শিরোনাম :

  • বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

চামড়ার প্রকৃত মূল্য না পাওয়ার নেপথ্যে নজর দিতে হবে

দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্প চামড়া শিল্প। পোশাক শিল্পের পরই রফতানি আয়ের দিক থেকে চামড়া শিল্পকে বিবেচনা করা হয়। ২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর করে হেমায়েতপুরে ধলেশ্বরী নদীর তীরে নেয়া হয়।

এই শিল্পনগরীতে ১৫৪টি ট্যানারি রয়েছে এবং এর মধ্যে উৎপাদনে আছে ১২৫টি। পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তুলতে ২০১৪ সালের শুরুতে চামড়া শিল্পনগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। সিইপিটি নির্মাণের জন্য লক্ষ্যমাত্রা দেড় বছর ধরা হলেও গত ছয় বছরেও এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।

প্রকল্পটি শেষ করতে ইতোমধ্যে ১৪ বার সময় নেয়া হয়েছে। সবশেষ সময় পার হয়েছে গত জুন মাসে। তারপরও বহু প্রত্যাশিত এই সিইপিটির কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। ফলে ট্যানারিগুলোর বর্জ্য ধলেশ্বরী নদীতে ফেলা হয়।

শিল্পনগরীতে সিইপিটি না থাকায় দেশের চামড়া শিল্প বৈশ্বিক সংস্থার মান সনদ অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। ফলে বাংলাদেশ এখনও লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং আন্তর্জাতিক মান সংস্থা (আইএসও) থেকে কোনো সনদ পায়নি।

কোনো দেশের এই সনদ না থাকলে সেদেশের পণ্য আন্তর্জাতিক ক্রেতারা আমদানি করতে উৎসাহ দেখায় না। ফলে বিশ্ববাজারে আমাদের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এতে করে চামড়া শিল্পের আধুনিকায়ন ও রফতানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধক হল এ শিল্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ঘাটতি।

কয়েকটি স্থানীয় ব্র্যান্ডের জুতা বিদেশিরা ক্রয় করছে বটে; তবে দেশের ট্যানারিগুলো পরিবেশ দূষণ রোধ না করে ফিনিশড চামড়া উৎপন্ন করে বিধায় বাংলাদেশি লেদার ব্যবহার করে প্রডাক্ট তৈরি করলে তা নিতে বিদেশিরা আগ্রহবোধ করে না।

বিদেশি ক্রেতাদের শর্ত অনুযায়ী এসব পণ্য তৈরি করতে হলে তাদের পছন্দমতো দেশ থেকে চামড়া কিনে আনতে হবে। এক্ষেত্রে কোথা থেকে চামড়া কিনতে হবে সেই দেশের নাম ও কোম্পানির নাম বলে দেয় বিদেশি ক্রেতারা। এ কারণে এসব বড় বড় ব্র্যান্ড বাংলাদেশের চামড়া কাজে লাগাতে পারছে না।

ফলে দেশের ট্যানারিগুলোতে এখনও চামড়ার স্তূপ পড়ে আছে। এগুলোকে কোনো কাজে লাগাতে পারছে না ট্যানারিগুলো। এ কারণে দেশীয় ট্যানারি মালিকরা বেশি দামে চামড়া ক্রয় করতে আগ্রহী নন।

এক সময় ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের ফিনিশ্ড চামড়া ক্রয় করত। কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে তারা এখন অন্যত্র চলে গেছে। বাংলাদেশের নির্ভরতা বেড়েছে চীন, হংকংসহ কয়েকটি দেশের নন-ব্র্যান্ড ক্রেতাদের ওপর। এদিকে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীনের ফিনিশড পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমেছে।

ফলে সেখানকার ব্র্যান্ডগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে চামড়া ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে চীন। আর সুযোগ বুঝে অন্য ব্র্যান্ডগুলো সুবিধা নিচ্ছে। ফলে দেশে চামড়ার দাম ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।

কাজেই দেশে সাধারণ মানুষের চামড়ার প্রকৃত মূল্য না পাওয়ার পেছনের কারণ হল সিইটিপি স্থাপনের প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব, খামখেয়ালিপনা এবং এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় নেয়া। শিল্পনগরীতে দ্রুততম সময়ে সিইটিপি নির্মাণ সম্পন্ন করে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।