তিন বিভাগে পেট্রোল পাম্প ধর্মঘট, দুর্ভোগ

নিউজ ডেস্ক |

১৫ দফা দাবিতে খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে পেট্রোল পাম্পগুলোতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের একাংশের নেতারা এ ধর্মঘটের ডাক দেন।

ধর্মঘটের কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল নিতে না পেরে গাড়িচালক ছাড়াও কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। ধর্মঘট চলতে থাকলে এই তিন বিভাগে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বোরো মৌসুম ও শীতকালীন সবজি চাষের এই সময়ে জ্বালানি তেল না পেলে জমিতে সেচ কাজ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ১৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- জ্বালানি তেল বিক্রির ক্ষেত্রে প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের কমিশন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নাকি পরিবেশক পরিশোধ করবেন তা সুনির্দিষ্ট করা, পেট্রোল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণের প্রথা বাতিল করা, পেট্রোল পাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণের প্রথা বাতিল করা ইত্যাদি।

ধর্মঘট আহ্বানকারী পক্ষের নেতা বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান রতন বলেন, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

তিন বিভাগে ধর্মঘট ডাকা হলেও এর বিরোধিতা করেছেন বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যাঙ্কলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা। বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ট্যাঙ্কলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, ধর্মঘট আহ্বানকারীদের সারাদেশে কোনো কর্মকাণ্ড না থাকায় তারা শুধু তিনটি বিভাগে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

এদিকে খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ধর্মঘট কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সমকালের ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

খুলনা: রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়াঅনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের কারণে খুলনা মহানগরীর খালিশপুরে অবস্থিত পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল ডিপো থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন এবং খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এর ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন যানবাহন চালকরা।

রোববার সকাল ১০টায় নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় মেট্রোপলিটন ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, পেট্রোল পাম্প বন্ধ রয়েছে। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার নিয়ে অনেকে তেল নিতে আসছেন, কিন্তু তেল না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তারা।

মাগুরা: ধর্মঘটের কারণে মাগুরার পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এতে স্থানীয় সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা বিপাকে পড়েছেন।

তবে ধর্মঘটের কারণে শহরের মা ফাতেমা পেট্রোল পাম্পে সাধারণ যানবাহনে জ্বালানি তেল দেওয়া না হলেও জেলার সরকারি গাড়িতে প্রকাশ্যে তেল দিতে দেখা গেছে। এ নিয়ে সাধারণ যানবাহন চালকেদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে পাম্প কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রথম দিকে দুই-একটি সরকারি গাড়িতে তেল দিলেও এখন তারা আর কাউকে তেল দিচ্ছেন না।

রাজশাহী: রাজশাহী বিভাগে সকাল থেকে সব পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। সকালে কয়েকজন মোটরসাইকেল ও গাড়িচালক জানান, হঠাৎ করে ধর্মঘট ডাকায় তারা আগে জ্বালানি নিতে পারেননি। এ কারণে তারা অনেকেই মাঝপথে এসে বিপাকে পড়েছেন। এ ছাড়া তেল না পেয়ে অনেক যানবাহন ছেড়ে যেতে পারেনি। এভাবে ধর্মঘট চলতে থাকলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বগুড়া: ধর্মঘটের কারণে বগুড়ায় পেট্রোল ও ডিজেলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যানবাহন চালক ও মোটরসাইকেল আরোহীরা।

জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যাংকলরী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের স্থানীয় নেতারা বলছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত তারা তেল উত্তোলন, পরিবহন ও বিপণন কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন। জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী পরিবহন মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের যানবাহনে যে পরিমাণ তেল রয়েছে তাতে হয়তো একদিন চলবে। কিন্তু যদি তেল বিক্রি অনির্দিষ্টকাল ধরে বন্ধ রাখা হয় তাহলে জ্বালানি তেল নির্ভর সব যানবাহনের চাকা বন্ধ হয়ে যাবে।

রোববার সকালে বগুড়া শহরে এবং শহরতলীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির সমর্থনে সবগুলো পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা হয়েছে এবং জ্বালানি তেলবহনকারী ট্যাংকলরিগুলোও চলাচল করছে না। বগুড়া শহরের শতাব্দী ফিলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী এম এ মোমিন দুলাল জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা তেল উত্তোলন, পবিহন ও বিপণন বন্ধ রাখবেন।

শহরের মাটিডালি এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পে মোটরসাইকেলে জ্বালানি নিতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আইয়ুবুর রহমান জানান, কোনো পেট্রোল পাম্পেই তেল বিক্রি করা হচ্ছে না। এতে তিনি বিপাকে পড়েছেন।

রংপুর: ধর্মঘটের কারণে রংপুরে কোনো পাম্প থেকে বিক্রি করা হচ্ছে না জ্বালানি তেল। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পাম্পে তেল নিতে আসা মানুষজন।

রংপুর পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, রংপুর জেলায় ৫৯টি জ্বালানি তেলের পাম্প রয়েছে। পাম্পগুলো থেকে রংপুর, ঢাকা, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়গামী সহস্রাধিক বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকারসহ মোটরসাইকেল চালকরা জ্বালানি তেল নেন। তবে ধর্মঘটের কারণে পাম্পগুলো থেকে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, বাস চালকরা জ্বালানি তেল নিতে না পেরে ঘুরে যাচ্ছেন। অনেক বাসচালক পাম্পগুলোতেই বাস রেখে অলস সময় পার করছেন। অনেকে প্রয়োজনীয় কাজে বেরিয়ে তেল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রোববার সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত নগরীর সালেক পেট্রোল পাম্প, রহমান পেট্রোলিয়াম, ইউনিক পেট্রোলিয়াম, মিজান ফিলিং স্টেশন, চাঁদ পেট্রোলিয়াম, নর্দান পেট্রোলিয়াম পাম্পগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কোনো পাম্পেই জ্বালানি তেল বিক্রি করা হচ্ছে না। দাবি সংবলিত পোস্টার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে পাম্পগুলোতে। সকাল ১০টায় নগরীর মডার্ন মোড়স্থ চাঁদ পেট্রোলিয়াম পাম্পের সামনে বেসরকারি একটি কোম্পানিতে কর্মরত সেকেন্দার আলী (৪১) বলেন, ‘আমি একটি কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ের কাজ করি। প্রতিদিন মোটরসাইকেলে বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। হঠাৎ করে পেট্রোল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ায় সমস্যায় পড়েছি। তেল ছাড়া মোটরসাইকেল চালাবো কীভাবে। মার্কেটগুলোতে সময়মত না পৌঁছাতে পারলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’

মোটরসাইকেলে তেল নিতে আসা মোকছেদুল ইসলাম (৩৫) নামে আরেকজন বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র‌্যাবের গাড়িসহ অ্যাম্বুলেন্স চলতে হলেও জ্বালানি তেলের প্রয়োজন রয়েছে। প্রচারণা ছাড়াই হঠাৎ করে তেল বিক্রি বন্ধ করে আমাদের বিপদে ফেলেছে পাম্পগুলো। আমি মনে করি, সরকারকে দ্রুত এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জ্বালানি তেল ছাড়া তো সব কিছুই অচল।’

স্থানীয় চাঁদ পেট্রোল পাম্পের কর্মচারী আসাদ বলেন, ‘১৫ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা সকাল ৬টা থেকে কাউকে তেল দিচ্ছি না। গতকাল (শনিবার) রাতে অনেকে লাইন ধরে পেট্রোল-ডিজেল নিয়ে গেছে।’

রংপুর পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সোহবাব চৌধুরী টিটু বলেন, ‘রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় কোনো পাম্প থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। আমাদের দাবিগুলো মানা হলেই আমরা কর্মবিরতি তুলে নেব। আশা করি, সংশ্লিষ্টরা দ্রুতই আমাদের দাবি মেনে নেবেন।’

ঠাকুরগাঁও: রোববার সকাল ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ডিজেল ও পেট্রোল চালিত যানবাহনের মালিকরা। জ্বালানি না পেয়ে পরিবহন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জেলার ৫ উপজেলায় পেট্রোল পাম্প রয়েছে ৩২টি। সকাল থেকে এসব পাম্পে জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email