যেসব পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে-কমবে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক |

মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের পর বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন।

এটি দেশের ৪৯তম ও বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালেরও এটি দ্বিতীয় বাজেট।

শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করায় কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে…

হাতে তৈরি খাবার, গুঁড়া দুধ, রং, অনলাইন খাবার, অনলাইন কেনাকাটা, সোডিয়াম সালফেড, আয়রন স্টিল, স্ক্রু, বার্নিস বাইসাইকেল, কম্প্রেসার শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণ, বিদেশি মোটরসাইকেল বডি স্প্রে, স্মার্টফোন, ফলের জুস, বোতলজাত পানি, আমদানি করা এলকোহল, কোমল পানীয় পলিথিন ব্যাগের দাম প্রস্তাবিত বাজেটে বাড়তে পারে।

আরও যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে – এয়ারকন্ডিশনার, প্রসাধনী সামগ্রী, মোবাইল ফোন সেবা খরচ, ইন্টারনেট সেবা, বিড়ি ও সিগারেট, আলোকসজ্জা সামগ্রী, গাড়ি রেজিস্ট্রেশন খরচ, গাড়ি, শ্যাম্পু, চকলেট, বিদেশি টিভি।

তবে বাজেটে বলা হয়েছে, বাজেটকে ঘিরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে পারে এমন কোনো উপকরণ বাজেটে রাখা হয়নি।

বাড়ছে মোবাইলে কথা বলার খরচ-

খরচ বাড়ছে মোবাইল ফোনে কথা বলায়। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোনে সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে; এতেই খরচ বাড়ছে মোবাইল ফোন ব্যবহাকারীদের।

২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। এটি দেশের ৪৯তম এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালের দ্বিতীয় বাজেট।

গাড়ির রেজিস্ট্রেশন খরচ বাড়বে-

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিগত গাড়ি কার ও জিপের রেজিস্ট্রেশনে অগ্রিম আয়কর বাড়ানো হচ্ছে। এতে গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের খরচ বাড়বে। 

উত্থাপিত এই বাজেটে কার ও জিপের রেজিস্ট্রেশনসহ এই দুটি বাহনের ক্ষেত্রে বিআরটিএ প্রদত্ত অন্যান্য সার্ভিস ফির ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া বাজেটে চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়ার ওপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ। ফলে চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়া আরও বাড়ছে।

কমতে পারে –

মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, পিপিই, ওষুধ, আইসিইউ যন্ত্রপাতি, ফেস শিল্ডসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী, চার্জার কানেকটর পিন, পোল্ট্রি, ডেইরি ও মৎস্য শিল্পে ব্যবহৃত তিনটি উপকরণ, ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত ৪৩টি উপকরণের দাম, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, লিফট প্রস্তুতকারী শিল্পে ব্যবহৃত আমদানি করা সব উপকরণ, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপন ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ, কমপ্রেসর প্রস্তুতকারী শিল্পে ব্যবহৃত আমদানি করা সব উপকরণ, জুতা শিল্পের বিভিন্ন উপকরণ, পাউরুটি, বিস্কুট ও কেক এবং স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত কৃষি যন্ত্রপাতি।

চাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ-রসুন স্থানীয় পর্যায়ে সরবরাহের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর আদায় করা হতো। এটি কমিয়ে ভিত্তিমূল্যের ২ শতাংশ করা হয়েছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।

সরিষার তেল: স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সরিষার তেলের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তাই পণ্যটির দাম কমতে পারে।

কৃষি যন্ত্রপাতি: কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন পাওয়ার রিপার, পাওয়ার টিলার অপারেটেড সিডার, কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার, রোটারি টিলারের ওপর ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে কৃষি যন্ত্রপাতির দাম কমবে।

সোলার ব্যাটারি: ইডকলের পার্টনার অর্গানাইজেশন থেকে সোলার ব্যাটারি (৬০এএমপি) কেনার ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে সোলার ব্যাটারির দাম কমতে পারে।

চিপস: দেশে উৎপাদিত আলুর পটেটো ফ্লেক্স তৈরির ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে চিপসের দাম কমতে পারে।

পিপিই: দেশে উৎপাদিত পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে দাম কমতে পারে।

সার্জিক্যাল মাস্ক: স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় দেশে উৎপাদিত সার্জিক্যাল মাস্ক (ফেস মাস্কসহ) উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে দাম কমতে পারে।

করোনা টেস্ট কিট: করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ ও প্রতিরোধের লক্ষ্যে কোভিড-১৯ টেস্ট কিটের আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে টেস্ট কিটের দাম কমতে পারে।

দেশীয় সুতা: প্রতি কেজি সুতার সুনির্দিষ্ট কর ৪ টাকা থেকে কমিয়ে ৩ টাকা করা হয়েছে। এতে সুতার দাম কমতে পারে।

রড: রড তৈরির মূল উপাদান স্ক্র্যাপ সরবরাহের ওপর ৫ শতাংশ উৎসে কর ছিল। এটি কমিয়ে ভিত্তিমূল্যের দশমিক ৫০ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দাম কমতে পারে।

চিনি: চিনির আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ছিল। এটি কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। এতে বাজারে চিনির দাম কমতে পারে। একইভাবে রসুন আমদানিতেও অগ্রিম কর কমানোয় এই নিত্যপণ্যটির দাম কমতে পারে।

ব্রয়লার মুরগি: পোল্টি শিল্পের বিকাশে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। এতে ব্রয়লার মুরগির দাম কমতে পারে।

হাঁস-মুরগি: হাস-মুরগির খাদ্য উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ ছিল। এটি কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। এর প্রভাবে বাজারে হাঁস-মুরগির দাম কমতে পারে।

ডিটারজেন্ট: এ শিল্পের অন্যতম কাঁচামালের (লিনিয়ার এলকাইল বেঞ্জিন সালফোনিক এসিড) শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। এতে আগামীতে ডিটারজেন্টের দাম কমতে পারে।

জুতা: জুতা উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়েকটি কাঁচামালের আমদানির শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দেশের বাজারে জুতার দাম কমতে পারে।

এছাড়া স্বর্ণের আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে স্বর্ণের দামও কমছে। একই কারণে দাম কমছে তুলা বীজ, পাম নাটস, রেফ্রিজারেটর শিল্পের স্টিল প্লেটের। এছাড়াও লাইটিং অ্যারেস্টারেরও (বজ্রপাত থেকে প্রতিরক্ষাকারী পণ্য) দামও কমতে পারে। কারণ এই পণ্যটি আমদানিও ওপর শুল্ক অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

Print Friendly, PDF & Email