সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা সপরিবারে খুন, স্বীকারোক্তি ইমামরূপী তানভীরের

নিজস্ব প্রতিনিধি |

নিঃসন্তান দম্পতি ছিলেন কৃষি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার ও ছুম্মা খাতুন। দেড় বছর আগে বাসার পাশের মসজিদের ইমাম তানভীর হোসেনকে (২৫) ছেলের মতো আপন করে নেন তারা। তাদের বাবা-মা বলেই ডাকতো তানভীর। আর এই বৃদ্ধ দম্পতিকে হত্যার অভিযোগে তানভীরকই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বেরিয়ে এসেছে হত্যার কারণ ও বর্বরতার চিত্র। টাকা লোভে আব্দুল জব্বার, ছুম্মা খাতুন ও তাদের পালিত শিশু সন্তান সানজিদাকে হত্যার পর নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার বর্ণনা উঠে এসেছে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে।

রবিবার (৭ মে) পাবনার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তানভীর হোসেন। এর আগে তাকে নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরের হরিপুর গ্রামের নিজের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পাবনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আরাফাত লেনিন জানান, গত ৫ জুন দুপুরে খবর পেয়ে পাবনার দিলালপুর ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন বাড়ি থেকে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আ. জব্বার, তার স্ত্রী ছুম্মা বেগম ও মেয়ে সানজিদা জয়ার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

খন্দকার আরাফাত লেনিন বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করি। এবং লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীকে চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।’

নিহতের স্বজনদের বরাত দিয়ে পাবনা পুলিশ জানিয়েছে, বছর দেড়েক আগে বাসার পাশে ফায়ার সার্ভিস মসজিদের ইমাম তানভীর হোসেনকে আপন করে নেন আব্দুল জব্বার ও তার স্ত্রী। নিঃসন্তান এই দম্পতির পালক নেওয়া এক মেয়েও রয়েছে, তার বয়স ১২ বছরের। যাকে একদিনে বয়সে নিয়ে এসেছিলেন তারা। ছেলের মতো তানভীরকেও আদর করতেন তারা। ব্যাংক, পোস্ট অফিসে টাকা লেনদেনেও তানভীরকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন আব্দুল জব্বার।

পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, টাকা পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়ার জন্য জব্বার ও তার পরিবারের আরও দুই সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করে তানভীর। গত ২৯ মে ছুটি নিয়ে হরিপুর গ্রামের বাড়ি চলে যায় সে। কিন্তু ছুটি শেষ হওয়ার আগেই ৩১ মে পাবনা ফিরে আসে। ওই রাতে ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল জব্বারের বাড়িতে অবস্থান নেয় তানভীর এবং ঘুমায় আব্দুল জব্বারের সঙ্গে। রাত ৪টার দিকে ঘুম থেকে উঠে টয়লেটে যাওয়ার সময় জব্বারের পেছন থেকে গলায় গামছা পেছিয়ে ধরে তানভীর। জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান জব্বার। এরপর ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জব্বারের স্ত্রী ছুম্মা খাতুন ও মেয়ে সানজিদাকে (১২) কুপিয়ে ও কাঠের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে তানভীর। স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যার পর জব্বারের কাছে ফিরে এসে তাকে জীবন্ত পেয়ে বাটাম দিয়ে পিটিয়ে মৃত্যু ‍নিশ্চিত করে। তারপর বাথরুমে গিয়ে রক্তমাখা কাপড়-চোপড় ধুয়ে গোসল করে বাসায় তালা দিয়ে নগদ ২ লাখ টাকা, এক লাখ ভারতীয় রুপি ও স্বর্ণের গহনা নিয়ে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পর বাড়িটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ থাকায় ভেতরে কী হয়েছে তা কেউ টের পায়নি বলে জানিয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আরাফাত লেনিন। তিনি বলেন, ‘বাড়ির ভেতরে থেকে পচা গন্ধ আসায় স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। দরজা ভেঙে ৫ জুন তাদের তিন জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।’

কারা কারা এই অবসরপ্রাপ্ত ব্যংক কর্মকর্তার বাড়িতে আসতো এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তানভীরের নামটি সন্দেহের তালিকায় আসে বলে জানান খন্দকার আরাফাত লেলিন।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে তানভীরের অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান পরিচালনা করেছি। নওগাঁ গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করেছি। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সে।’

এর আগেও নওগাঁতে টাকা চুরির অপরাধে তানভীরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email