আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন
পশ্চিমবঙ্গে ট্রেনে হিন্দু উগ্রবাদের শিকার মুসলিম যুবক
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিগত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যায় একজন বাঙালি মুসলিম যুবককে কয়েকজন বাঙালি যুবক ট্রেনের মধ্যে ঘিরে ধরে তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে। তার উত্তর দিতে না পারলে তাকে চড় মেরে তার ধর্মীয় পরিচয় ও সংস্কৃতি নিয়ে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়।
নির্যাতনের শিকার যুবকের নাম জামাল মোমিন। বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের মালদা। কাজ করেন ভারতের অন্য আরেকটি রাজ্যে। ঘটনার দিন সে কলকাতা থেকে মালদায় নিজের বাড়ি ফিরছিল। তাকে ঘিরে ধরা ঐ যুবকেরা প্রথমে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম জিজ্ঞেস করে। তিনি উত্তরে বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জী’। তখন আবার তাকে প্রশ্ন করা হয় ‘তাহলে পশ্চিমবঙ্গের সিএম কে?’ জামাল থতমত হয়ে ভাবলেন, কোথায় থাকেন জানতে চাচ্ছে বুঝি! তাই তিনি বলেছিলেন মালদার কালিয়াচক। পরে তিনি ভুল শুধরে সঠিক উত্তর দিলেন। শুনে প্রশ্নকর্তাদের আক্রোশ আরও বাড়ল। শুরু হলো চড়থাপ্পড় আর অকথ্য গালাগালি।
তখন আবার প্রশ্ন করা হয় তাহলে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কে? পাশ থেকে অপর একজন জানতে চায় নওয়াজ শরিফ কি না! প্রশ্নকর্তা তাকে অশ্লীল গালি দিলে বলে, ‘ভারতে থাকো আর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম জানো না?’ আবার পরপর কয়েকজন জিজ্ঞাসা করে নওয়াজ শরিফ কে? জামাল মোমিনের জবাব, ‘বলতে পারবো না’। এর পরের প্রশ্ন ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি নাম কি?’ কিছুক্ষণ থেমে আবার প্রশ্ন ‘ভারতের জাতীয় সঙ্গীত কি?’ তিনি জনিনা বলার সাথে সাথেই প্রশ্নকর্তার আবার অশ্লীল গালিগালাজ আর চড় থাপ্পড় শুরু হয় এই নিরক্ষর খেটে খাওয়া এই যুবকের উপর। চলতে থাকে অশ্লীল গালির ঝড় আর চড় থাপ্পড়।
জামালকে আবার জিজ্ঞাসা করা হয় নামাজ পড়তে জানে কি না? সে জানে বললে প্রশ্নকর্তা আবার বলে, ‘নামাজ পড়তে জানিস তো জাতীয় সঙ্গীত জানিস না কেন?’ তখন প্রশ্নকর্তা বলে ‘তুই জনগনমন বলতে পারিস?’ জামাল বলে সে জানে তারপর গেয়ে শোনায়। জামাল বলে ঐটাই যে জাতীয় সঙ্গীত তা সে জানেনা। বারবার বলে সে পড়াশোনা জানে না। এরপর তাকে দিয়ে ‘বন্দেমাতরম’, ‘ভারতমাতা কি জয়’ বলানো হয়। জামাল বারবার নিরক্ষরতার কথা বললেও ঘুরে ফিরে তাকে প্রশ্নগুলি করা হয় এবং না পারলে চড় থাপ্পড় তো আছেই সেই সাথে অশ্লীল গালি গালাজ। এ সময় পাশ থেকে আরেকজন বলে, ‘নামাজ পড়লে কি লেখাপড়া লাগে?’ এসব বলে তার ধর্মীয় আচার-আচরন নিয়ে হেনস্থা করা হয়। এরপর আবার জামালের উপর বর্বরতা শুরু হয়।
ঘটনাটা ১৪ তারিখ রাতের। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া থেকে মালদা ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেনে বাড়ি যাচ্ছিলেন জামাল মোমিন । তার বাড়ি কালিয়াচক, মালদা। ট্রেনে জানালার পাশে একটা ফাকা আসনে পেয়ে বসেছিলেন তাতে। ট্রেন ছাড়তে দেরি থাকায় চা খেতে নেমেছিলেন। পড়ে উঠে দেখে সেই আসন অন্য একজন দখল করে বসে আছে। তিনি তার আসন ফেরত চাইলে চারজনের একটি দল বিভিন্ন প্রশ্ন করে। আর ঐসব প্রশ্ন না পারার কারণে মারধর, ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক কথা, হেনস্থা করা হয় তাকে।।
ঘটনার সময় আশপাশের লোকজনেরাও তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। তার একটাই অপরাধ, সে সংখ্যালঘু! তাই তাকে নানাভাবে হেনস্থা, গালিগালাজ ও তাকে ঘিরে উল্লাস।
ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’-এর হাতে আসলে তারা অনুসন্ধানের মাধ্যমে ঔ ভোক্তভোগী জামাল মোমিনের পরিবারকে খুঁজে বের করে। জামাল মোমিনের স্ত্রী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন এবং তার স্বামীর হেনস্থার প্রতিবাদ জানান।
এই ঘটনায় ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’-এর তরফ থেকে হেনস্তার শিকার জামাল মোমিনের স্ত্রীকে নিয়ে কালিয়াচক থানায় এফআইআর করা হয়েছে।