তদবির বাণিজ্যেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মহাপ্রতারক সাহেদ

এবিএন হুদা ◾

অভিনব সব কৌশলে প্রতারণা ও মানুষকে ফাঁসানোর জন্য প্রতারকদের কাছে ‘আইডল’ ছিলেন মো. সাহেদ। চেয়ারম্যান পদে বসানোর জন্য রাজউকের সাবেক এক কর্ণধারের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পুলিশ সুপারকে তার ‘বিপদের’ হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিয়েছেন এক কোটি টাকা। চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে নিয়েছেন প্রায় এক কোটি টাকা। সাহেদের প্রতিষ্ঠানের সাবেক একাধিক কর্মী গতকাল মঙ্গলবার সমকালকে এ তথ্য জানান।

অবশেষে প্রতারক-সম্রাট সাহেদকে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে অস্ত্রজসহ গ্রেপ্তার করেছে এলিট বাহিনী । মঙ্গলবার থেকেই সাতক্ষীরা সীমান্তে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা। এর আগে মৌলভীবাজার সীমান্তেও ছিল কড়া নজরদারি।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার রাতে রিজেন্টের এমডি মাসুদ পারভেজকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। রিজেন্টের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ২ নম্বর আসামি তিনি। সাহেদের প্রতারণার অন্যতম সহযোগী এই মাসুদ।

সাহেদের সাবেক এক দেহরক্ষী জানান, রাজউকের শীর্ষ পদে বসতে এক কর্মকর্তা সাহেদকে কাজে লাগান। হোটেল সোনারগাঁওয়ে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে সাহেদের অন্তত একশ’বার দেখা হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ নিলেই তাদের দেখা-সাক্ষাতের বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। এ ছাড়া এক ব্যক্তি একবার ঝামেলায় পড়েন। তিনিও সাহেদের দ্বারস্থ হন। ঢাকার একটি হোটেলে তার হাতে এক কোটি টাকা তুলে দেওয়া হয়। অধিকাংশ সময় সাহেদ ক্যাশে সব লেনদেন করতে পছন্দ করতেন। ব্যাংকে লেনদেন করলে ডকুমেন্ট থেকে যায় তাই ‘ক্যাশপ্রেমী’ ছিলেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদ পলাতক আছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে জাল সার্টিফিকেট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সাহেদের জাল সার্টিফিকেটে প্রতারিত অনেক ভুক্তভোগী র‌্যাব ও পুলিশে অভিযোগ জানাচ্ছে। চেক জালিয়াতিসহ সব প্রতারণার তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়েই র‌্যাব জানতে পারে সাহেদের সার্টিফিকেট জালিয়াতির কথা। তিনি বলেন, প্রতারণার জগতে সাহেদ আইডল। কীভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঠকবাজি করে একটা পর্যায়ে আসা যায় তার অনন্য দৃষ্টান্ত সাহেদ।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, রিজেন্ট কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের জাল সনদ দেওয়া হতো। এতে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে। যে সনদগুলো শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে, তা জাল। এই সনদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তি ও শিক্ষাজীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ রকম অনেক ভুক্তভোগী যোগাযোগ করছেন। আমরা তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। পাশাপাশি তাদের বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে।

সাতজন কারাগারে : করোনার পরীক্ষা না করেই ‘ভুয়া সনদ’ দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের সাত কর্মকর্তা-কর্মীকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী এই আদেশ দেন। ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আসামিদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ পরিদর্শক আলমগীর গাজী।
আসামিরা হলেন রিজেন্ট হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহসান হাবীব হাসান, হেলথ টেকনিশিয়ান আহসান হাবীব, টেকনোলজিস্ট হাতিম আলী, রিজেন্ট গ্রুপের প্রকল্প পরিচালক রাকিবুল হাসান ওরফে সুমন, মানবসম্পদ কর্মকর্তা অমিত বণিক, গাড়িচালক আবদুস সালাম ও হাসপাতালের কর্মী আবদুর রশিদ খান ওরফে জুয়েল। গত ৮ জুলাই এই ৭ আসামির ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওই দিন কামরুল ইসলাম নামের এক আসামি কিশোর হওয়ায় তাকে গাজীপুর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

করোনার পরীক্ষা না করে সনদ দেওয়াসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগে ৭ জুলাই রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা করে র‌্যাব। মামলায় ১৭ জনকে আসামি করা হয়।

ডিএন/সিএন/বিএইচ/০৭ঃ১৫এএম/১৫০৭২০২০-২

Print Friendly, PDF & Email