবেন কিনা? নিশ্চয়ই বের হবো।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সম্প্রতি একজন বলেছেন তাকে জিয়াউর রহমান মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমার প্রশ্ন তখন তার বয়স কতছিল? ৩৩/৩৪ বছর। সে সময় তিনি আওয়ামী লীগের প্রখ্যাত নেতাও না। অথচ ওই এলাকায় প্রখ্যাত নেতা ছিলেন আসাদুজ্জামান খান, মবিন তালুকদারের মতো প্রখ্যাত নেতা ছিলেন। তাদের খোঁজখবর না নিয়ে তার খবর নিলেন, তাকে মন্ত্রী সভায় আহ্বান করেছেন-এটা একান্তই ভূতরে গল্প।’

ভার্চুয়াল সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও অংশ নেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েলের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন-স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও সেলিমা রহমান প্রমুখ।

ডিএন/পিএন/জেএএ/১০:৫৪পিএম/১৯৮২০২০২৬

Print Friendly, PDF & Email