মানবপাচারের বড় হোতা আটক হয়েছে, কাউকে ছাড় নয় : কুয়েতি উপপ্রধানমন্ত্রী

দেশনিউজ ডেস্ক |

কুয়েতের উপপ্রধানমন্ত্রী আনাস আল সালেহ বলেছেন, দেশে সবচেয়ে বড় মানব পাচার চক্রের হোতা এশিয়ার একটি দেশের নাগরিককে আটক করা হয়েছে। মানব পাচারের অভিযোগের তদন্তে সরকারি কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি—যে–ই হোক না কেন, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। কাউকে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না। উপপ্রধানমন্ত্রী কারও নাম উল্লেখ না করে এক টুইট বার্তায় এ কথা বলেন।

গতকাল শনিবার রাতে কুয়েতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কুনা এ খবর জানিয়েছে। উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বের পাশাপাশি কুয়েতের মন্ত্রিপরিষদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন আনাস আল সালেহ।

কুয়েতের পার্লামেন্টসহ দেশটির রাজনৈতিক পরিমণ্ডল ও গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আনাস আল সালেহ মানব পাচারের বিরুদ্ধে তাঁদের সরকারের জোরালো অবস্থান নেওয়ার কথা বলেছেন। বিশেষ করে জুনের ৬ তারিখ বাংলাদেশের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলকে আটকের পর থেকে বিষয়টি এখন তেলসমৃদ্ধ দেশটির একটি আলোচিত বিষয়।

কুয়েতের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস আল সালেহ শনিবার তাঁর টুইটে বলেন, ‘মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি সরকারি কর্মকর্তা হোন কিংবা বিশিষ্ট কোনো নাগরিক, তাঁকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এ বিষয়ে গত কয়েক সপ্তাহের সাফল্যের জন্য আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অভিবাদন জানাই। তাঁরা সবচেয়ে বড় মানব পাচারকারীর হোতাকে আটক করেছেন, যিনি এশিয়ার একটি দেশের নাগরিক। ওই তদন্তে গোয়েন্দারা সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছেন।’

কুয়েতের সাংসদ আবদুল করিম আল কানডারি মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক সাংসদ কাজী শহিদ ইসলামের সঙ্গে জড়িত কুয়েতের মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি শনিবার তাঁর টুইটে লিখেছেন, মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে বাংলাদেশের একজন সাংসদের জড়িত থাকার বিষয়টি ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই তাঁর সঙ্গে যুক্ত সরকারে প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের নামও প্রকাশ করা হয়েছে। জনগণ মনে করে, ওই দুর্নীতির সঙ্গে প্রভাব খাটানো ও ঘুষ লেনদেনের বিষয়গুলো জড়িত।

অবশ্য কুয়েতের কূটনীতিক সূত্র ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি সেখানকার গণমাধ্যমগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে মানব পাচারের বিরুদ্ধে দেশটি জোরালো অবস্থানের কথা বলছে। বিশেষ করে এপ্রিলের শুরু থেকেই কুয়েতের পার্লামেন্টের স্পিকার মারজুক আল ঘানিম এ নিয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন। এপ্রিলের ৪ তারিখ পার্লামেন্টে এক আলোচনায় তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তারের মধ্য দিয়ে ভিসা–বাণিজ্যের নামে মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত লোকজনের মুখোশ খুলে দিয়েছে। বিদেশ থেকে লোকজনকে তাঁরা কুয়েতে এনে দুর্বিষহ জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। মানব পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে।

পরে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দেওয়ার সময় কুয়েতের পার্লামেন্টের স্পিকার মারজুক আল ঘানিম ভিসা–বাণিজ্যে মধ্যস্থতাকারী সাংসদদের নামের তালিকা দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস আল সালেহকে নির্দেশ দেন।

কুয়েতে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন ৪৫৪ জন। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৯২০ জন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ অভিবাসী কর্মী।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার আটকের পর থেকেই কুয়েতে রিমান্ডে রয়েছেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম। আটকের পর গত রোববার তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে আদালত তাঁকে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে সিআইডির রিমান্ডে পাঠায়। তাঁর রিমান্ডের মেয়াদ আজ রোববার শেষ হচ্ছে। এরই মধ্যে সিআইডি সাংসদ কাজী শহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে ১১ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। ১১ জনই সাংসদের বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনার পাশাপাশি প্রতিবছর ভিসা নবায়নের জন্য বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনেছেন বলে জানা গেছে।

কুয়েতের গোয়েন্দারা আটক সাংসদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লোকজনের অভিযোগ আর ব্যাংকসহ কুয়েতের স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার মুর্তজা মামুনকে আটক করে। সাংসদ কাজী শহিদের প্রতিষ্ঠান মারাফী কুয়েতিয়া গ্রুপের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মুর্তজা মামুন কানাডার নাগরিক।

Print Friendly, PDF & Email