• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

আমাকে সরাসরি থ্রেট করা হয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী

10নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে চাপের পাশাপাশি একজন বিশেষ ব্যক্তিত্বের একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকা, না থাকার ব্যাপারে সরাসরি থ্রেটও করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় ২৭তম কাজী মাহবুবউল্লাহ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি একথা জানান।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু বন্ধ করে দেবে, কোনো একটা বিশেষ ব্যক্তিত্বের একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকা, না থাকার ওপর। আমাকে সরাসরি থ্রেটও করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এই পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর দুর্নাম দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা… মূল টার্গেট ছিলাম আমি, আমার পরিবার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং সচিব, কেউই বাদ যায়নি।

পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের টানাপোড়নের সময়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন ভাবে একটা ধোঁয়াশা অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছিল, যেন আমরা দুর্নীতি করে সব টাকা লোপাট করে দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি পয়সা তারা দেয়নি, তার আগেই এই ধোঁয়া তোলা হল। সেটা কেনো, কার প্ররোচনায়, আমি বলতে চাই না। আপনারা ভালো করেই জানেন।’

তখন বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকার অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে সরাসরি বলেছেন, এটা না করলে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ হবে। এই কথা সরাসরি আমাকে শুনতে হয়েছে।

‘আমি মুখের ওপর বলে দিয়েছিলাম, পদ্মা সেতু আমরা নিজেরা করতে পারব। আমরা তা পেরেছি। নানাভাবে, নানা চাপ। দুটা বছর যেনো আমাদের ওপর আজাব সৃষ্টি করা হয়েছিল,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, তখন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকেও বাদ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু করব। কেউ টাকা দিলে দেবে, না দিলে না দেবে। কিন্তু, আমরা যে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করতে পারি- সেটা আমরা দেখিয়ে দিয়েছি।’

গ্রামীণ ব্যাংকের পদ ফিরে পেতে ইউনূসের চেষ্টার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই এমডির পদ তো আমার দেওয়ার কোনো সামর্থ্য ছিল না। কারণ, যার এই পদ, তিনি তো কোর্টে মামলা করেছিলেন সরকারে বিরুদ্ধে।’

‘ওই ব্যাংকের যে আইন, সে আইন ভঙ্গ করে ১০ বছর চালানোর পর কোর্ট তো তার বয়স কমাতে পারে না। মামলা করে যদি কেউ হেরে যায়- সে দায়দায়িত্ব তো আমাদের না, বাংলাদেশের জনগণের না,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে যে সাড়া পেয়েছেন, তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান সরকার প্রধান।
পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার পর বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করতে পারি, তাহলে একটা সেতু করতে পারব না- এটা হয় না। কিছু স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া আমরা ১৬ কোটি মানুষ আমাদের দেশটাকে সম্মানজনক জায়গায় নিতে পারি।

বেগম জেবুন্নেছা ও কাজী মাহবুবউল্লাহ জনকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান জোবায়দা এম লতিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন, ড. আবুল কালাম আজাদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন এবং সংসদ সদস্য বেগম নিলুফার জাফরউল্লাহ বক্তব্য রাখেন।

শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে নিজের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না।
দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে প্রথম চারটি দেশের মধ্যে একটি হলেও অচিরেই প্রথম তিনটি দেশের মধ্যে একটিতে উন্নীত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি গৃহে বিদ্যুত সংযোগের আশ্বাস দেওয়ার সঙ্গে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
শিক্ষা বিস্তারে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, সমাজের বিত্তবানদের নিজ নিজ গ্রামের দিকে তাকাতে, নিজ এলাকার দিকে তাকাতে বলব, মানুষকে সহযোগিতা করতে বলব। বিত্তবানরা উচ্চ শিক্ষা প্রসারে এগিয়ে আসবেন, মেধাবীদের শিক্ষায় এগিয়ে আসবেন, যাতে তারা দেশকে এগিয়ে নিতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email