দ্বিতীয়বার পরীক্ষা নিয়ে আইইডিসিআর-জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির মতানৈক্য

নিজস্ব প্রতিবেদক।

করোনা পজিটিভদের দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে আইইডিসিআর ও জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির মধ্যে।

 সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে করোনা পজেটিভদের দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই, আর জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র বিশেষজ্ঞ মনে করেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীর দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে।

আইইডিসিআর বলছে, করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় টানা তিন দিন প্যারাসিটামল ছাড়া যদি শরীরে জ্বর না আসে তাহলে ধরে নিতে হবে তিনি সুস্থ হয়েছেন। অর্থাৎ তিনি করোনা নেগেটিভে পরিণত হয়েছেন। সুতরাং ওই ব্যক্তির নেগেটিভ ফল পাওয়ার জন্য পুনরায় নমুনা পরীক্ষার দরকার হবে না। এ ছাড়া অন্যান্য সাধারণ উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষার প্রয়োজন হবে না।

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।

আর শুক্রবার পরামর্শক কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলছেন, ‘এটা আইইডিসিআর বলে কীভাবে? কোন বা কার মতামতের ভিত্তিতে তারা এ ধরনের গাইড লাইন চূড়ান্ত করেছে? অনেকের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার নমুনা পরীক্ষার সুযোগ থাকতেই হবে। নতুবা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। জ্বর না থাকলেও কারো যদি কাশি বা অন্য উপসর্গ থাকে তাঁর ক্ষেত্রে কী হবে তা পরিষ্কার করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করতে হবে, নাকি হবে না- সেই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি চিকিৎসকদের হাতে থাকতে হবে।’

যদিও গতকাল বৃহস্পতিবার ডা. এ এস এম আলমগীর বলেছিলেন, ‘তবে করোনা আক্রান্ত রোগী যদি নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকেন; তাহলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে সেই রোগীর নমুনা পরীক্ষার জন্য অনুমতি দিতে পারেন।’

এ ব্যাপারে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলছেন, ‘আইসিইউতে থাকে অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ রোগী। তাঁর নমুনা পরীক্ষা করে কী এমন ফল পাওয়া যাবে? করোনা থেকে সেরে যিনি বাইরে যাবেন বা কাজে যোগদান করবেন তাঁর ক্ষেত্রে পরীক্ষা করাটা জরুরি। দেখা গেল একজন রোগীর শরীরের ভাইরাসটি রয়েছে এখনো। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা না করার কারণে তিনি বাইরে গেলেন এবং ভাইরাসটি ছড়ালেন। তাহলে কী দাঁড়াল বিষয়টি?’

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে আইইডিসিআর থেকে বলা হচ্ছিল, করোনা আক্রান্ত রোগী যদি পর পর দুইবার নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে নেগেটিভ আসে তাহলেই তাঁকে করোনামুক্ত বলে ঘোষণা করা হবে। কিন্তু নতুন গাইড লাইনের নিয়ম অনুযায়ী আইইডিসিআর আগের সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর যদি প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন ছাড়াই টানা তিন দিন জ্বরমুক্ত থাকেন তাহলে ধরে নেওয়া হবে তিনি সুস্থ। এমন অবস্থার রোগীকে নমুনা সংগ্রহের দিন থেকে ১৩ দিন পর তাঁকে করোনা নেগেটিভ হিসেবে গণ্য করা হবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরাও তাই জানাচ্ছেন। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই হিসাব ১৩ দিন না হয়ে ১৪ দিন ধরা হবে বলে নতুন গাইডলাইনে চূড়ান্ত করা হয়েছে।’

ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘এদিকে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর যদি ১৪ বা ১৫ দিনের মাথায় সেরে যায় এবং তারপরের তিন দিন যদি প্যারাসিটামল ছাড়া জ্বর না আসে সেক্ষেত্রে তখন থেকে অর্থাৎ নমুনা সংগ্রহের দিন থেকে ১৭ বা ১৮ দিন পর তিনি সুস্থ বলে গণ্য হবেন। মূল কথা হচ্ছে, আগে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে করোনা নেগেটিভ বলে গণ্য করতে হলে যে পরপর দুটি পরীক্ষায় যে নেগেটিভ আসতে হতো, আগামীতে আর সেটির দরকার থাকছে না।’

ডিএন/সিএন/জেএএ

Print Friendly, PDF & Email