আগুন নিয়ে সচেতনতা বাড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না

নিউজ ডেস্ক |

এখন পৌষ মাস৷ অনেকের কাছেই পৌষ পিঠা উৎসবের মাস৷ তবে রংপুরে এক শিশু আর এক যুবকের স্বজনদের কাছে পৌষ হয়ে গেছে সর্বনাশের মাস৷ কনকনে শীতে আগুনের উত্তাপ নিতে গিয়ে পুড়ে শেষ হওয়া দু’টি জীবনের জন্য তারা এখন কাঁদছেন৷

আগুন সম্পর্কে সচেতন না হলে এমন কান্না দিকে দিকে ছড়াতে পারে৷ আশঙ্কার কথা হলো, সচেতনতা বাড়ার লক্ষণ কোনো পর্যায়েই দেখা যাচ্ছে না৷

গত এপ্রিলে আগুন নিয়ে সারা দেশে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল৷ চকবাজারের আগুনে ৮১ জনের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আগুন লাগে বনানীর এফআর টাওয়ারে৷ সেখানে ২৫ জন মারা যান, পঙ্গু হয়ে যান অন্তত ৭৩ জন৷ ওই সময়ের কিছু প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল ভয়াবহ সব তথ্য৷ আমরা জানতে পেরেছিলাম, ১০ বছরে সারা দেশে আগুনে কমপক্ষে ১৪৯০ জনের প্রাণহানির কথা৷ আরো জেনেছিলাম, আগুন মোকাবেলায় সরকার যে ব্যয় করে, তা একেবারেই অপ্রতুল৷

অগ্নিকাণ্ডসহ সব ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলায় মাথাপিছু বার্ষিক বরাদ্দ মাত্র ৩০ টাকা জেনে একই সঙ্গে বিস্মিত এবং আতঙ্কিত হয়েছিলাম৷

কোনো কোনো উন্নত দেশ এ খাতে যেখানে মাথাপিছু ১৩৪ ডলার পর্যন্ত ব্যয় করে, সেখানে ৩০ টাকা তো কিছুই নয়৷

তবে এমনও নয় যে, দুর্ঘটনা মোকাবেলায় ব্যয় বাড়ালেই সবার জীবন নিরাপদ হয়ে যাবে৷

বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন, বাংলাদেশে আগুন লাগার প্রধান তিনটি কারণ বৈদ্যুতিক ত্রুটি, সিগারেট ও চুলা৷

২০১৮ সালে সারাদেশে যে ১৯ হাজার ৬৪২টি অগ্নিকাণ্ড হয়েছিল, তার মধ্যে ৭ হাজার ৮২৫টির উৎস ছিল বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট৷ একই সময়ে অন্তত ৩ হাজার ১০৮টি আগ্নিকাণ্ডের কারণ ছিল জ্বলন্ত সিগারেট৷

শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে অনেক সময়ই কেঁচোর ভিড় থেকে বেরিয়ে এসেছে সাপ৷ দেখা গেছে, আগুনের সূত্রপাতস্থলের বৈদ্যুতিক সংযোগটি ছিল অবৈধ৷ অবৈধ আয় বাড়ানো কিংবা অবৈধভাবে ব্যয় কম রাখার অসৎ প্রবৃত্তি রোধ নিশ্চয়ই দুর্ঘটনা মোকাবেলার ব্যয় বাড়িয়ে সম্ভব নয়৷

আগুন থেকে বাঁচতে সবার আগে দরকার জীবনের গুরুত্ব বুঝতে শেখা৷ শুধু নিজের জীবন, নিজের স্বজনদের জীবন নয়, সবার জীবন নিরাপদ রাখার দায়িত্বও ভাগাভাগি করে নেয়া দরকার৷ সরকারকে নিশ্চয়ই দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার চেষ্টায় আন্তরিক হতে হবে৷ সেই আন্তরিকতা আছে কিনা এ প্রশ্ন ছিল, আছে, হয়ত থাকবেও৷

তবে কিছু ক্ষেত্রে দায়িত্ব সরকার তো দূরের কথা, এমনকি নিকটতম প্রতিবেশীর ওপর ছেড়ে দেয়াও স্বেচ্ছামৃত্যু বরণের শামিল হতে পারে৷ অন্তত হাতের জ্বলন্ত সিগারেটটি যদি নিজের বাড়ির উঠোনের শুকনো খড়ের গাদায় ছুড়ে ফেলে কেউ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যান, সেই ঘুম চিরনিদ্রা হয়ে যেতেই পারে৷

আপনার ঘরের চুলা যদি জ্বলতেই থাকে, খুব কাছেই থাকে কোনো দাহ্য পদার্থ; কিংবা এই হাড়কাঁপানো শীতে আগুন পোহানোার সময় যদি নিজের কাপড়ও যে অগ্নিশিখা হয়ে আপনাকে পুড়িয়ে মারতে পারে সেকথা কেউ না ভাবেন, প্রতিবেশী বা দূরের কোনো প্রাণের স্বজনই বা তখন কী করতে পারেন!

রংপুরে আগুন পোহাতে গিয়েই দগ্ধ হয়ে মারা গেছে তিন বছরের এক শিশু৷ সেই শিশুর পাশে কতজন প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন, তা এখনো জানা যায়নি৷ তবে এক যুবক যে ছিলেন এবং তিনিও যে আগুনের ধ্বংসাত্মক শক্তি সম্পর্কে খুব সচেতন ছিলেন না তা তিনি জানিয়ে গেছেন সেই আগুনে প্রাণ দিয়ে৷

পৌষ-মাঘ আসবে৷ শীতে কেউ উৎসব করবে, পিঠা খাবে: কেউ কেউ আবার উৎসবের পিঠা বানিয়ে একটু বাড়তি আয়ের আশায় চুলা জ্বালাবেন৷ ধনী-গরিবের আকাশ-পাতাল তফাতের দেশে খোলা আকাশের নীচে, অথবা বস্তির জীর্ণ কুটিরে কুটিরেও নিশ্চয়ই লাগবে আগুন পোহানোর ধুম৷

তবে আগুন সম্পর্কে সচেতন হতেই হবে সবাইকে, পাছে জীবনটাই না আগুনে গুম হয়ে যায়!

সূত্রঃ ডয়চে ভেলে

Print Friendly, PDF & Email