সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ ৩ দিনের রিমান্ডে

আদালত প্রতিবেদক |

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

শনিবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

শুক্রবার রাতে হাতিরঝিল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় সাংবাদিক আবুল আসাদেকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

এর আগে আসামি আবুল আসাদকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ গোলাম আজম।

আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে গোলাম আজম বলেন, মামলার বাদী আফজাল হোসেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হয় ২০১৩ সালে। তখন কাদের মোল্লাকে ‘কসাই কাদের’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালত কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। কিন্তু রাজাকার অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির দোসররা দেশের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ ডিসেম্বর দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার ষষ্ঠ শাহাদতবার্ষিকী আজ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ওই প্রতিবেদনের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দেওয়া হয়। আসামি আবুল আসাদসহ অন্য আসামিরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যক্তিদের খেপিয়ে তোলার জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত আনার জন্যই এমন মিথ্যা ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করে।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য এই ধরনের উসকানিমূলক সংবাদ পরিবেশন করেন এই আসামিসহ অন্যরা। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আসামিরা সর্বদা সচেষ্ট রয়েছেন। এই আসামিসহ অন্য আসামিরা রাষ্ট্রদ্রোহী সংঘবদ্ধচক্রের সহায়তায় এই ধরনের উসকানিমূলক তথ্য প্রচারসহ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সংবিধানকে অস্বীকার করেন। এ ঘটনার ইন্ধনদাতা এবং পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করার জন্য এই আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম কামাল উদ্দিন ও আব্দুর রাজ্জাক আদালতের কাছে দাবি করেন, মামলার এজাহারে আসামির বয়স ৭৮ বছর লেখা হলেও বয়স আরও বেশি। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। দৈনিক সংগ্রামের অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে।

আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আসামি আসাদকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। আবুল আসাদ ছাড়াও দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক রুহুল আমিন গাজী, বার্তা সম্পাদক সাদাত হোসেনসহ অজ্ঞাত আরও সাত থেকে আটজন প্রতিবেদককে আসামি করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১, ৩১ ও ৩৫ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১২৪-ক ধারায় এই মামলা করা হয়।

বৃহস্পতিবার ‘দৈনিক সংগ্রামে’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এর প্রতিবাদে শুক্রবারই পত্রিকাটির কার্যালয় ভাঙচুর করে মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের একদল নেতাকর্মী।

মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সেক্রেটারি আল মামুনের নেতৃত্বে নেতা–কর্মীরা বিকেল ৫টার দিকে কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ভাঙচুর চালায়। তারা কার্যালয়ে ঢুকে অনেকগুলো টেলিভিশন, কম্পিউটার ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় সম্পাদক আবুল আসাদকেও লাঞ্ছিত করে হামলাকারীরা।

পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদকে হাতিরঝিল থানায় নিয়ে যায়।

প্রসঙ্গত একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসি কার্যকর করা হয় কাদের মোল্লার। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email