‘আলোকিত বাংলাদেশ’ ও মালিকদের অন্ধকার যাত্রা

এম আবদুল্লাহ |

প্রাণঘাতী মহামারী করোনার হানায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশে অন্য সব সেক্টরের মত গণমাধ্যমও ধুঁকছে। সংবাদকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্যে দুর্যোগেও গণমাধ্যম থেমে থাকার সুযোগ নেই। ছাপা পত্রিকা বিলি বন্টনে সমস্যার কারণে এবং সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বলে এর আগে জনপ্রিয় দৈনিক মানবজমিনে মূদ্রণ সংস্করণ সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। সর্বশেষ দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ মূদ্রণ সংস্করণ সাময়িক বন্ধের ঘোষণা দিয়ে কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করতে বলেছে। নোটিশে প্রধান কারণ হিসেবে কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সাধারণভাবে সাময়িক এ বন্ধকে কর্মীরা খুব খারাপভাবে নেওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু আলোকিত বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের মতলব ভালো নয়। ট্র্যাক রেকর্ডও খই খারাপ। তারা করোনা পরিস্থিতিকে পুঁজি করে মূলত পত্রিকাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ এবং কর্মীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করার ফন্দি আঁটছে। এমনকি সেখান থেকে বেশ কিছু সংখ্যক সাংবাদিক ও কর্মী ছাটাইয়ের পাঁয়তারা করছে।
আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকাটি আহসানিয়া মিশনের মালিকানাধীন। ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার নামে দেশ বিদেশ থেকে শত কোটি টাকা অনুদান সংগ্রহ করে তা নয়-ছয় করেছেন এবং পত্রিকার মালিক হয়েছেন মিশন কর্তারা। সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রভাব প্রতিপত্তিই ছিল তাদের টার্গেট। পত্রিকা মালিক সেজে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ও প্রটোকল-প্রোটেকশন এনজয় করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম থেকে স্বপ্ন ও প্রলোভন দেখিয়ে কর্মী ভাগিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু মালিকদের আচার-আচরণে কখনোই মনে হয়নি যে তারা একটি সংবাদপত্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে চান।
পত্রিকাটি একেক সময় একেকজন তারকা সাংবাদিককে বড় চেয়ার আর লোভনীয় অফারে নিয়োগ দিয়ে তদবিরবাজি আর ধান্ধাবাজির দিকেই মনোযোগী থাকতে দেখা গেছে। ন্যায্য পাওনা না দিয়ে কথায় কথায় সাংবাদিক ছাটাই করতে দেখা গেছে। অস্থিরতা পত্রিকাটির নিত্যসঙ্গী। বহুবার সাংবাদিক ইউনিয়নকে আন্দোলন ও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কিন্তু যাকাত আর মানুষের অনুদানের অর্থে বিলাসী জীবন যাপনকারী মিশন কর্তারা দিনে দিনে দুর্বিনীত হয়ে উঠেছেন। কোন কোন সিনিয়র সাংবাদিক ও ইউনিয়ন নেতার সঙ্গে তাদের দৃষ্টিকটু সখ্য সাংবাদিকদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।
সর্বশেষ সাংবাদিকরা বকেয়া বেতনের জন্য আন্দোলন করছিলেন। কিছুদিন আগে কর্মীদের সঙ্গে বকেয়া পরিশোধের অঙ্গীকার করে লিখিত চুক্তি করে তার বরখেলাপ করেছেন। দুদিন আগে এক মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের ওয়াদা করে তা রাখেননি। এরই মধ্যে হঠাৎ প্রকাশনা বন্ধ ঘোষণার নোটিশ দেওয়া হয়েছে কর্মীদের সঙ্গে কোন আলোচনা ও আপসরফা ছাড়াই। সাংবাদিকরা আশঙ্কা করছেন, করোনা পরিস্থিতির সুযোগে মূলত পত্রিকাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ও সংবাদকর্মীদের পাওনা না দেওয়ার দুরভিসন্ধি রয়েছে মালিকদের। প্রতিবাদী অন্তত ১০ জন সাংবাদিকের চাকরি খাওয়ার ফাইল নাড়াচাড়ার খবর পেয়েছেন তারা। অতএব এ বন্ধ করোনাজনিত নয়, বরং ষড়যন্ত্রমূলক।
যে কেউ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান চালু বা বন্ধের এখতিয়ার রাখেন। কিন্তু তা করতে হবে আইন কানুন ও বিধি বিধান মেনে। বকেয়া পাওনা এবং শ্রম আইনে প্রাপ্য সুবিধা দিয়ে বন্ধ করা হলে তাতে কারও আপত্তি থাকতো বলে মনে হয় না। যদিও দুর্যোগের সময়ে যারা মানুষকে কর্মহীন করে অনিশ্চিত ও দুর্বিষহ জীবনে ঠেলে দেয় তারা মানুষের মানদণ্ডে পড়েন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে।
আলোকিত বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান প্রকাশনা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। সাংবাদিক কর্মচারীদের পাওনা কালবিলম্ব না করে এখনই পরিশোধ করুন। তা না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতি আপনার/আপনাদের অন্ধকার জগতকে আলোয় নিয়ে আসলে তা সম্ভবত সুখকর হবে না।
আলোকিত বাংলাদেশের বন্ধুদের পাশে আছি। রাজপথ ও আইনি লড়াইয়ে সর্বাত্মকভাবে পাশে পাবেন। আর নিজেরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকুন।

♦ বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহর (মুহাম্মদ আবদুল্লাহ) এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া

Print Friendly, PDF & Email