মাসুদ সাঈদীর আবেগঘন স্ট্যাটাস

কনকনে শীতে পাতলা এক কম্বল বিছিয়ে আরেকটি মুড়িয়ে ফ্লোরে ঘুমান আল্লামা সাঈদী

নিউজ ডেস্ক | শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) পিতার সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ শেষে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন আজীবন কারদন্ড ভোগরত নন্দিত মোফাচ্ছিরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র মাসুদ সাঈদী। তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ব্যাপক শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে। স্ট্যাটাসটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো।

আমার প্রানের স্পন্দন আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতা আল্লামা সাঈদী হাফিজাহুল্লাহ’র সাথে সাক্ষাত করে ফিরছি। ভালবাসার মানুষটাকে একটু দেখার জন্য প্রতীক্ষায় থাকতে হয় দীর্ঘদিন। আর প্রতীক্ষার প্রহরগুলোও কেন যে এতো দীর্ঘ হয়, কে জানে !!

সাক্ষাতের সময় পাই মাত্র ৩০ মিনিট। আচ্ছা ঘড়ির কাটাটা কি আরেকটু ধীরে ঘুরতে পারেনা! সাক্ষাতের এই ৩০ মিনিট কি আরেকটু দীর্ঘ হতে পারেনা !!

আমার আব্বা শুরু থেকেই ঠান্ডা সহ্য করতে পারেন না। গরম সে যতো গরমই হোক আব্বার সমস্যা হয়না, কিন্তু আব্বা অল্প ঠান্ডাতেও কষ্ট পান। আর কারাগারের ভেতরে ঠান্ডাটা মনে হয় একটু বেশিই। এখনই যে শীত পড়েছে তাতে সামনের দিনগুলোতে আরো কতো শীত পড়বে আল্লাহই ভাল জানেন।

আব্বার থাকার রুমটা আকারে খুবই ছোট। শুনেছি ১০ ফুট বাই ৮ ফুট হতে পারে। বসার জন্য নেই কোনো চেয়ার। কোনো টেবিলও নেই। ছোট্ট এই রুমে আব্বার শোয়ার জন্য কোন খাটও নেই। ফ্লোরে চাদর পেতে শুতে হয় তাকে। চাদরের উপর আছে পাতলা ২টি কম্বল। আর মাথার বালিশ হিসেবে ব্যবহারের জন্য আরেকটি কম্বল। এই হলো বিশ্বনন্দিত মুফাসসির, আল্লাহর এক গোলামের থাকার ঘর। কারাগারের যে রুমে আব্বা থাকেন তার দরজা/জানালার কোন পাল্লা (কপাট) নেই। সেগুলোর গ্রীল দিয়ে সারারাত হু হু করে ঠান্ডা বাতাস ঢোকে। ঠান্ডার তীব্রতায় ফ্লোরে পাতা বিছানাটা এমন হয় যেন পানি দিয়ে কেউ ভিজিয়ে রেখেছে। শেষ রাতের নামাজের অজুর পানি যেন বরফের পানির মতো।

এমন কঠিন বাস্তবতার মধ্যে আছেন আমার আব্বা আল্লামা সাঈদী। কিন্তু কী আশ্চর্যের বিষয় জানেন! নিজের কষ্ট নিয়ে তার বিন্দু পরিমান আক্ষেপ নেই। অভিযোগ নেই। তার কোন অসুবিধা বা কষ্টের কথা আমরা কিছু জানতে চাইলেই আব্বা সূরা আনকাবুতের ঐ আয়াত (আয়াত ২-৩) আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা ঘোষনা করেছেন, ‘মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে, আমরা ঈমান এনেছি এ কথাটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তীদের সকলকেই পরীক্ষা করে নিয়েছি। আল্লাহ তা’য়ালা অবশ্যই দেখবেন কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যুক।’ আব্বা আরো বলেন, এটা আমার সৌভাগ্য যে তিনি আমার মতো অযোগ্য নগন্য এক গোলামকে পরীক্ষা দেয়ার জন্য বাছাই করেছেন। আমি ঈমানের অগ্নি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছি। আর আমি আমার এ জীবন তো বহু আগেই আমার রবের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। তাই কোন বিষয়েই আমার কোন কষ্ট নেই, অভিযোগ নেই।’

নিজে এতো কষ্টের মাঝে থেকেও আব্বা বললেন, “অসহায় দু:স্থ গ্রামের মানুষগুলিকে পারলে কিছু কম্বল-শীতবস্ত্র দিও। অসহায় মানুষের পাশে থেকো, সবসময়।”

আহারে এমনই একজন মানুষ আমার বাবা …. !

এমনই একজন মানুষ তিনি, যিনি নিজে তীব্র এই শীতে অন্ধকার কারগারের মাঝে কষ্টে থেকেও বাইরের শীতার্ত অসহায় মানুষগুলির চিন্তায় বিভোর।

যখন তিনি ছিলেন বাইরে, যে কোন দূর্যোগে ছুটে যেতেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত পর্যন্ত। বিশ্ব মুসলিমের দুর্যোগে ছুটেছেন তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশে। এজন্যই তো তিনি আল্লাহ তায়ালার দয়ায় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের প্রাণের স্পন্দন।

সাক্ষাত শেষে বিদায় বেলায় আব্বা নবনির্বাচিত আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ারকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন নির্বাহী পরিষদের সকল সম্মানিত সদস্য, কর্মপরিষদ ও মজলিসে শুরার সকল সম্মানিত সদস্যকে। তাদের সকলকে সালাম জানিয়েছেন আর আমাদেরকে সাথে নিয়ে মহান মাবুদের দরবারে তাদের প্রত্যকের নেক হায়াত, তাদের হেফাজতের জন্য দোয়া করেছেন। ইসলামী আন্দোলনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীর জন্য দোয়া করেছেন। এদেশে ইসলামের রাজ কায়েমের লক্ষ্যে সকল আলেম উলামাগণের মধ্যকার সকল মান অভিমান মিটিয়ে ফেলে তারা যাতে ঐক্যবদ্ধ হন সেজন্য মহান আল্লাহ তায়ালা দরবারে বিশেষ দোয়া করেছেন।

দেশ বিদেশে অবস্থানরত আপনারা যারা আব্বার কাছে সালাম পৌঁছাতে বলেছিলেন, আমি আপনাদের প্রত্যেকের সালাম আব্বার কাছে পৌঁছে দিয়েছি। তিনিও আপনাদের সকলকে সালাম জানিয়েছেন ও দোয়া চেয়েছেন।

আমি এক মজলুম পিতার মজলুম সন্তান হয়ে আজ এই পবিত্র জুম’য়ার দিনে সফররত অবস্থায় মহান মালিকের দরবারে প্রার্থনা করছি- ওগো দয়াময় আল্লাহ !
তুমি আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতা আল্লামা সাঈদীকে সুস্থ রাখো। নিরাপদে রাখো। হেফাজতে রাখো। নেক হায়াত দান করো। তার মুক্তির ফায়সালা করে দাও। সুযোগ করে দাও অসহায় নির্যাতিত-মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আর ফিরিয়ে দাও তাকে কোরআনের ময়দানে।

Print Friendly, PDF & Email