পাসপোর্ট নিয়ে সরকারের টালবাহানা, আতঙ্কে প্রবাসী বিএনপি নেতারা

নিজস্ব প্রতিনিধি |

পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় সম্প্রতি আমেরিকায় মৃত্যুবরণ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। ক্যান্সার চিকিৎসায় শারীরিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় জীবনের শেষদিনগুলো দেশের মাটিতে কাটাতে চেয়েছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নিয়ম মেনে নতুন পাসপোর্টের আবেদনও করেছিলেন। আবেদনের পর দুইবছর কেটে গেলেও জীবিত অবস্থায় তাকে পাসপোর্ট দেয়নি সরকার। ফলে মৃত্যুরপর ওয়ানওয়ে ট্রাভেল ডকুমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে তার মরদেহ নিতে হয়। সাদেক হোসেন খোকা কেবল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানই ছিলেন না, মহান মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর খ্যাতনামা সদস্য হিসাবে তার নামটি অঙ্কিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অদ্ভ্যুদয়ের ইতিহাসে। তার মতো একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও জাতীয় নেতাকে জীবিত অবস্থায় বাংলাদেশী পাসপোর্ট না দেয়ার ঘটনায় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি এই ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে প্রবাসে অবস্থানরত বিএনপি নেতাকর্মী ও বিরোধীমতের লোকজনের মাঝে। বিশেষ করে শঙ্কায় পড়েছেন যারা সরকারের টার্গেট ও নিপিড়নের মুখে দেশ ছেড়েছেন। মারা গেলেও নিজের দেশের পাসপোর্ট না পাওয়ার আশঙ্কার মধ্যে সময় পার করছেন তারা। কারণ সাদেক হোসেন খোকার মতো বিদেশে অবস্থানরত বিরোধীদলের অনেক নেতা ও ভিন্নমত পোষনকারীকে পাসপোর্ট জটিলতার মধ্যে রেখেছে সরকার।
জানা যায়, বাংলাদেশে মৃত্যুবরণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তার স্ত্রী ইসমত হোসেন সশরীরে দূতাবাসে গিয়ে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু আবেদন নিবেদন ও বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও তার পাসপোর্ট রিনিউ করে দেয়নি বাংলাদেশ অ্যাম্বেসি। বাংলাদেশ সরকারপাসপোর্ট না দেয়ায় বাধ্য হয়ে তাকে আশ্রয় চাইতে হয়। অত্যন্ত দু:খের বিষয় তাকে যেদিন ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে যান সেই দিনটা ছিল ১৬ই ডিসেম্বর।রাজনৈতিক মনে করেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন গেরিলা যোদ্ধার জন্য সেদিনটি ছিল সবচেয়ে বেদনার। তিনি এমন একজন নেতা ছিলেন যাকে কোন গন্ডির মধ্যে মাপা কঠিন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও রাজনৈতিক সহাবস্থানে বিশ্বাসী এই নেতা দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধে উঠে তিনি সম্মান দিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের। গণমানুষের এই নেতা চেয়ারম্যান রাজধানী ঢাকায় জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে ছিলেন নিউক্লিয়াসের ভূমিকায়। নির্বাচনের মাঠেও বিপুল জনপ্রিয় এই নেতার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অতীতে পরাজিত হয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশেষে রাষ্ট্রহীন একজন মানুষ হিসাবে পরদেশে মৃত্যুবরণ করেছেন খোকা।
বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত বিরোধীদল মতের অনেকই রয়েছেন পাসপোর্টবিহীন। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দীর্ঘ কয়েকবছর বাংলাদেশী পাসপোর্টহীন। তার মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দেয়া হলেও তাকে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করেনি সরকার। একই পরিস্হিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারি প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী, মধ্যপ্রাচ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, মালয়েশিয়ায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এম এ কাইয়ুম, সিঙ্গাপুরে সরদার শরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, যুক্তরাজ্যে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম, ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, মহিলাদল নেত্রী অঞ্জনা আলম, সাংবাদিক সালেহ শিবলি, সাংবাদিক কাফি কামাল ও শফিকুল ইসলাম জুয়েল, সাবেক ছাত্রনেতা পারভেজ মল্লিক, নাজমুল হাসান, গোলাম জাকারিয়া, মিয়া সুজন মির্জা, সাইফুর রহমান, সাবেক শিবির নেতা তারিক আজিজ রোমান, কাজী মো. নুরুজ্জামান প্রমুখ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক কামাল উদ্দিন (কাফি কামাল) এ প্রতিবেদকে বলেন, সাদেক হোসেন খোকা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি রণাঙ্গনের গেরিলা যোদ্ধা হিসাবে নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। তাদের অকুতোভয় লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে বাংলাদেশের মানুষ। বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাকে এই স্বাধীন দেশের পাসপোর্ট দিতে অস্বীকৃতি জানানোর ঘটনা জাতির জন্য সত্যিই লজ্জার। এ ঘটনার পর ‘প্রবাসীদের মনে শঙ্কা বিরাজ’ প্রশ্নে কাফি কামাল বলেন, আমার কাছে আতঙ্কের বিষয় হলো- একটি স্বাধীন দেশের সরকার কতটা ফ্যাসিস্ট হলে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাসপোর্ট দিতে অস্বীকৃতি জানানো সম্ভব হয়। শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদের চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এজন্যই তাদের মাধ্যমে এমন বর্বর আচরণ করা সম্ভব হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email