তুরস্কে বিচার শুরু

সাংবাদিক খাশোগিকে হত্যার পর টুকরো করে তন্দুর চুলায় পুড়িয়ে ফেলা হয়!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক |

সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়েছে তুরস্কের একটি আদালতে। বিচার শুরুর প্রথম দিনেই আদালতকে তুরস্কে সৌদি দূতাবাসের এক কর্মচারী জানান, খাশোগি যে ভবনে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন, সেখানে তার প্রবেশের এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে একটি তন্দুর চুলা জ্বালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

রয়টার্স জানায়, শুক্রবার, দূতাবাসের টেকনিশিয়ান জেকি দেমি আদালতেকে এ তথ্য জানান।

২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে যাওয়ার পরই নিখোঁজ হন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। সৌদি রাজবংশের ক্ষমতাধরদের কড়া সমালোচনার জন্য আলোচিত ছিলেন সুপরিচিত এই সাংবাদিক।

শুক্রবার, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জাকি দামির জানান, ভবনে খাশোগির প্রবেশের কিছু সময় পরেই তাকে ডেকে নেওয়া হয়।

‘সেখানে পাঁচ থেকে ছয়জন লোক ছিলেন… তারা আমাকে তন্দুর চুলা জ্বালাতে বলেন। বাতাসে আতঙ্ক ভেসে বেরাচ্ছিল,’ বলেন তিনি।

সৌদি দূতাবাসে জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দেয়। কিছু পশ্চিমা সরকার, বিশেষত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র বিশ্বাস, সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে, এই অভিযোগ নাকচ করেছেন সৌদি কর্মকর্তারা ।

তুর্কি কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের ধারণা, খাশোগিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তার মরদেহ টুকরো করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

জেকি দেমিরের জবানবন্দি অনুযায়ী, ওইদিন তিনি দূতাবাসের বাগানে মাংস রান্নার জন্য অনেকগুলো শিক দেখতে পান। পাশাপাশি, ছোট বারবিকিউও দেখেছেন। ওভেনের চারপাশের মার্বেলের রং বদলে গিয়েছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, সেগুলো কোনো রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে।

দূতাবাসের গাড়িচালক ও অন্যান্য সাক্ষীরা বলেন, ঘটনার দিন স্থানীয় এক রেস্তোরাঁ থেকে তাদেরকে কাবাবের জন্য কাঁচা মাংস কিনে আনতে বলা হয়েছিল।

দেমির জানান, কালো কাচের জানালার একটি গাড়ি ঢোকার পর তিনি গ্যারেজের দরজা খোলার জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু তখন তাকে দ্রুত বাগান ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই ঘটনায় দুই শীর্ষ সৌদি কর্মকর্তা- সৌদি আরবের গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক উপপ্রধান আহমেদ আল-আসিরি ও রাজকীয় আদালতের সাবেক উপদেষ্টা সৌদ আল-কাহতানির বিরুদ্ধে ‘ভয়ানক উদ্দেশ্য নিয়ে হত্যায় প্ররোচণা’ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

তাকে হত্যা করতে আরও ১৮ জন আসামি তুরস্কে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

রয়টার্স জানায়, খাশোগি হত্যার বিচারের প্রথম দিনে ২০ জন সৌদি কর্মকর্তা অনুপস্থিত ছিলেন। তুরস্কের আদালতে আসামিদের অনুপস্থিতিতেই চলছে বিচারকাজ। সৌদি আরব আসামিদের হস্তান্তর করার সম্ভাবনাও কম।

গত বছরের ডিসেম্বরে রিয়াদের একটি আদালতে খাশোগি হত্যার ঘটনার বিচারকার্যে তুরস্কের পক্ষ থেকে সহযোগিতা না করার অভিযোগ তোলে সৌদি আরব।

ডিসেম্বরে সৌদি আদালত ওই হত্যার দায়ে পাঁচ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও তিন জনকে কারাভোগের সাজে দেয়।

তবে, খাশোগির পরিবার হত্যাকারীদেরকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা জানায়। ফলে, সৌদি আইন অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।

ডিএন/জেএন/বিএইচ/০৬ঃ৪৫এএম/০৫০৭২০২০-২

Print Friendly, PDF & Email