যত বেশি সম্ভব হত্যার পরিকল্পনা ছিল মসজিদে হামলাকারীর

দেশনিউজ ডেস্ক।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলার সময় আবেগের কোনও ছিটেফোঁটা ছিল না অস্ট্রেলিয়ান শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ব্রেন্টন ট্যারান্টের। নামাজ পড়া অবস্থায় ৫১ জন মুসলমানকে হত্যা করেছিলেন তিনি।

আজ সোমবার (২৪ আগস্ট) অভিযুক্তের সাজার শুনানি শুরু হতে জানা গেলো তার আরও লোমহর্ষক পরিকল্পনার কথা।

ক্রাইস্টচার্চের আদালতে শুরু হয়েছে চারদিনের শুনানি। ট্যারান্টের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিতে সেখানে হাজিরা দিয়েছেন ওই হামলায় বেঁচে যাওয়া ও নিহতদের স্বজনরা। আদালতে বিচারপতির সামনে এই অস্ট্রেলীয় ‘দানবের’ আরও ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার বিস্তারিত জানান ক্রাউন প্রসিকিউটর বার্নাবি হাউয়েস।

ভারী অস্ত্রসজ্জিত ট্যারান্টের এলোপাতাড়ি গুলি থেকে রেহাই পায়নি পুরুষ থেকে শুরু করে মহিলা-শিশু কেউই। ওই হত্যাযজ্ঞ আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করেছিলেন, কেউ বাঁচার আকুতি জানালেও তাকে গুলি করেন এবং এক মসজিদ থেকে আরেক মসজিদে যাওয়ার সময় একজন আহত ব্যক্তির উপর দিয়ে গাড়ি চালান। এতটাই নির্মম ছিলেন ট্যারান্ট। 

তিন বছরের এক শিশুকে তার বাবার পা শক্ত করে ধরে থাকতে দেখে তাকেও গুলি করেন ট্যারান্ট, আদালতে এমনটাই বলেছেন হাউয়েস। শুধু তাই নয়, আরও বেশি মানুষকে গুলি করতে চেয়েছিলেন ওই শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারী। বছর খানেক ধরে এই নির্মম হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। তার হামলার লক্ষ্যস্থল ছিল দুটি নয়, তিনটি মসজিদ- আল নূর, লিনউড ও অ্যাশবার্টন। কিন্তু প্রথম দুটি মসজিদে হামলা চালানোর পর অ্যাশবার্টন মসজিদে যাওয়ার পথে আটক করা হয় তাকে।

হাউয়েস বলেছেন, ‘তিনি স্বীকার (পুলিশের কাছে) করেছেন যে যত বেশি সম্ভব মানুষ মারার উদ্দেশ্যে দুটি মসজিদে গিয়েছিলেন। যত মানুষকে গুলি করেছিলেন তার চেয়েও বেশি হত্যা করতে চেয়েছিলেন বলে তিনি বিবৃতি দিয়েছেন। এমনকি অ্যাশবার্টনের আরেকটি মসজিদেও হামলা চালানোর কথা ছিল তার, কিন্তু আটক হন।’

২৯ বছর বয়সী এই হামলাকারীর বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরা হয় ক্রাইস্টচার্চের আদালতে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডে পৌঁছান ট্যারান্ট এবং বসবাস করতে থাকেন ক্রাইস্টচার্চের ৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর ডুনেডিনে। ওখানেই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করতে থাকেন এবং ৭ হাজার রাউন্ডের বেশি গুলি কেনেন। এছাড়া সামরিক ধাঁচের ব্যালিস্টিক অস্ত্র ও ভেস্টও কিনেছিলেন।

হামলার দুই মাস আগে ট্যারান্ট ক্রাইস্টচার্চে যান এবং আল নূর মসজিদের উপর দিয়ে একটি ড্রোন উড়িয়ে এর চারপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। মসজিদটির গঠন, প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ এবং দুটি মসজিদের মধ্যে যাওয়া আসার কৌশলও তৈরি করেন ড্রোনে তোলা ছবির মাধ্যমে।

ডুনেডিনের বাসা ছেড়ে দিয়ে ১৫ মার্চ শুক্রবার গাড়িতে করে ক্রাইস্টচার্চে যান ভারী অস্ত্রে সুসজ্জিত ট্যারান্ট। বিভিন্ন সময়ের ঐতিহাসিক যুদ্ধ, ক্রুসেডের সংখ্যা, সাম্প্রতিক সময়ের সন্ত্রাসী হামলা ও প্রতীকের উল্লেখ ছিল তার বন্দুকে। ভেস্টের সামনের পকেটে ছিল গুলির সাতটি ম্যাগাজিন এবং বেয়োনেটের মতো দেখতে ছুরি। পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিয়ে ওই হত্যাযজ্ঞ চালান ট্যারান্ট, যা গোটা বিশ্ব দেখেছে তার হেলমেটে লাগানো ক্যামেরার মাধ্যমে। এছাড়া তার গাড়িতে ছিল পেট্রোলের কন্টেইনার, যা দিয়ে মসজিদ পুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন তিনি।

বিচারক ক্যামেরন ম্যান্ডারের বেঞ্চে ট্যারান্টের বিচারকাজ চলছে। নিউজিল্যান্ডে হত্যার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া ট্যারান্টের ক্ষেত্রে দেশটিতে যুগপৎ রায় আসতে পারে। দেশে প্রথমবারের মতো প্যারোল ছাড়াই আজীবনের জন্য কাউকে আজীবন কারাদণ্ড দিতে পারেন আদালত।

ডিএন/সিএন/জেএএ/১২:৫১এএম/২৪৮২০২০১৪

Print Friendly, PDF & Email