উপসর্গহীন ব্যক্তির মাধ্যমেও করোনা ছড়ায়: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন ব্যাখ্যা

দেশনিউজ ডেস্ক।

নভেল করোনাভাইরাসের উপসর্গ নেই, এমন কারো মাধ্যমে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঘটনা ‘খুবই বিরল’—গত সোমবার এমনটাই জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু সংস্থাটির বক্তব্যের সঙ্গে বিশ্বের অনেক অনেক বিজ্ঞানীই একমত হতে পারেননি। ফলে এ নিয়ে সৃষ্টি হয় তর্ক-বিতর্ক।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার এক বিশেষ ব্রিফিংয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যা দিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, উপসর্গহীন ব্যক্তির মাধ্যমেও করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে।

গত সোমবারের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহামারি-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. মারিয়া ভ্যান কারখোভ গতকাল মঙ্গলবার জানান, উপসর্গহীন সংক্রমণের অনেক ধরনের গাণিতিক মডেল রয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে ১৬ শতাংশ মানুষ, যাদের মধ্যে করোনার উপসর্গ নেই, তাদের মাধ্যমে কোভিড-১৯ ছড়াতে পারে। তবে, ড. মারিয়া এও বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে উপসর্গহীনদের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর মাত্রা বেড়ে প্রায় ৪০ শতাংশও হতে পারে। সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ এ খবর জানিয়েছে।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯-সংক্রান্ত ব্রিফিংগুলো সাধারণত সোমবার, বুধবার ও শুক্রবারে করে থাকে। কিন্তু গত সোমবারের ব্রিফিং ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার বিশেষ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে সংস্থাটি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র গতকাল মঙ্গলবার করোনাভাইরাস ছড়ানো নিয়ে আরো সুস্পষ্ট একটি বিবৃতি দিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো করোনাভাইরাসের উপসর্গ নেই, কিন্তু কোভিড-১৯ ছড়াতে পারে, এমন দুধরনের সম্ভাব্য রোগী রয়েছে— এক. এরা উপসর্গবিহীন এবং কখনোই এদের মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা যায় না; দুই. আরেক ধরনের রোগী রয়েছে, যারা শুরুতে উপসর্গবিহীন থাকে, কিন্তু পরে তাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিতে থাকে।

এর আগে গত সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জিং ডিজিজ বিভাগের প্রধান মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেছিন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য ও পরিসংখ্যান রয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে উপসর্গহীন রোগীদের  মাধ্যমে অন্য কারো শরীরে সংক্রমণ ছড়ানোর হার খুব কম। বলতে গেলে বিরল।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জেনেভার সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের সময় মারিয়া এ বিষয়ে জোর দিতে গিয়ে আবার বলেন, ‘এটা খুবই বিরল।’

তবে প্রশ্নের মুখে মারিয়া স্বীকার করেছিলেন যে, কোনো কোভিড-১৯ রোগীর শরীরে উপসর্গ না থাকলে তাঁর মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর ঘটনা যে নেই, তা নয়। কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি এও বলেন, ‘এ ব্যাপারে আরো গবেষণা, আরো পরিসংখ্যান দরকার। কারণ, আমাদের কাছে বেশ কয়েকটি দেশের তথ্য এসেছে, যারা খুব ভালো করে কনট্যাক্ট ট্রেসিং করেছে। তারা দেখেছে, উপসর্গহীন রোগীদের থেকে অন্যজনের শরীরে খুব বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে না। এটা খুবই বিরল।’

ড. মারিয়ার এমন বক্তব্যের পরই বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

Print Friendly, PDF & Email