এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে সংসদ

জাহাঙ্গীর আলম আনসারী।
মানবপাচার ও অর্থপাচারের দায়ে কুয়েতে আটক লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সেই দেশের সরকার। এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগের তদন্তের পর মুদ্রা পাচারের অভিযোগের তদন্ত করছে দেশটির সিআইডি। সে মোতাবেক তাকে নিয়ে অভিযানে নামে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা। অভিযানে পাপুলের চেক বই জব্দ করা হয়েছে। তাতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে।
কুয়েতের আরব টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়েতের গোয়েন্দাদের কাছে এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া বাংলাদেশের ১১ জন নাগরিক তার সহযোগী মূর্তজা মামুনের নাম উল্লেখ করেন। পরে আদালত এমপির এই সহযোগীকে আটকের নির্দেশ দেন। তারপর গত বুধবার মুর্তজা মামুনকে আটক করে। এরপর পাপুলের ব্যাংক হিসাব থেকে লেনদেনের বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন দেশটির সিআইডি।
এদিকে এমপি পাপুলকে মানবপাচার চক্রের সবচেয়ে বড় হোতা উল্লেখ করে তার বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন কুয়েতের উপপ্রধানমন্ত্রী আনাস আল সালেহ। উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বের পাশাপাশি কুয়েতের মন্ত্রিপরিষদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
বাংলাদেশি সাংসদের নাম উল্লেখ না করে কুয়েতের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস আল সালেহ শনিবার এক টুইট বার্তায় বলেছেন ‘মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি সরকারি কর্মকর্তা হোন কিংবা বিশিষ্ট কোনো নাগরিক, তাঁকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এ বিষয়ে গত কয়েক সপ্তাহের সাফল্যের জন্য আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অভিবাদন জানাই। তাঁরা সবচেয়ে বড় মানব পাচারকারীর হোতাকে আটক করেছেন, যিনি এশিয়ার একটি দেশের নাগরিক। ওই তদন্তে গোয়েন্দারা সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছেন।’
মানবপাচার ও বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের দায়ে আটক এমপি পাপুলকে নিয়ে শুধু বাংলাদেশে নয়, তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েতেও এনিয়ে তুমুল আলোচনা সমালোচনা তুঙ্গে।
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগে বিদেশে একজন সংসদ সদস্যের আটকের ঘটনা শুধু দেশের জন্য নয়, জাতীয় সংসদেরও আত্মমর্যাদা নষ্ট হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সংসদেরও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ও সংসদের পক্ষ থেকে এনিয়ে এখনো কোনো বক্তব্য আসেনি।
আর বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর বলছে, এমপি পাপুলের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ ১৫ বছর জেল হতে পারে। কেননা কুয়েতের আইন অনুযায়ী অর্থ ও মানবপাচার বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
আর বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্যের পদ বাতিল হতে পারে: কোনো উপযুক্ত আদালত যদি তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করেন; তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর যদি দায় থেকে অব্যাহতি লাভ না করেন; তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন; তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদÐে দÐিত হন; তিনি যদি প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন; সংসদের অনুমতি ছাড়া তিনি যদি একটানা নব্বই বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন এবং সংবিধানের বহুল আলোচিত ৭০ অনুচ্ছেদের আলোকে তিনি যদি তার দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোট দেন।
তবে, কুয়েতে আটক এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল দোষী সাব্যস্ত হলে বিধি অনুযায়ী সংসদ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট মো. ফজলে রাব্বি মিয়া।
সোমবার বিকেলে দেশনিউজকে এডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, অপরাধের দায়ে তিনি বিদেশে আটক হয়েছেন। সেই দেশের আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে। এখানে আমাদের কিছু করার নাই।
অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যদি সাজা হয় তাহলে তার এমপি পদ থাকবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডেপুটি স্পিকার বলেন, এখনো এতদূর চিন্তা করিনি। আগে শাস্তি হোক তারপর..। অপরাধের দায়ে যদি বিদেশে তার সাজা হয় তাহলে সেই দেশের সরকার বাংলাদেশ সরকারের কাছে সাজার কাগজপত্র পাঠাবে। আমাদের সরকার সেই কাগজপত্র সংসদে পাঠাবে। তারপর আমরা এসব দেখে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। কেউ যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদÐে দÐিত হন তখন তার সংসদ সদদ্য পদ বাতিল হয়।
বিশিষ্টজনেরা এমপি পাপুলের বিষয়ে সংসদের পদক্ষেপ চান এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, তার প্রতি আমাদের কোনো অনুকম্পাও নেই, বিদ্বেষও নেই। আমাদের যা করার সবই আইন অনুযায়ী করতে হবে। আইনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, মানবপাচার ও অর্থপাচারের দায়ে গত ৬ জুন কুয়েতে আটক হন ল²ীপুর-২ আসনের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। আটকের পর গত রোববার তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে আদালত তাঁকে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে সিআইডির রিমান্ডে পাঠায়।
দেশনিউজ/জেএএ

Print Friendly, PDF & Email