৩০ ডিসেম্বর সবাইকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান খালেদা জিয়ার

00001নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্তমানে নিকৃষ্ট স্বৈরশাসন জগরদল পাথরের মতো বাংলাদেশের জনগণের ওপর চেপে বসেছে মন্তব্য করে তাদের সরাতে হলে আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য পৌর নির্বাচনে সবাইকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৮০ ভাগ ভোট পেয়ে ধানের শীষের প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন।’

রোববার সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলে তিনি এসব কথা বলেন। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে এ কাউন্সিল যোগ দেন খালেদা জিয়া।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সারাদেশে এখন দখল উৎসব চলছে। মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার দখল হয়ে গেছে। এখন কষ্ট করে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া লাগে না। এর আগেই বাক্স ভরে দেওয়া হয়। কত সহজ করে দিয়েছে সরকারি দল। এই হলো দেশের সত্যিকারের অবস্থা।’

তিনি বলেন, ‘আগামী ৩০ ডিসেম্বর পৌর সভা নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রমনা। প্রতিটি মানুষ অপেক্ষায় বসে আছে তারা ভোট দেবে বলে।’

‘মানুষ ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য বসে আছে। আওয়ামী লীগ যতই মিথ্যা জরিপ করুক লাভ হবে না। আমার কাছে সঠিক জরিপ আছে তাদের ভড়াডুবি হবে। নিজেদের অপকর্ম হালাল করার জন্য মিথ্যা জরিপ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ’ যোগ করেন তিনি।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘রকিব-হাসিনার অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না এবং রকিব-হাসিনা মার্কা নির্বাচন জনগণ গ্রহণ করে না তা আপনারা সঠিক সংবাদের মাধ্যমে তুলে ধরুন।’

তিনি বলেন, ‘ধানের শীষের বিজয় হবে। এ জন্যই বিএনপিকে নিয়ে তাদের ভয়। বার বার কৌশল নেয় বিএনপি যাতে নির্বাচনে না আসতে পারে। কিন্তু এবার তারা (আওয়ামী লীগ) কৌশলে একটু ভুল করে ফেলেছে। প্রতীক দিয়ে নির্বাচন দিয়ে তারা মনে করেছিল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রমাণ করেছে, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। নিরপেক্ষ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাস করে, একদলীয় নির্বাচনে নয়।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমানে নিকৃষ্ট স্বৈরশাসন জগরদল পাথরের মতো বাংলাদেশর মানুষের ওপর চেপে বসেছে। স্বাধীনতার চেতনা ও গণতন্ত্র গলা টিপে হত্যা করেছে। সুশাসন নির্বাসনে চলে গেছে। মৌলিক মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভুলণ্ঠিত করা হয়েছে। সমাজের কোথাও ন্যায় বিচার নেই। প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। গুম, খুন মামলা, হামলা, নির্যাতনের মাধ্যমে কায়েম হয়েছে ত্রাসের রাজত্ব।’

ক্ষমতাসীনরা তাদের নিজ দলের বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল ও ভিন্ন মতের অস্তিত্ব রাখতে চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলের মহাসচিবকে (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলমা আলমগীর) ৬ বার কারাগারে নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৮৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

গণমাধ্যমকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে উল্লেখ করে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গণমাধ্যমের ওপর নেমে এসেছে তোড়জোড়। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর গণমাধ্যমের ওপর আরও দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের অপশাসনের সমালোচনা করলেই তাদের রোষানলে পড়তে হয়। সরকারের অপকর্ম তুলে ধরার অপরাধে দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভিসহ অনেক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার সাংবাদিক বেকার হয়ে গেছেন। তারা দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন।’ সম্প্রতি ফেইস বুকসহ সামাজিক যোগযোগের সবগুলো মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেও উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘ঘরে বাইরে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নেই। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ ২৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সত্য তুলে ধরার অপরাধে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে তিন বছর কারাগারে রাখা হয়েছে। একুশে টিভির চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে কারাগারে রেখে সু-কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে চ্যানেলটি দখল করা হয়েছে।’

অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের নামে কালাকানুনঃ
খালেদা জিয়া বলেন, ‘অনলাইন গণমাধ্যমকে নিবন্ধনের নামে কালাকানুন করে সরকার গণমাধ্যমে বন্ধ করার পয়তারা করছে। যারাই এ কালাকানুনের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছে তাদেরই হয়রানি করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সম্পাদক পরিষদের দেওয়া বিবৃতিও আমলে নেওয়া হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘সরকার প্রেস ক্লাবকেও ন্যক্কারজনকভাবে দখল করে নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মেধাবী সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে।’ সব বন্ধ গণমাধ্যম ও কারাগারে আটক সব সাংবাদিকের মুক্তির দাবিও জানান খালেদা জিয়া।

সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে অনুমতির দাবিঃ
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমরা অতীতে দেখে আসছি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য সাংবাদিকরা ভোটকেন্দ্রে যেত। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে সাংবাদিকরা নাকি ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন না। এর লক্ষ্য আরও পরিষ্কার। অবশ্যই সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। এবং ভোটকেন্দ্রের ভেতরে কী হচ্ছে, না হচ্ছে সব আপনারা তুলে ধরবেন।’

বিএফইউজের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন- মহাসচিব  এম এ আজিজ, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধানসহ সংগঠনের সারাদেশর সাংবাদিক নেতারা।

এ ছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন,যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বক্তব্য রাখেন।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর,আব্দুল মান্নান, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া।

Print Friendly, PDF & Email