বিএনপিতে কী হচ্ছে?

বিশেষ প্রতিনিধি |

সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন নেতা আবারও বিএনপিতে অস্থিরতা সৃষ্টি এবং দলের বিরুদ্ধে একত্র হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে হাইকমান্ডের কাছে তথ্য রয়েছে। তাদের সঙ্গে রয়েছেন আরও কয়েকজন সংস্কারপন্থী নেতা, যারা এখনও দলে ফিরতে পারেননি। দলে নিষ্ক্রিয়, ব্যবসায়িকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং নিজ এলাকায় কোণঠাসা নেতাদেরও টার্গেট করে বিএনপি থেকে পদত্যাগের চাপ দিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল । ইতিমধ্যে সংস্কারপন্থী নেতাদের নজরদারিতে রেখেছে বিএনপি।

সূত্র জানায়, নেতাদের পদত্যাগের নেপথ্য কারণ খোঁজার চেষ্টা করছেন বিএনপি নেতারা। বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে দল ছাড়ার পেছনে তারা বেশ কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, অনেক ব্যবসায়ী নেতা আছেন তাদের ব্যবসায় কর, ভ্যাটসহ নানা ঝামেলা আছে।

বিএনপি করার কারণে তাদের অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীরা। ভবিষ্যতে আরও হয়রানির শিকার হতে পারেন- এমন শঙ্কায় নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

পদ-পদবি নিয়ে অসন্তোষ ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে মূল্যায়ন না করাও পদত্যাগের আরেকটি কারণ বলে জানা গেছে। এসব কারণের পাশাপাশি এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে দলে ভাঙন সৃষ্টির কোনো তৎপরতা আছে কিনা- সে ব্যাপারেও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি দলের সুসময়ে অনেকেই এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। নেতাকর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে খালেদা জিয়া যে সরকার গঠন করেছিলেন তখন অনেক নামিদামি নেতা আমাদের দলে এসেছেন।

তাদের দেখে মনে হয়, দেশের এমন পরিস্থিতিতে এখন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে, আর সহ্য হচ্ছে না। সে কারণে তারা প্রস্থান করতে চান। দুই-একজন দল ছাড়লে বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই।

তিনি বলেন, বিএনপি একটি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম, একটি বটগাছ। ক্লান্ত শরীর নিয়ে মানুষ এখানে আসবে বিশ্রাম নেবে, পিপাসা মেটানোর পর আবার চলে যাবে- এটাই স্বাভাবিক। এদের বেশি গুরুত্ব দেয়ার দরকার মনে করে না বিএনপি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বারবার বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের আগে থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এখন আবার নতুন ষড়যন্ত্রের আভাস শুনতে পাচ্ছি।

কিন্তু বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কোনো কাজ হবে না। অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে কিন্তু কোনোভাবেই তা সফল হয়নি।

তিনি বলেন, যারা যাচ্ছেন তারা ক’দিন পর রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের নানামুখী চাপের কারণে কেউ কেউ পদত্যাগপত্র দিচ্ছেন। আমরা এসব পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছি না।

এদিকে পদত্যাগ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ইস্যুতে দলের নীতিনির্ধারকরা কিছুটা বিব্রত হলেও তৃণমূলে এর কোনো প্রভাব নেই। উল্টো অনেকে এতে আরও স্বস্তি প্রকাশ করছেন।

গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এ পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়েছেন। যারা নিষ্ক্রিয় এবং সুবিধাবাদী তাদের ব্যাপারে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে দলের হাইকমান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কেউ কেউ।

তৃণমূল নেতাকর্মীরাব মনে করেন, এত বড় দলে কেউ চলে গেলে ক্ষতি হবে না। কারণ বিএনপির সমর্থক এখন দ্বিগুণ হয়েছে, নেতাকর্মীর সংখ্যা আরও বেড়েছে। সুতরাং তৃণমূলে এর কোনো প্রভাবই পড়েনি।

Print Friendly, PDF & Email