রাজনীতির চমক এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে ১৮শ’কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ তদন্ত শুরু

?ইন্টারপোলকে চিঠি দেবে দুদক ?কুয়েত সিআইডি চায় তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আটক রাখতে

এবিএন হুদা ♦

বিস্ময়কর উত্থান হওয়া লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি (স্বতন্ত্র) মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ ও প্রায় ১৮শ’ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া পাপুল শনিবার (৬ জুন) রাতে কুয়েতের মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে আটক হয়ে এখন সেখানে সিআইডির রিমান্ডে আছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপুলকে চিঠি দেবে দুদক।

এক ঘরে ভাগ্যবান দুই এমপি

পাপুলের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অনেক অভিযোগ দুদকে জমা পড়েছে। দুদকের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল আউয়ালের তত্ত্বাবধানে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে। অভিযোগে কমিশন খেয়ে ব্যাংক ঋণ বরাদ্দসহ দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়ার কথা রয়েছে। অনুসন্ধানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।

শিরোনাম হন গত ফেব্রুয়ারি মাসেও

অভিযোগ রয়েছে, এমপি পাপুল ব্যবসার আড়ালে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এ ছাড়া ২০১৬ সালে দেশ থেকে ২৮০ কোটি টাকা হুন্ডি ও বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পাচার করেন। বাকি টাকা তার এক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করেন।

এদিকে গালফ নিউজ ও কুয়েতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং প্রবাসীদের মাধ্যমে জানা যায়, মানব পাচার ও অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন জালিয়াতিতে জড়িত অভিযোগে অন্তত একশ ব্যক্তির তালিকা করেছে কুয়েত সরকার। সেই তালিকায় পাপুলের নাম শীর্ষে রয়েছে। সম্প্রতি ওই তালিকার অনেককেই গ্রেফতার করেছে দেশটির গোয়েন্দা বিভাগ। সেই অভিযানেই আটকা পড়েন এমপি পাপুল। কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলকে কুয়েতের সিআইডি পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে আমরা শুনেছি।

তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের জানানো হয়নি। আমরা বিষয়টি বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। তবে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পাপুলের স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কিছু বিষয়ে জানতে ডেকে নেয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদের প্যাডে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন, তার স্বামী কুয়েতে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি খ্যাতনামা মারাফি কুয়েতিয়া কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। এই কোম্পানির কুয়েতি অংশীদারও রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানে ২৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি কর্মরত।

রাজনীতির চমক শহিদ ইসলাম

রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটাই অপরিচিত মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাক লাগিয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সমর্থন আদায় করে।

মহাজোটের প্রার্থীই সরে দাঁড়িয়েছিলেন ইসলামকে কেন্দ্রীয়ভাবে তার জোট সমর্থন দেয়ায়।

নির্বাচনের পর আরেক চমক ছিলো শহীদ ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম যখন সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন।

এরপর দেশের রাজনীতির চমক এই সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুল আবারও আলোচনায় আসেন গত ফেব্রুয়ারিতে যখন কুয়েতের একটি সংবাদপত্রে বাংলাদেশি মানবপাচারকারীদের নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে।

যাকে পরে ভুয়া সংবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

রোববার শহীদ ইসলাম পাপুল আবারো আলোচনায় যখন বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কুয়েতি সংবাদপত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদ প্রকাশ করা হয় যে শহীদ ইসলামকে ‘ অর্থ ও মানব পাচারে’ জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করেছে কুয়েতের পুলিশ। সবশেষে মঙ্গলবার মধ্যেপ্রাচ্যের প্রভাবশালী মিডিয়া গালফনিউজ জানায় এমপি পাপুলকে কুয়েত সিআইডি রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে আটক রাখার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে বলেও খবর এসেছে।

Print Friendly, PDF & Email