করোনা মোকাবেলায় চিকিৎসাখাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের দাবি ২০ দলের

নিজস্ব প্রতিবেদক।

সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে চিকিৎসাখাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।

শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় জোটের শীর্ষ নেতারা এ দাবি জানান।

জোটের নেতারা বলেন, বাজেটে জনস্বাস্থ্য ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ব্যয় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে করে জনগণের হতাশা ও ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে।

জোট নেতারা বলেন, বাজেট অনুমোদনের আগেই সংশোধন করে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে সারা দেশে দৈনিক অন্তত ৫০ অথবা ৬০ হাজার মানুষের কোভিড টেস্টের সুযোগ সৃষ্টি, উপজেলা পর্যায় পর্যাপ্ত টেস্ট, চিকিৎসা ও রোগের বিস্তার প্রতিরোধের সামর্থ সৃষ্টির লক্ষ্যে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।

পাশাপাশি সব কর্মহীন পরিবারকে স্বাস্থ্য সম্মতভাবে বেঁচে থাকার মতো ত্রাণসামগ্রী রেশনকার্ডের মাধ্যমে যতদিন প্রয়োজন ততদিন সরবরাহের এবং গার্মেন্টসসহ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পে যাতে কাউকে ছাঁটাই করা না হয় সেই শর্তে প্রয়োজনীয় ঋণ/সহায়তা প্রদান করতে হবে।

যৌথ বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীতে যখন দেশের জনগণের জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত’, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির, রফতানি ও আমদানি প্রায় সম্পূর্ণই বন্ধ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, যাতায়াত ব্যবস্থা রূদ্ধপ্রায়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার রুগ্নতা প্রকট এবং এসব মোকাবেলায় সরকারি সামর্থের দীনতা- দক্ষতার অভাব ও দুর্নীতি-অনাচার রোধে ব্যর্থতা প্রকটভাবে দৃশ্যমান। এই সময়ে জাতীয় সংসদে পেশকৃত বাজেটে বাস্তবতা বিবর্জিত ও কাল্পনিক প্রবৃদ্ধির হার, রাজস্ব আয় ও মুল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ এবং জনস্বাস্থ্য ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ব্যয় বরাদ্দের ফলে জনগণের হতাশা ও ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ২০ দল মনে করে- জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা কিংবা জবাবদিহিতার দায়মুক্ত বাস্তবে একটি একদলীয় সরকারের আচরণে কাল্পনিক সাফল্যের দিবাস্বপ্ন দেখানোর অপপ্রায়াসই স্বাভাবিক। বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী কোভিড-১৯ এর কারণে বেকার মানুষের সংখ্যা ১৪ লাখ বলেছেন, যা বাস্তবের তুলনায় অনেক কম। অন্যদিকে যে প্রবাসীদের আয়ে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ তাদের মধ্যে যারা ফিরে এসেছেন এবং যারা ফিরে আসার অপেক্ষা করছেন তাদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের জন্য বাস্তব সহায়তার কোনো সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি কিংবা দিক নির্দেশনা বাজেটে নেই।

বিবৃতিতে ২০ দলীয় জোট নেতারা বলেন, করোনায় দেশের অর্থনীতির প্রধান দুই খাত তৈরি পোশাক শিল্প ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো উপার্জন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্তেও এই দুই খাতে সংকট নিরসন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কোনো কার্যকর পরিকল্পনার কথা বাজেটে উল্লেখ নেই। অন্যদিকে সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য ব্যাংকিং খাত থেকে অধিক পরিমাণ ঋণ গ্রহণের ফলে ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহ এবং নতুন কর্মস্থান সৃষ্টির সুযোগ আরও হ্রাস পাবে, যার পরিণতি হবে দেশের জন্য আরও ভয়াবহ ও ক্ষতিকারক।

২০ দলীয় জোট নেতারা বলেন, কৃষি খাতে ঋণ সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে নানা শর্ত আরোপের ফলে বর্গা চাষী ও ক্ষদ্র চাষীরা বঞ্চিত হবে বিধায় এসব শর্ত শিথিল করা আবশ্যক। গার্মেন্টস, নির্মাণ, কৃষি শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, পর্যটন, হকার্স, কুলি, গৃহ শ্রমিকসহ দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কয়েক কোটি মানুষ এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যখন অনাহার-অর্ধাহারে ও বিনা চিকিৎসায় বিপন্ন তখন তাদের জীবন বাঁচানো ও জীবিকা পুনঃরুদ্ধারের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের চেয়ে বাজেটে জরুরি নয় এমন অবকাঠামো খাতে অধিক ব্যয় বরাদ্দকে ২০ দল জনগণের প্রতি সরকারের দায়িত্বহীনতা বলে মনে করে।

জোটের নেতারা আরও বলেন, একই সঙ্গে তামাকজাত পণ্য ও বিলাস সামগ্রীর উপর বেশি কর আরোপ না করে সার্বজনীনভাবে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কলচার্জ ও ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর কর বাড়ানো, কম আয়ের মানুষের চেয়ে বেশি আয়ের মানুষদের ব্যক্তিগত আয়ের উপর অধিক রেয়াত প্রদান, কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করা এবং বিদেশে টাকা পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পরিবর্তে শুধুই কিছু জরিমানার প্রস্তাব অর্থবান ও ক্ষমতাবানদের প্রতি সরকারের নমনীয়তা ও আত্মসমর্থনের প্রমাণ বলেও ২০ দল মনে করে।

বিবৃতিতে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা কোভিড-১৯ মহামারীতে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ইতিমধ্যেই জোটের শরিক দলসমূহ দুস্থ জনগণের সেবায় যে ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন তা আরও বিস্তৃত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।

বিবৃতি দাতারা হলেন- ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব) ড. অলি আহমদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইসহাক, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি আল্লামা নূর হোসেন কাসেমী, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, মুসলিম লীগের সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান খসরু, বাংলাদেশ পিপলস লীগের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ ভাসানী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান আবু তাহের, সাম্যবাদী দলের সম্পাদক কমরেড সাঈদ আহম্মদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা ও বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান শাওন সাদেকী।

ডিএন/পিএন/জেএএ

Print Friendly, PDF & Email