মসজিদে এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ, সংখ্যা বেড়ে ২১

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি |

কেউ শোকে স্তব্ধ, কেউ চিৎকার করে কাঁদছেন, কারও চোখে জল টলমল। প্রিয়জনের লাশের জন্য অপেক্ষায় কেউ, কারও আবার সংকটাপন্ন স্বজনকে নিয়ে উৎকণ্ঠা। এর মধ্যে স্বামী ইব্রাহিম বিশ্বাসের মৃত্যুর খবর শুনে অচেতন হয়ে পড়লেন নাসরীন আক্তার। আরেক মা বিলাপ করছিলেন তার সাত বছরের ছেলে জুবায়ের ফরাজীর জন্য। টিভি দেখতে থাকা ছোট্ট ছেলেটিকে তিনি একরকম জোর করে স্বামীর সঙ্গে নামাজে পাঠান। ছেলে আর ফিরে আসেনি মায়ের বুকে, স্বামীও সংকটাপন্ন। এমন অনেক বেদনাবিধুর দৃশ্য দেখা যায় শনিবার রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।

শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের তল্লা এলাকার মসজিদে ভয়াবহ বিস্ম্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এই হাসপাতালে। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে মসজিদটির ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন আছেন ১৬ জন। তাদের কেউই শঙ্কামুক্ত নন।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। এতে মসজিদ কমিটি, বিদ্যুৎ এবং তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করা হয়েছে। এদিকে, মসজিদে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না কেউ। ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজ পড়তে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে পাড়ি জমালেন পরপারে। স্বজনরা বলছেন, কিছু সময় পরই তাদের বাসায় ফেরার কথা ছিল। অনেকে বাসা থেকেই মসজিদে গিয়েছিলেন। আবার কেউ বাইরের কাজ সেরে যান মসজিদে। ফোনে স্বজনকে জানান, নামাজ পড়েই ফিরবেন বাসায়। তাদের আর ফেরা হয়নি। যন্ত্রণাক্লিষ্ট মৃত্যুর পর তাদের ঠাঁই হয়েছে কবরে।

অভিযোগ উঠেছে, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে মসজিদের নিচের গ্যাসের পাইপলাইনে সমস্যার কথা জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ পরিস্থিতিতে বিস্ম্ফোরণের ঘটনা তদন্তে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, ডিপিডিসি ও তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকে ঘটনার নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে এসব কমিটি গঠন করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email