৪ দিন পর পাল্টা মামলা

মারধর করে ফোন-মানিব্যাগ-ঘড়ি ছিনিয়ে নিয়েছেন নুরসহ ২৯ জন!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

হত্যার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মারধর এবং মোবাইল ফোন-মানিব্যাগ-ঘড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ডিএম সাব্বির হোসেন।

গত ২৫ ডিসেম্বর শাহবাগ থানায় এজাহার দাখিল করেন সাব্বির। ২৬ ডিসেম্বর তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। পেনাল কোডের ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৫০৬/১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে ভিপি নুরসহ অন্যদের বিরুদ্ধে।

এজাহারে সাব্বির দাবি করেছেন, ‘গত ২২ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্যে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মামুন ও বুলবুল গ্রুপের ৩৫ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে টেলিনর (মোবাইল ফোন সেবাদানকারী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান) কর্তৃক রাষ্ট্রপতি বরাবর উকিল নোটিশ দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করে মামুন ও বুলবুলের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা মিছিলসহ মধুর ক্যান্টিনের উদ্দেশে রওনা দেয়। আমিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ আরও ৩০-৩৫ জন স্যার ফজলে হাসান আবেদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে বেলা ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে পৌঁছাই। সেখানে ডাকসু ভবনের সামনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মী এবং ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ তার অনুসারী ৪০-৪৫ জন নেতাকর্মীর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। তখন সঞ্জিত দাস, সাদ্দাম হোসেনসহ আমাদের দেখে নুর এবং তার সঙ্গে থাকা অন্য নেতাকর্মীরা অশালীন, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিতে থাকে। সেখানে ভিপি নুরের সঙ্গে বহিরাগত ২০-২৫ জনকে দেখতে পাই। একপর্যায়ে এ ধরনের স্লোগান কেন দিচ্ছে জানার জন্য সঞ্জিত দাস, সাদ্দাম হোসেন ভিপি নুরের কাছে গেলে নুরসহ অন্য নেতাকর্মীরা আবারও ছাত্রলীগকে নিয়ে অশালীন, উসকানিমূলক স্লোগান দেয় এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ মারধর করতে উদ্যত হয়। তখন বহিরাগতরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ডাকসু ভবনে অনধিকার প্রবেশ করে।

ঘটনার বর্ণনায় তিনি আরও বলেন, ‘তখন পরিস্থিতি খারাপ দেখে সঞ্জিত দাস এবং সাদ্দাম হোসেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় ভিপি নুরসহ অন্যরা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এএসএম আল সনেট, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত তূর্য, জিয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মাহিম, মাহবুব হাসান নিলয়, ইয়াদ আল রিয়াদ, ইমরান সরকারসহ আরও অনেকে গুরুতর জখম হয়। আমি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করি।’

সাব্বির এজাহারে দাবি করেন, ‘আমাদের মারপিটের সময় আমার কাছ থেকে মানিব্যাগ এবং আরও অনেকের মোবাইল ফোন ও হাতঘড়ি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। দুপুর দেড়টার দিকে প্রক্টর গোলাম রাব্বানীসহ প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে এসে তাদের নিবৃত্ত করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।’

এ মামলা প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ডিএম সাব্বিরের দায়ের করা মামলাটি আজ নথিভুক্ত করা হয়েছে। আমরা মামলাটি তদন্ত করছি।’

মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন–ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হোসেন, মুহাম্মদ রাশেদ খান, এপিএম সুহেল, আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম-আহ্বায়ক মশিউর রহমান, আবু হানিফ, আমিনুল ইসলাম, তুহিন ফারাবি, মেহেদী হাসান, নাজমুল হাসান, আয়াতুল্লাহ বেহেশতী, রবিউল হোসেন, আরিফুর রহমান, বিন ইয়ামিন মোল্লা, তরিকুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ হিল বাকী, আকরাম হোসেন, আসিফ খান, সানাউল্লাহ, আতাউল্লাহ, শাকিল মিয়া, হাসানুল বান্না, রবীরুল ইসলাম, রাজ, আরিফুল ইসলামসহ অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জন।

গত ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে মারধরের এ ঘটনায় ২৪ ডিসেম্বর শাহবাগ থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক ও নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রইচ উদ্দিন।

ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন–মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাবি শাখার সভাপতি এএসএম সনেট, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য, এএফ রহমান হল শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ইমরান সরকার, কবি জসীমউদদীন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াদ আল রিয়াদ (হল থেকে অস্থায়ীভাবে বহিষ্কার), জিয়া হল শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম মাহিম, মাহবুব হাসান নিলয়।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ডিসেম্বর দুপুরে ডাকসু ভবনে নিজ কক্ষে ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলার শিকার হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরপর গায়েব হয়ে গেছে ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ। কারা এই ফুটেজ নিয়ে গেছে প্রশাসনসহ কেউই বলতে পারছে না। হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগ এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ ভিপি নুরের। তবে প্রথমদিন থেকেই ছাত্রলীগ হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে। এ ঘটনার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email