‘জ্বিনের বাদশা’র জন্য বাড়ি বিক্রি করলেন নিঃসন্তান নারী

12সিলেট : সিলেট নগরীর একটি হোটেল থেকে ১৬ ভরি স্বর্ণসহ এক ‘জ্বিনের বাদশা’কে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আটক হওয়া ওই জ্বিনের বাদশার নাম মো. নূরে আলম (৩৮)। তিনি নগরীর ভাতালিয়ার মৃত হাজী নাছির উদ্দিনের ছেলে। নূরে আলম দেশের বিভিন্ন মাজারে মাজারে ঘুরে সাধারণ মানুষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে প্রত্যারণা করে থাকে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর পুলিশ এক ই-মেইল বার্তায় বাংলামেইলকে এমন তথ্য জানিয়েছে। পুলিশ জানায়, মো. নূরে আলম নিজেকে একজন পীর হিসেবে জনগণের মধ্যে পরিচিত করার চেষ্টা করে। গত কয়েকমাস ধরে সে তার মোবাইল থেকে প্রতিদিন অনবরত কয়েকশ অজ্ঞাত নম্বরে কল করতে থাকে। এর মধ্যে যাকে তার কাছে সুবিধাজনক মনে হয় তার সাথে সে কথাবার্তা চালিয়ে যায় এবং বিভিন্নভাবে প্রতারিত করার চেষ্টা করে।

সর্বশেষ ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ঝিলটুলি মোল্লাবাড়ী এলাকার সাবেরা সুলতানা লাইজু (৩৯) নামের এক গৃহবধূর সাথে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় মো. নূরে আলমের। এ সময় নূরে আলম নিজেকে ‘জ্বিনের বাদশা’ পরিচয় দিয়ে লাইজুর সাথে প্রতিদিন অনেকক্ষণ ধরে মোবাইলে কথাবার্তা চালিয়ে যায় ও বিভিন্ন রকম আধ্যাত্মীক কথা, গজল, কোরআনের আয়াত, ইসলামিক কবিতা প্রভৃতি শোনায়।

একপর্যায়ে লাইজুকে সম্মোহিত করে ফেলে। লাইজু নূরে আলমকে জানায় যে, তার কোনো সন্তান নেই এবং এ নিয়ে সে বেশ অশান্তিতে রয়েছে।

তখন নূরে আলম লাইজুকে তাবিজ-কবজের মাধ্যমে সন্তানের ব্যবস্থা করে দিবে বলে আশ্বস্ত করে। এছাড়াও লাইজুকে তার সমস্ত স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে ঢাকায় গাবতলী বাস টার্মিনালে দেখা করতে বলে। নূরে আলম বলে যে, স্বর্ণালঙ্কারে দোয়া-দুরূদ এবং ঝার-ফুক দিলে লাইজু সন্তানের মা হতে পারবে।

লাইজু সরল বিশ্বাসে ঢাকা গিয়ে সন্তানের আশায় নূরে আলমের হাতে সমস্ত স্বর্ণালঙ্কার তুলে দেয়। স্বর্ণ নেয়ার দুইদিন পর নূরে আলম আচার অনুষ্ঠানের জন্য লাইজুর কাছে আরো ২০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তার এবং তার পরিবারের ক্ষতি হবে বলে ভয় দেখায়।

এমতাবস্থায় ভীষণ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ লাইজু বাড়ি বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা জোগাড় করে এবং টাকা কোথায় দিবে বলে নূরে আলমকে মোবাইলে জিজ্ঞেস করে। তখন নূরে আলম তাকে সিলেট শাহজালাল (রহ.) মাজারে আসতে বলে।

একপর্যায়ে নূরে আলম লাইজুর সাথে ফোনে কথাবার্তা আগের চেয়ে অনেক কমিয়ে দেয়। তখন লাইজুর মনে একটু সন্দেহ দেখা দেয়। তাই লাইজু সিলেট এসে এসএমপির এডিসি (ডিবি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনকে বিষয়টি জানায়।

পরে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে লাইজু তার স্বামীসহ নূরে আলমের দেয়া নির্ধারিত স্থান তাজমহল হোটেলে অবস্থান করেন। এ সময় নূরে আলম তাদের কাছে পূর্ব নির্ধারিত ২০ লাখ টাকা দেয়ার জন্য চাপ দেয়। তখন ওঁৎ পেতে থাকা এসএমপির (ডিবি) টিম গিয়ে নূরে আলমকে হাতেনাতে আটক করে।

পুলিশ আরো জানান, আটকের পর নূরে আলম লাইজুকে ঠকিয়ে স্বর্ণালঙ্কার নেয়ার কথা স্বীকার করেছে। পরে ডিবির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনের নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রহমত উল্লাহ বাংলামেইলকে জানান, নূরে আলমের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

Print Friendly, PDF & Email