এমপি পাপুল বিপদ টের পেয়ে কুয়েত থেকে লাখ লাখ দিনার পাচার করেন

দেশনিউজ ডেস্ক |

কুয়েতে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন সম্প্রতি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে লাখ লাখ দিনার (১ দিনার ২৭৭ টাকার সমতুল্য) পাঠিয়েছেন কুয়েতের ব্যাংক হিসাব থেকে। কুয়েত থেকে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে ওই লেনদেন বেশ সন্দেহজনক বলে তাঁরা ধারণা করছেন। কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, ভিসা নবায়ন, মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারে নাম এসেছে জানার পর কুয়েতে থেকে নিজের ব্যবসা গোটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আটক এমপি। এছাড়া শহিদ ইসলাম পাপুলকে দেশটির অন্তত সাতজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মদদ জুগিয়েছেন বলেও নিশ্চিত হয়েছে তদন্তকারিরা । ফলে কুয়েতের ওই সব নাগরিকের নাম প্রকাশের দাবি জোরালো হচ্ছে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে। কুয়েতের সংবাদপত্র আরব টাইমসের খবরে এসব তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

কুয়েতের ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমসের গতকাল রোববারের খবরে আরও বলা হয়েছে, মানব পাচার, ভিসা নবায়ন আর অবৈধ মুদ্রা পাচারের মামলায় আটক বাংলাদেশের নাগরিকের নতুন নতুন রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে। তদন্ত কর্মকর্তারা ওই মামলায় কুয়েতের অন্তত সাতজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন কুয়েত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিভাগের প্রধান আর কেউ কেউ অবসরে গেছেন। কুয়েতের কর্মকর্তারা সেখানকার সরকারি দরপত্র কমিটি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাঁরা বাংলাদেশের নাগরিকের সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ঘুষ ও উপহার নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তারা।

কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন তদন্ত পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মূর্তজা মামুনকে রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে ১১ জন বাংলাদেশি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র ওই সাংসদের বিরুদ্ধে ভিসা বাণিজ্যের পাশাপাশি কুয়েতে ভিসা নবায়নের জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা দেওয়ার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য শোনার পর আদালত ওই নির্দেশ দিয়েছেন।

বাংলাদেশের আটক সংসদ সদস্য কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বিপুল অঙ্কের ঘুষ দিয়েছেন। কুয়েতের ওই সরকারি কর্মকর্তা বাংলাদেশের সংসদ সদস্যকে কাজ পাইয়ে দিতেন এবং সাংসদের হয়ে মধ্যস্থতা করতেন।

কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তারা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কানাডার এক নাগরিক এবং মিসরের অন্য এক নাগরিককে চলমান তদন্তের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে আটক করেছেন। উল্লিখিত ওই দুজন আটক সাংসদের হয়ে কুয়েতের সরকারি দপ্তরগুলোতে লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

কুয়েতের সাংসদ ইউসুফ আল ফাদহালা, আবদেল ওয়াহাব আল বাবতেইন ও আবদুল করিম আল কান্ডারি তাঁদের টুইটে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারে জড়িত কুয়েতের সাংসদ ও কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁদের বিরুদ্ধে কুয়েত দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

অবশ্য কুয়েতের উপপ্রধানমন্ত্রী আনাস আল সালেহ গত শনিবার বলেছেন, দেশে সবচেয়ে বড় মানব পাচার চক্রের হোতা এশিয়ার একটি দেশের নাগরিককে আটক করা হয়েছে। মানব পাচারের অভিযোগের তদন্তে সরকারি কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি যে–ই হোক না কেন, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। কাউকে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না। উপপ্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি কুয়েতের মন্ত্রিপরিষদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন আনাস আল সালেহ।
সাংসদকে আটক করার ব্যাপারে কুয়েত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার এমন কথা বলা হয়েছে। ঠিক এমন সময়ে কুয়েতের উপপ্রধানমন্ত্রী নাম উল্লেখ না করে মানব পাচারের সঙ্গে এশিয়ার দেশের নাগরিক জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে বললেন।

Print Friendly, PDF & Email