করোনা উপসর্গ নিয়ে ১২ দিনে মৃত্যু ১২৬ জনের

নিউজ ডেস্ক |

করোনার উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্র ও শনিবার তারা মারা গেছেন। এরই মধ্যে মারা গেছেন এবং উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ৩০ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত করোনা উপসর্গে মৃত্যু হলো ১২৬ জনের। এদিকে, এক চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধিদের খবর- গত শুক্রবার রাতে ফরিদপুরের মধুখালীতে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে জ্বরে আক্রান্ত দিনমজুর আবদুস সামাদ মণ্ডলের (৪৮)। এর আগে দিনভর তিনি রাস্তার ধারে পড়ে থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। তার নমুনা নেওয়া হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের খাজুরায় বলে জানা গেছে। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার  কাউতলীতে নিজ বাসায় মুনা বেগম (৩৫) এবং নবীনগরের ইব্রাহিমপুর গ্রামের প্রয়াত ফুল মিয়ার স্ত্রী বৃদ্ধা জাহানারা বেগম মারা গেছেন। তাদের নমুনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি বিবেচনায় নবীনগর পৌরসভা লকডাউন করা হয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা গ্রামের বাড়িতে শুক্রবার রাতে মারা যান এক ব্যক্তি। তিনিসহ চারজনের নমুনা নেওয়া হয়েছে।

নওগাঁর পত্নীতলায় শাহীন আক্তার (২৬) নামে একজন গতকাল মারা যান। তার বাড়ি উপজেলার মাটিনন্দর ইউনিয়নের বাজকোলা গ্রামে। তার নমুনা নিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা। করোনায় মৃত্যু সন্দেহে লাশ গ্রামে প্রবেশে বাধা দেয় স্থানীয়রা। পরে প্রশাসনের সহায়তায় পাশের গ্রামে তাকে দাফন করা হয়। শুক্রবার মধ্যরাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা ৬ মাস বয়সী রাফাত মারা গেছে। তার নমুনা নেওয়া হয়েছে। শিশুটির বাবা ফোরকান উদ্দিন নগরীর একটি জুট মিলের শ্রমিক।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে শুক্রবার রাতে আরও দু’জন মারা গেছেন। তারা হলেন উপজেলার চরফলকন জাজিরার হারুন মাঝি (৫৭) ও পূর্ব চরমার্টিনের ছায়েদল হক (৫৫)। তাদের নমুনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া রামগঞ্জের শেফালীপাড়া গ্রামের জামাল খান শুক্রবার রাতে মারা যান। তারও নমুনা নেওয়া হয়েছে। মাদারীপুরের কালকিনির রমজানপুর ইউনিয়নের চড়াইলকান্দি গ্রামের এক নারী শুক্রবার রাতে মারা যান। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জলিল প্রধান (৬৫) নামের একজন মারা গেছেন। গতকাল রূপসী প্রধান বাড়ি এলাকায় তার মৃত্যু হয়।

নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুরে আসা এক যুবক শ্বশুরবাড়িতে মারা গেছেন। গতকাল সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা গ্রামে তিনি মারা যান। তার বাড়ি মতলব উপজেলায়। তার নমুনা নেওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে আজিজুর রহমান নামের একজন গতকাল মারা যান। মৃত ব্যক্তিসহ চারজনের নমুনা নেওয়া হয়েছে।

নমুনা সংগ্রহ ও লকডাউন : করোনা সন্দেহে বিভিন্ন স্থানে আরও অনেকের নমুনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকসহ ২৪ জন, ভোলার চরফ্যাসনে ১০ জন এবং বরগুনার আমতলীতে মারা যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের ৩৫ জন।

এদিকে, কুমিল্লার দেবিদ্বারে করোনা আক্রান্ত হয়ে ব্যবসায়ী জীবন সাহা (৫৫) নারায়ণগঞ্জে মারা যান শুক্রবার ভোরে। গতকাল তার আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। ব্যবসায়ীর বাড়িসহ তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় গত এক সপ্তাহে করোনা উপসর্গে চারজনের মৃত্যু হলেও তাদের নমুনা নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মামুনুর রহমান বলেন, কর্মীরা তার কথা শোনেন না। কিছু বললে তারা রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখান।

নতুন আক্রান্ত ও আইসোলেশন : দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও অনেকেই করোনোয় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন, ব্রাহ্মবাড়িয়ার সাতজন, কুমিল্লায় কুস্তিগিরসহ আরও তিনজন, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দুই চিকিৎসকসহ তিনজন, চাঁদপুরের মতলবে আরও একজন, সিলেটের হবিগঞ্জে এই প্রথম একজন, রংপুরের চার জেলায় ছয়জন, ঝালকাঠির এক পরিবারের তিনজন, জামালপুরে দুই নারী, গাজীপুরের কাপাসিয়ায় দু’জন, মাদারীপুরে দু’জন, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আরও দু’জন, কিশোরগঞ্জে মৃত যুবকের মা-ভাইসহ চারজন, কুমিল্লার বুড়িচংয়ের দুই শিশুর পর তাদের ফুফু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় তিনজন এবং নরসিংদীতে মালির স্ত্রী।

নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল সাময়িক বন্ধ : গতকাল এক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল। ওই চিকিৎসক আইসোলেশনে আছেন। তার সংস্পর্শে আসা চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়কে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. গৌতম রায় বলেন, হাসপাতাল জীবাণুমুক্ত করে আবারও চালু করা হবে। এদিকে, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দুই চিকিৎসকসহ তিনজন আক্রান্ত হওয়ায় গতকাল থেকে উপজেলা হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ বন্ধ ও আবাসিক কোয়ার্টারগুলো লকডাউন করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email