বিবি’র লুটের ১৫ কোটি টাকা বন্ধুর মাধ্যমে পান শালিকা

hegoda_gamage_shalika_perera_8610নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ২ কোটি ডলার (প্রায় ১৫ কোটি ৬ লাখ টাকা) এক বন্ধুর মাধ্যমে পেয়েছে শ্রীলংকার ভুয়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ‘শালিকা ফাউন্ডেশন’।

সংস্থাটির প্রধান হ্যাগোডা গামাজ শালিকা পেরেরা বার্তাসংস্থা রয়টার্সের কাছে এ দাবি করেছেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি’র) রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া যে ২ কোটি ডলার শ্রীলংকায় পাঠানো হয়েছিল, তা এক ‘বন্ধুর’ মাধ্যমে শালিকা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছিল।’

শালিকা পেরেরা বলেন, শ্রীলংকায় একটি বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণসহ কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকা থেকে ওই অর্থ তাকে এনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার বন্ধু।

তিনি আরও জানান, কিন্তু, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া টাকা থেকে যে ওই অর্থ আনা হয়েছিল, তা তিনি ধারণাও করতে পারেননি।

শালিকা প্রধানের দাবি, জাইকা তার প্রকল্পে যে ২ কোটি ডলার দিচ্ছে, তা তিনি জানতেন। তবে জাইকার সঙ্গে তার ‘সরাসরি’ কোনো যোগাযোগ হয়নি।

তিনি দাবি করেন, তারা খুবই সত মানুষ। কোনো ধরনের অবৈধ কাজের মধ্যে তারা নেই। তার সেই বন্ধু হয় নিজে হ্যাকারদের শিকার হয়েছেন, নয়তো সে নিজেও চোরের দলে যুক্ত বলে মনে হচ্ছে।

তবে জাইকা বলছে, শালিকা ফাউন্ডেশন নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই।

এদিকে পেরেরা সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের একটি নোট রয়টার্সকে দেখিয়েছেন। এতে লেখা, বাংলাদেশের পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ড জাইকার কাছ থেকে ২০১০ সালে ঋণ হিসেবে নেয়া ওই ২ কোটি ডলার পরিশোধ করার পর তা শ্রীলংকায় শালিকার অ্যাকাউন্টে জমা করতে পাঠানো হয়েছে।

তবে পল্লি বিদ্যুতের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেছেন, তাদের কাছ থেকে ওই অর্থ গেছে, এমন চিন্তাই ‘হাস্যকর’।

গত ৪ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০০ কোটি ডলার চুরির চেষ্টায় ৩৫টি ভুয়া সুইফক কোড পাঠায় হ্যাকাররা।

এর মধ্যে এর মধ্যে ৩০টি আটকে গেলেও একটি কোডরে মাধ্যমে ২ কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলংকার প্যান এশিয়া ব্যাংকের শালিকা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে। চারটি কোডের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) চারটি অ্যাকাউন্টে।

ডয়চে ব্যাংকের মাধ্যমে শ্রীলংকায় যাওয়া অর্থ স্থানান্তরের সময় শালিকা ফাউন্ডেশনের বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হলে  ডয়চে ব্যাংক বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চায়। এতে বেরিয়ে আসে, অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধটি ছিল ভুয়া। এ কারণে ওই অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দেয় ওই ব্যাংকটি।

এদিকে, শালিকা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনে শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা শাখা। এ অভিযোগ তদন্ত করে দেশটির পুলিশ।

পুলিশ জানায়, শালিকা ফাউন্ডেশন এ বছরের ২৬ জানুয়ারি বেসরকারি প্যান এশিয়া ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খোলে। এর ছয় দিন পর ওই অ্যাকাউন্টে সুইফট মেসেজের মাধ্যমে দুই কোটি ডলার পাঠানো হয়। কিন্তু মেসেজে ‘ ফাউন্ডেশন’ শব্দটির বানান ‘ ফেন্ডেশন’ লেখা দেখে এই লেনদেনর বিষয়ে ব্যাংকটি সতর্ক হয়ে যায় এবং বাংলাদেশকে চুরি করা দুই কোটি ডলার ফেরত দেয়।

শ্রীলংকার পুলিশ বলেছে, নিম্ন আয়ের পরিবারকে সহায়তার কথা বলে শালিকা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু সরকারি অফিসে জমা দেয়া কাগজপত্রে কলম্বোর দেহিওয়ালা এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়িকে এনজিওটির অফিসের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।  এছাড়া ওই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগের অন্য কোনো ঠিকানাও পাওয়া যায়নি।

পুলিশের কাছ থেকে প্রতিবেদন পেয়ে গত ২১ মার্চ শালিকা ফাউন্ডেশনের ছয় পরিচালকের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটির আদালত।

তারা হলেন গামাজ শালিকা পেরেরা, সানজেবা টিসা বান্দরা, শিরানি ধাম্মিকা ফার্নান্দো, ডন প্রসাদ রোহিতা, নিশান্থা নালাকা এবং ওয়ালাকুলুয়ারাচ্চি।

এদিকে, ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনায় ফিলিপাইন সিনেটের ব্লু-রিবন কমিটিতে শুনানি হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email