• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

দীর্ঘ সাত বছর পর নৌকা-ধানের শীষের লড়াইয়ের অপেক্ষায় দেশ

Vote-lineনিজস্ব প্রতিবেদক : আর একদিন পরেই সারা দেশে ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফলে এই নতুন নিয়মে অর্থাৎ স্থানীয় সরকারেও সরাসরি জাতীয় রাজনীতির প্রভাবটা কেমন তা দেখার অপেক্ষা। দীর্ঘ সাত বছর পর প্রধান দু’দলের ‘মর্যাদার’ লড়াইয়ে জন্য দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে শেষ হলো প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা।

এ বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা শাখার উপ-সচিব শামসুল আলম বলেন, ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থী ও তার সমর্থকরা কোনো প্রচারণা চালাতে পারবেন না। ভোট গ্রহণের ৩২ ঘন্টা পূর্ব থেকে সকল ধরনের প্রচারণা বন্ধ থাকবে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লক্ষাধিক সদস্য মাঠে আছে বলে জানান শামসুল আলম।

পুলিশ প্রায় ৪৫ হাজার, বিজিবি ৯ হাজার ৪১৫, র‌্যাব ৮ হাজার ৪২৪ কোস্টগার্ড ২২৫ আনসার ভিডিপি ৪৯ হাজার ৭২৮ এবং ব্যাটালিযন আনসার ৪ হাজার ৫১২ সব মিলিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ১ লাখ ১৭ হাজার ৩০৪ সদস্য মাঠে থাকছে বলে ইসির এই উপ- সচিব জানান।
এছাড়া সোমবার থেকে মাঠে রয়েছে ১ হাজার ২০৪ জন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

ভোটের দিন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ জন ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্বে থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ নির্বাচনে বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা নির্বাচনী মাঠে থাকছে। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার-ভিডিপি ও ব্যাটালিয়ন আনসার সার্বক্ষণিক থাকছে। এছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি, র‌্যাব, এপিবিএন, কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত থাকছে। এসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেতৃত্বে ও অপরাধ দেখভালে রয়েছে নির্বার্হী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

এদিকে ভোটের আগের রাতে আগের মতো যাতে কেন্দ্র দখল যাতে না হয় সে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তিনি আইনশৃঙ্খলা সভার কার্যবিবরণীতে বলেছেন, অতীতে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এজন্য নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র বন্ধ করতে হয়েছে। এতে সময় ও প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি আমাদের ব্যর্থতা। এবার যাতে ভোটের আগের রাতে কেন্দ্র দখল না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন তিনি।

২৮ ডিসেম্বর সোমবার রাত ১২টার আগেই বহিরাগতদের (যারা ভোটার বা বাসিন্দা নন) নির্বাচনী এলাকা ত্যাগে নির্দেশ দেয়া হয়েছে একটি পরিপত্রে। এছাড়া ভোটের দুই দিন আগে থেকে পরবর্তী আরো চার দিন পর্যন্ত অস্ত্রের লাইসেন্সধারীরা যাতে অস্ত্রসহ চলাচল করতে না পারে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বৈধ লাইসেন্সধারীদের সবধরণের অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের গ্রেফতার ও ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন ও পুলিশকে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আজ মধ্যরাতের পর বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে হবে। এ ধরনের নির্দশনা আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে দিয়েছি।’

প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছেন যতো প্রার্থী:
২৩৪ পৌরসভা নির্বাচনে ২০টি দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মেয়র পদে ৯৪৫ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে। সাধারণ কাউন্সিলর ৮ হাজার ৭৪৬ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২হাজার ৪৮০ জন। তবে এদের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় মেয়র পদে ৭ জন এবং কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন ও নারী কাউন্সিলর পদে ৪০ জন নির্বাচিত হয়েছেন।

মেয়র পদে ২০ দল ও সাড়ে ৯শ’ প্রতিদ্বন্দ্বী:
ইসির উপ সচিব সামসুল আলম জানান, এবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ২৩৪ জন, বিএনপির ২২৩ জন, জাতীয় পার্টির ৭৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রয়েছে।

দলীয় প্রার্থী ৬৬০ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে ২৮৫ জন। এতে অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র বিদ্রোহীরা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এছাড়া এলডিপি ১ জন, জেপি ৬ জন, সিপিবি ৪ জন, ন্যাপ ১ জন, ওয়ার্কার্স পার্টি ৮ জন, বিকল্পধারা ১ জন, জাসদ ২১ জন, বাসদ ১ জন, তরিকত ফেডারেশন ১ জন, এনপিপি ১৭ জন, পিডিপি ১ জন, ইসলামী ঐক্যজোট ১ জন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ১ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৫৭ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৩ জন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ১ জন, খেলাফত মজলিস-এর ১ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে।

ভোটার ও ভোটকেন্দ্র:
এ নির্বাচনে ৩ হাজার ৫৫৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোট হবে। এসব ভোট কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ২১ হাজার ৭১। এ হিসাবে প্রতি কেন্দ্রে ১ জন করে ৩ হাজার ৫৫৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, প্রতি বুথে ১ জন করে ২১ হাজার ৭১ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রতি বুথে ২ জন করে ৪২ হাজার ১৪২ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মোট ভোটার রয়েছে প্রায় ৭১ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ২৮৪ জন এবং নারী ভোটার ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ৮৬০ জন। ভোট গ্রহণ করবেন ৬৬ হাজার ৭৬৮ জন কর্মকর্তা।

মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত পদের ব্যালট পেপার, সিল, ফরম প্যাকেট ও অন্যান্য নির্বাচন সামগ্রী নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছেছে। এ নির্বাচনের মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত পদের ২ কোটি ১৩ লাখের বেশি ব্যালট পেপার, ভোট দেওয়ার সিলসহ নির্বাচন সামগ্রী পাঠিয়েছে ইসি। এসব পৌরসভায় মোট ভোটকেন্দ্রের এক-তৃতীয়াংশ ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।

Print Friendly, PDF & Email