সম্পাদক আবুল আসাদ আটক

দৈনিক সংগ্রাম অফিসে হামলা তান্ডব, প্রকাশনা বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশের প্রাচীন সংবাদপত্র দৈনিক সংগ্রামের মগবাজারের প্রধান কার্যালয়ে নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। শুক্রবার সন্ধ্যায় সংগ্রাম অফিসে ঢুকে কম্পিউটার, আসবাবপত্র, দরজা-জানালাসহ সবকিছু তছনছ করে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করে পত্রিকা অফিসটিকে।

সংগ্রামের সাংবাদিকেরা জানান, শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৫টা থেকে জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে ৫০/৬০ জন যুবক মগবাজার ওয়ারলেস রেল গেট সংলগ্ন দৈনিক সংগ্রাম অফিস ঘেরাও করে হুমকিমূলক শ্লোগান দিতে থাকে। এর আগে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির নামে সংগঠনটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল-মামুনের নেতৃত্বে এ ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ সময় অফিসটি অবরুদ্ধ করেরাখার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পত্রিকার সাংবাদিকরা যখন আগামী কালের সংবাদপত্র প্রকাশের জন্য কর্মব্যস্ত ঠিক তখনই অতর্কিতে গেট ভেঙ্গে অফিসে ঢুকে একে একে সব কয়টি কক্ষে ভাংচুর চালায়।

সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ৫৫টি কম্পিউটার, ৩টি টেলিভিশন, চেয়ার টেবিলসহ সকল আসবাবপত্র, দরজা-জানালা সবকিছু ভেঙ্গে তছনছ করে। আধাঘন্টা ধরে এ তান্ডব চলার সময় পুলিশ অফিসের নিচে ছিল। হামলাকারীরা পত্রিকার সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক আবুল আসাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। পরে পুলিশ অফিসে ঢুকে সম্পাদক আবুল আসাদকে আটক করে হাতিরঝিল থানায় নিয়ে যায়। এ হামলার ফলে আগামীকাল পত্রিকাটি প্রকাশিত হবে না বলে জানিয়েছেন সহ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম।

বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতৃবৃন্দের উদ্বেগ ঃ

এদিকে দেশের প্রাচীন সংবাদপত্রগুলোর অন্যতম দৈনিক সংগ্রামের মগবাজারস্থ কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা, ভাংচুর, তছনছের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। একই সঙ্গে পত্রিকাটির বয়োজ্যেষ্ঠ সম্পাদক, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী আবুল আসাদকে পুলিশ ধরে থানায় আটকে রাখায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।


শুুুক্রবার তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বিএফইউজে’র সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও মহাসচিব এম আবদুল্লাহ এবং ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, একটি সংবাদপত্র অফিসে ঢুকে কম্পিউটার, আসবাদপত্র, দরজা-জানালাসহ সবকিছু তছনছ করা ফ্যাসিবাদী আক্রমন ছাড়া কিছুই নয়। কোন সংবাদপত্র প্রকাশিত সংবাদে সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিবাদ জানানো এমনকি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও অধিকার রয়েছে। কিন্তু তা না করে পেশীশক্তির মহড়া কোন সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়।
নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন,যারা হামলা করেছে তারা ঘোষণা দিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে করেছে। এতে ধারণা করা অমুলক হবে না যে সরকারের ছত্রছায়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েই এই বর্বরোচিত হামলা করা হয়েছে। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা গোটা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাছাড়া কোন মামলা ও ওয়ারেন্ট ছাড়াই একজন প্রবীণ ও বয়োজ্যেষ্ঠ সম্পাদককে পুলিশ তাঁর অফিস থেকে যেভাবে তুলে নিয়ে গেছে তাতে গোটা সাংবাদিক সমাজ ও বিবেকবান মানুষকে স্তম্ভিত করেছে।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং সম্পাদক আবুল আসাদকে সসম্মানে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।

Print Friendly, PDF & Email