নিজদলে বিরোধীতার সম্মুখীন চীনের প্রেসিডেন্ট

দেশনিউজ ডেস্ক।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে বিরোধীতা বাড়ছে কমিউনিস্ট পার্টিতে। অনেকেই দল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চাইছেন। কেউ কেউ বলছেন, চীনকে ‘বিশ্বের শত্রু’তে পরিণত করেছেন আজীবন ক্ষমতাপ্রাপ্ত শি। আভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরেছে বৃটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
খবরে বলা হয়, চীনের অভিজাত সেন্ট্রাল পার্টি স্কুলের সাবেক এক অধ্যাপিকা সম্প্রতি বিরল এক ঘটনায় শি’র তীব্র সমালোচনা করেছেন। চাই শিয়া নামের ওই অধ্যাপিকা শি’র বিরুদ্ধে ‘চীনকে খুন’ করার অভিযোগ এনেছেন। দাবি করেছেন, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি থেকে অনেকেই বেরিয়ে যেতে চান।

সোমবার এক এক অডিও রেকর্ডিংয়ে দেওয়া মন্তব্যের জেরে চাইকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। গত জুনে শি’র সমালোচনা করে ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন চাই। তা অনলাইনে ফাঁস হয়ে যায়।

তিনি ১৯৯২ সাল থেকে পার্টি স্কুলে অধ্যাপিকা হিসেবে যোগ দেন। স্কুলটি সম্প্রতি তার মন্তব্য নিয়ে প্রকাশিত এক নোটিশে বলেছে, তার মন্তব্য ‘দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ’ করেছে ও সেগুলো ‘গুরুতর রাজনৈতিক সমস্যায়’ ভরপুর।

দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক বক্তব্যে চাই বলেন, বহিষ্কৃত হয়ে তিনি খুশিই হয়েছেন। তিনি বলেন, শি’র শাসনামলে চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি চীনের অগ্রগতির পক্ষের শক্তি হিসেবে কাজ করছে না। আদতে, এটা চীনের অগ্রগতি ঠেকিয়ে রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করি এই দল থেকে আরো অনেকে বের হয়ে যেতে চান। অনেকে দল ছেড়ে যেতে চান। আমি কয়েক বছর আগেই দল ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলাম, যখন এর ভেতরে আমার কথা বলার সুযোগ ছিল না, যখন আমার কন্ঠস্বর পুরোপুরি চেপে রাখা হয়েছিল।

চীনের রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন চাই। তার কাছ থেকে এ ধরনের সমালোচনা চীনের নেতৃত্বের জন্য বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মাও সেতুং, হু জিনাতো, এমনকি শি জিনপিংও সেন্ট্রাল পার্টি স্কুলের প্রধান ছিলেন।

প্রাথমিকভাবে গত জুনেই তার অডিও প্রকাশের পরপর গার্ডিয়ানকে বক্তব্য দিয়েছিলেন চাই। তবে সে সময় তার পরিবার অডিও রেকর্ডিং নিয়ে হুমকি পাচ্ছিল বলে ওই বক্তব্য প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছিলেন চাই। সে সময় দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, চীনকে বিশ্বের শত্রু বানিয়েছেন শি। এদিকে, মঙ্গলবার চাই জানান, এখন আর তার বক্তব্য প্রকাশ নিয়ে সমস্যা নেই। তিনি নিজের ইচ্ছামতো বক্তব্য দিতে পারবেন।

তিনি বলেন, দলের ভেতর শি’র বিরুদ্ধে বিরোধীতা বাড়ছে। তবে ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। এমন পরিবেশে শি’র অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা ও প্রত্যেক বড় সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাই করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা সৃষ্টি করেছিল।

প্রসঙ্গত, বেইজিং করোনা ভাইরাস নিয়ে তথ্যগোপনের দায় স্থানীয় কর্মকর্তাদের ঘাড়ে চাপিয়েছিল। তবে চাই বলেন, শি ৭ই জানুয়ারি থেকেই সংক্রমণের ব্যাপারটি জানতেন। কিন্তু তিনি মহামারির ঘোষণা দেন ২০শে জানুয়ারি। এজন্য তিনি কেন দায়ভার নেবেন না?

শি’কে নিয়ে চাই আরো বলেন, তার বিরোধীতা করার মতো কেউ নেই। এটা তার ক্ষমতাকে অসীমতা দান করেছে। তিনি বিশ্বকে শত্রু বানিয়েছেন। নিজদেশে সকল বড় বিষয়ে তার উপর ছেড়ে দেওয়া হয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। অন্য কথায়, দেশীয় বা আন্তর্জাতিক ইস্যু, তাকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। এরকম হলে তার বিচারবুদ্ধি ও সিদ্ধান্ত ভুল হওয়াটা অনিবার্য।

ডিএন/আইএন/জেএএ/১০:৫১পিএম/১৮৮২০২০২৯

Print Friendly, PDF & Email