ছয় মাসে নিপীড়নের শিকার ১৫৯ সাংবাদিক, করোনাকালে দিনে একজন

এ আর মারুফ ?

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে ১৫৯ জন সাংবাদিক হামলা, মামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন, হুমকিসহ নানা ধরনের নিপীড়ন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। হত্যার অভিযোগ উঠেছে একজন সিনিয়র সাংবাদিকের রহস্যজনক মৃত্যুতে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে সাংবাদিক নিপীড়ন না কমে বরং বেড়েছে। করোনা সংক্রমনের চার মাসেই নিপীড়নের শিকার সাংবাদিকের সংখ্যা ১২১ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন একজন করে সাংবাদিক নির্যাতন বা হয়রানির মুখে পড়েছেন মহামারিকালে। সর্বাধিক সংখ্যক সংবাদকর্মী নিগ্রহের শিকার হয়েছেন মে মাসে ৪০ জন। তার আগের এপ্রিল মাসে ৩৬ জন, জুনে ৩০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ও মার্চে ১৮ জন করে এবং জানুয়ারিতে ১৭ জন সাংবাদিক নানাভাবে নির্যাতন, হয়রানি ও পেশাগত দাযিত্বপালনে হুমকিতে পড়েছেন।

দেশের প্রধান প্রধান সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত খবরের ওপর নজর রেখে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক) এবং দেশনিউজ.নেটের মনিটরিং ও গবেষণা সেলের তথ্য-পরিসংখ্যানে এ চিত্র উঠে এসেছে । তবে পত্রিকায় বা অন্য কোন নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে সংবাদ হয়নি অথবা গবেষণা সেলের নজরে পড়েনি এমন আরও নিগ্রহের ঘটনা থেকে থাকতে পারে।

আইন ও শালিস কেন্দ্রের জুন মাসের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ না হলেও জানুয়ারি থেকে মে-এই ৫ মাসের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নির্যাতন, হয়রানি ও হুমকির মুখে পড়েছেন ২০ জন সাংবাদিক। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দ্বারা ১৪ জন এবং অন্যান্য সন্ত্রাসীদের হাতে ১০ জন সাংবাদিক হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ইউএনওসহ সরকারি কর্মকর্তা, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের দ্বারা প্রাণনাশের হুমকিতে পড়েছেন ১৭জন। সংবাদ প্রকাশের জেরে মামলায় আসামী হয়েছেন ৪৯ জন সাংবাদিক। এর বাইরে সরকারি কর্মচারিদের হাতে ৩ জন ও বিএনপি কর্মীর হাতে ১ জন সাংবাদিক নির্যাতিত হওয়ার তথ্য পেয়েছে আসক।

এদিকে দেশনিউজ ডটনেটের গবেষণা সেলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬ মাসে শারিরীকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬১ জন সংবাদকর্মী। কেবল এপ্রিল মাসেই দৈহিকভাবে নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন ১৯ জন। ফেব্রুয়ারিতে ১৪ জন, মার্চে ৯ জন, জানুয়ারি ও মে’তে ৭জন করে এবং জুনে সর্বনিম্ন সংখ্যক ৫ জন সাংবাদিক দৈহিকভাবে হামলা কিংবা লাঞ্ছনার মুখে পড়েছেন।

দেশ নিউজের গবেষণা সেলের তথ্য ও পরিসংখ্যান বলছে, ছয় মাসে ২৩ মামলায় আসামী হয়ে কারাভোগ ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ৪০ জন সাংবাদিক। তন্মধ্যে ধিকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৯ মামলায় ২৭ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হয়েছে। ডিজিটাল আইনের মামলাগুলোতে ২৭জন সাংবাদিক ছাড়াও অন্তত ৩৫ জন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আসামী হয়েছেন। একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও করা হয় এই সময়ে। মানহানিসহ অন্যান্য অভিযোগে ৬টি মামলায় আসামী হয়েছেন ৬জন সাংবাদিক।

ডিজিটাল আইনে ২৭জন অভিযুক্ত সাংবাদিকের মধ্যে গ্রেফতার করা হয় ১২ জনকে। অন্যরা গ্রেফতার এড়িয়ে জামিন নিতে পেরেছেন কিংবা এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে বহুল আলোচিত নিবর্তনমূলক আইনে প্রতিমাসে গড়ে ২ জন করে সাংবাদিককে জেল খাটতে হয়েছে এবং আত্মগোপন কিংবা কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে গড়ে মাসে ৫ জনকে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জাতীয় পত্রিকার একজন সম্পাদক এবং আঞ্চলিক পত্রিকার একাধিক সম্পাদক রয়েছেন। আবার ডিজিটাল আইনের মামলায় আসামীদের মধ্যে রয়েছেন দেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমের ৪ জন সম্পাদক।

চলতি বছরের মধ্য জুনে দৈনিক যুগান্তরের ক্রাইম বিভাগের প্রধান মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু রাজধানীর বনশ্রীর বাসায় মধ্যরাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক দিন পরে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। প্রথমে ঘটনাটিকে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে ধারণা করা হলেও পরে সন্দেহ দানা বাঁধে এবং থানায় হত্যা মামলা হয় নান্নুর স্ত্রী ও শ্বাশুড়িসহ অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ডিবি মামলাটি তদন্ত করছে এবং সর্বশেষ খবর অনুযায়ী স্ত্রী ও শ্বাশুড়ি পলাতক রয়েছেন।

( বিস্তারিত চিত্র দ্বিতীয় পর্বে-আগামীকাল)

ডিএন/জেএন/বিএইচ/০৭ঃ০৫এএম/০৬০৭২০২০-১

Print Friendly, PDF & Email