২০০ পৌরসভার ভোটকেন্দ্র দখল হয়েছে, পুনঃনির্বাচনের দাবি বিএনপির

1নিজস্ব প্রতিবেদক: দলীয় প্রতীকের প্রথম পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গণনা পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীদের কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। বুধবার বিকেলে ভোট শেষে গুলশানে চেয়ারপাসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, যত দিন তারা ক্ষমতা থাকতে চায়, ততদিন হতে দেবে না। তিনি যেসব পৌরসভায় নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সেখানে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সরকারের সাজানো পরিকল্পনায় প্রহসনের নির্বাচন করেছে। সারাদেশের কোথাও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের লেশমাত্র পরিবেশ ছিল না।’ তিনি বলেন, এত দিন আশঙ্কা করেছিলাম প্রহসনের একটা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কাই প্রমাণ হয়েছে।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সারাদেশের ১৫৭টি পৌরসভায় সরকার দলীয় ক্যাডাররা তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা দেড় সহস্রাধিক কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিয়েছে। বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। অনেককে কেন্দ্রেই যেতে দেওয়া হয়নি। ভোটারদেরও অনেক জায়গায় বের করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় দেড় সহস্রাধিক কেন্দ্রে ক্ষমতাসীনরা প্রশাসনের সাথে যুক্ত হয়ে এজেন্ট বের করে দিয়ে ভোট দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অন্তত ২০০ পৌরসভার ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। এটা উল্টো প্রমাণ করার জন্য এই পৌর নির্বাচনটি প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর ক্ষমতাসীনরা হামলা করেছে। পুলিশও অনেক জায়গায় গ্রেপ্তার করেছে। এ সবকিছু করা হয়েছে নির্বাচনে কারচুপি করার জন্য। ইসির কাছে বারবার অভিযোগ করেও এর কোনো প্রতিকার আমরা পাইনি।

বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, দিনভর নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশ দূরের কথা, মারামারি-সংঘাত, কেন্দ্র দখল ইত্যাদিতে নির্বাচন একটি ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ ভোট কেন্দ্র দখল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আরেকটি বিষয় আরেকবার লক্ষ্য করলাম যে, সরকার সব রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে নির্বাচনে তাদের পক্ষে ব্যবহার করল।’
এত কিছুর পরও যে কোনো পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশ আছে, স্থানীয়ভাবে দলের কোনো প্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের সুযোগ নেই।’

তিনি যেসব পৌরসভায় নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সেখানে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানান। বলেন, ‘স্থানীয় ও কেন্দ্রীয়ভাবে যেসব পৌরসভার কেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপির অভিযোগ করা হয়েছে সেসব কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচন দিতে হবে। এই নির্বাচন আবারো প্রমাণ করেছে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্ভব নয়।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। আমারা যে আশঙ্কা করেছিলাম, তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আমরা বার বার বলেছি, পৌর নির্বাচন একটি প্রহসনে পরিণত হবে। আজ সারাদিন গণমাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়ায় ভোটগ্রহণের যে চিত্র আমরা দেখেছি, তা গণতন্ত্র সম্পর্কে জনগণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ভোট উৎসব তো দূরের কথা-মারামারি, সংঘর্ষ, গোলাগুলি, সহিংসতা পুরো নির্বাচনটাকে একটা ট্র্যাজেডিতে পরিণত করেছে।

একই সঙ্গে বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দলীয় নেতাকর্মীদের ভোট গণনা শেষে ফলাফলপত্রে রিটার্নিং অফিসারের স্বাক্ষর সম্বলিত কপি নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হতে নির্দেশ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, এমএ কাইয়ুম, যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email