বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক মনসুরের লাশ উদ্ধার

নিউজ ডেস্ক |

বাংলা ট্রিবিউনের সাব এডিটর (সহসম্পাদক) মনসুর আলীর (৩৩) রহস্যময় মৃত্যু হয়েছে। তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর ভাড়া বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে রাত দুইটার দিকে তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এদিকে মনসুর আলীর মৃত্যুর খবর তার কর্মস্থল বাংলা ট্রিবিউনে পৌঁছালে বার্তাকক্ষে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তার সহকর্মীদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনেককে তার সঙ্গে কাটানো সুন্দর সময়ের স্মৃতিচারণ করে আহাজারি করতেও দেখা যায়।

মনসুর আলীর বাড়ি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের কোটালপাড়ায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ঢাকায় এসে সরাসরি সাংবাদিকতায় যুক্ত হোন। তিনি ২০১৩ সালে অর্থসূচক ডটকম-এ কাজ করার মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর ই-বার্তা ও টেকশহরে কিছুদিন কাজ করে দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দেন। ২০১৭ সালে তিনি বাংলা ট্রিবিউনে সাব-এডিটর (সহসম্পাদক) পদে যোগ দেন।

সাংবাদিক মনসুরের মৃত্যুর বিষয়ে খিলগাঁও জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জুলফিকার আলী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সন্ধ্যায় সাড়া না পেয়ে বাসার দরজা ভেঙে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ইতোমধ্যে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মনসুরের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে সিনিয়র সহকারী কমিশনার জুলফিকার আলী বলেন, ‘ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।’

বাংলা ট্রিবিউনের অপরাধ বিভাগের একাধিক প্রতিবেদককে উদ্বৃত করে বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে, রাত ১১টার দিকে সিআইডির ক্রাইম সিন ঘটনাস্থলে যায়। এরপর সিআইডির সহায়তায় আলামত সংগ্রহ করে খিলগাঁও থানা পুলিশ। সিআইডির কমর্কতারা ধারণা করেন, মনসুর আলীর মৃত্যু অনেক আগেই হয়েছে। এর আগে, পুলিশের খিলগাঁও জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জুলফিকার আলী ও খিলগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন।

মনসুর আলীর সঙ্গে একই বাসায় থাকতেন সারাবাংলা ডটনেটের সাংবাদিক ও কবি মনোজিৎ মিত্র। তিনি বলেন, শুক্রবার (১৬) রাতে আমি এক বন্ধুর বাসায় ছিলাম। সেখান থেকে শনিবার সকালে একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় বাসায় এসে দেখি দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। দরজা বন্ধ পেয়ে অনেকক্ষণ কলিংবেল বাজাই। মনসুরকে ফোন করি, কিন্তু ভেতর থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছিলো না। এ অবস্থায় বাড়িওয়ালার সঙ্গে যোগাযোগ করলে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর খিলগাঁও থানার পুলিশ এসে দরজা ভেঙে বাসার ভেতরে প্রবেশ করেন।

মনোজিৎ আরও জানান, পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করে মনসুরের কক্ষের ভেজানো দরজা ধাক্কা দিয়ে খোলে। এসময় সে নিজ বিছানার পড়ে ছিল। তার ফ্লোরিং বেডের পাশে বমি, মলমূত্র ছড়ানো অবস্থায় ছিল। পরে মনসুরের নাকের কাছে হাত নিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস অনুভবের চেষ্টা করেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর তারা মনসুরের ডানহাত উঁচু করে দেখে, জানান মনোজিৎ।

এদিকে বাংলা ট্রিবিউনের পরিবহন বিভাগ থেকে জানানো হয়, শুক্রবার ডিউটি শেষে দিবাগত রাত ১২ টা ৪০ মিনিটের দিকে অফিসের গাড়ি গিয়ে মনসুর আলীকে তার বনশ্রীর বাসার প্রধান ফটকের সামনে নামিয়ে দিয়ে আসে।

বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদকরা আরও জানান, মনসুর আলীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীরাও ছুটে আসেন।

এদিকে, বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে মনসুর আলীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। রবিবার (১৭ নভেম্বর) ভোররাতে পরিবারের কয়েকজন সদস্য ঢাকায় এসে পৌঁছান।

Print Friendly, PDF & Email