পদ ছাড়ার হুমকি মেয়র আরিফসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ৪ নেতার

সিলেট প্রতিনিধি |

সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। এক ‘নব্য বিএনপি’ নেতার ইন্ধনে ‘ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের’ বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে।

দীর্ঘ ১৯ বছর পর গঠিত কমিটি নিয়ে স্থানীয় নেতাদের পরামর্শ না নেওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই ক্ষোভ থেকে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ চার কেন্দ্রীয় নেতা। তারা দল ছাড়ছেন বলেও গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। মেয়র আরিফ আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন এমন খবরও ছড়িয়ে পড়ে।

শনিবার রাতে নগরীর কুমারপাড়ায় মেয়র আরিফের বাসায় বৈঠক করেন পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া বিএনপির এই চার নেতা। বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামানসহ যুবদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা এই বৈঠকে ছিলেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা মতিউল বারী খুর্শেদ।

বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতারা যুবদলের কমিটি গঠনে ‘প্রক্রিয়াগত ত্রুটি’র অভিযোগ করেছেন। রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে তারা লিখিত অভিযোগ দেবেন। এর পর কেন্দ্র প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে তারা দলীয় পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। মেয়রের সঙ্গে দলীয় পদ ছাড়তে পারেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক , কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান। বিএনপি ও যুবদলের আরও অনেক নেতা পদত্যাগ করতে পারেন বলে জানা গেছে।

গত শুক্রবার কেন্দ্র থেকে ২৯ সদস্যের জেলা এবং ২৭ সদস্যের মহানগর যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। বহুল প্রত্যাশিত জেলা কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমান পাপলু এবং মহানগরে নজিবুর রহমান নজিবকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটির বেশিরভাগ নেতা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্কার আব্দুল মুক্তাদিরের অনুসারী। এতে আরিফুলসহ মুক্তাদিরবিরোধী নেতাদের অনুসারীরা স্থান পাননি বলে তারা ক্ষুব্ধ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (সদর-নগর) আসনে বিএনপি প্রার্থী ছিলেন খন্দকার মুক্তাদির। এর আগে গত বছরের জুনে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন সামনে রেখে ঘোষিত ওই কমিটিতে অধিকাংশ নেতা মুক্তাদিরের অনুসারী ছিলেন বলে সংশ্নিষ্ট নেতারা জানান। মেয়র আরিফসহ স্থানীয় বিএনপির অনেক নেতা সাবেক সচিব ইনাম আহমদ চৌধুরীকে সিলেট-১ আসনে দলীয় প্রার্থী চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত মুক্তাদির দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর ক্ষুব্ধ-অপমানিত ইনাম আহম আওয়ামী লীগে যোগ দেন। নির্বাচনে মুক্তাদির হেরে যান।

এদিকে গত বছরের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি নির্বাচনে মুক্তাদির মেয়র পদে আরিফের মনোনয়নের বিপক্ষে ছিলেন বলে একাধিক নেতা জানান। শেষ পর্যন্ত তারা একে-অপরের পক্ষে প্রচারে নামলেও ভেতরে ভেতরে শীতল সম্পর্ক বিদ্যমান। এর মধ্যে ছাত্রদলের পর যুবদলের কমিটিতেও মুক্তাদিরবিরোধী নেতাদের অনুসারীরা ঠাঁই না পাওয়ায় দলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

গত শুক্রবার যুবদলের কমিটি ঘোষণার পর মেয়র আরিফের বাসায় জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে বৈঠকে যুবদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা গণপদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে মেয়রসহ বিএনপি নেতারা তাদের নিবৃত্ত করেন। 

তারা অভিযোগ করেছেন, ত্যাগীদের বাদ দিয়ে যুবদলের কমিটি গঠনের মাধ্যমে তৃণমূলের রাজনীতি ধ্বংস করা হচ্ছে। এই কমিটি গঠনের নেপথ্যে প্রকাশ্যে কারও নাম উল্লেখ না করলেও বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতারা খন্দকার মুক্তাদিরের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

গত ২ অক্টোবর কেন্দ্র থেকে সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সে কমিটির ১৬ নম্বর সদস্য পাপলুকে জেলা যুবদলের আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে খন্দকার মুক্তাদিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি। মেয়র আরিফ বলেন, ‘নেত্রীকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে রেখে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। কিন্তু বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় দল চলছে, তাতে চুপ করে বসে থাকারও সুযোগ নেই। এতদিন মৌখিকভাবে নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছি। এবার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে জানাব। এতে কাজ না হলে দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করব; দল ছাড়ব না।’

তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, দুদিন হয়নি দলে এসেই বড় পদ বাগিয়ে নিয়েছেন; তারাই লন্ডনে বসে ইচ্ছামতো কমিটি করাচ্ছেন। ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাবাদীরা আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে না নেমে দলের ক্ষতি করছেন।

ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, যুবদলের যে কমিটি করা হয়েছে, তাতে পুরোনো কেউ নেই। যারা দলের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে নির্যাতিত হয়েছেন, কারা ভোগ করেছেন, তাদেরকে মূল্যায়ন করা হয়নি। বঞ্চিতরা তাদের কাছে প্রতিকার চেয়েছে। তারা সমাধান দিতে পারেননি বলে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে যুবদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা দলের বিপদে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। 

তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভুল বুঝিয়ে সুবিধাবাদী নেতারা কমিটি করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email