প্রধানমন্ত্রীর কাছে ডা. জাফরুল্লাহর খোলা চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সোমবার (২৭ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠিটি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু।

শুরুতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন নাগরিকের খোলা চিঠি।

অতীতে আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এই খােলা চিঠি লিখছি। আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কেউ না কেউ আমার এই খােলা চিঠিটি আপনার নজরে আনবেন এবং আমি একটি প্রাপ্তি স্বীকার পত্র পাব। প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটাই একজন নাগরিকের আকাঙ্ক্ষা।

পৃথিবীর কোথাও যে নিয়ম নেই

রোগীর হাসপাতালে ভর্তির জন্য কোনো দেশে তাদের প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমােদন লাগে না। করোনা আক্রান্ত হােক অথবা করোনা মুক্ত অন্য কোনো রোগাক্রান্ত রােগীর হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত দেন উক্ত হাসপাতালের পরিচালক। কার্যত ডিউটিরত চিকিৎসক, নার্স বা ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার। কিন্তু বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রােগী হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবে কিনা তার সিদ্ধান্ত দেন স্বাস্থ্য অধিদফতর, রোগী নিজে বা চিকিৎসক নন। কেন্দ্রিকতার এরূপ নিদর্শন পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। অপূর্ব সিদ্ধান্ত। মারহাবা। কেন্দ্রিকতা দুর্নীতির সহজ বাহন।

হাসপাতাল অনুমোদিত না হবার কারণ সমূহ

বাংলাদেশের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন নেই, এমনকি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের, গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারেরও।

আলাদা আলাদা অনুমোদন মানে আলাদা তদবির ব্যয়, আলাদা দরাদরি। অবশ্য এর মধ্যে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের দক্ষতা প্রদর্শন মিডিয়ায় আলােড়ন আনন্দ সৃষ্টি করে বটে।

হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি, রােগ নির্ণয় কেন্দ্র অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এমন নিয়মাবলী করেছেন যা পূরণ প্রায় অসম্ভব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্থির করে দেন কয়টি পায়খানা, প্রস্রাবখানা থাকবে, কয়জন ডিপ্লোমা পাস নার্স থাকতে হবে।

চাঁদাবাজির সরকারি নাম লাইসেন্স ফি

প্রত্যেক হাসপাতালের সাথে আলাদা আলাদা ল্যাবরেটরি, আলাদা রােগ নির্ণায়ক বিভাগ, দন্ত বিভাগ, আলাদা রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের লাইসেন্স নিতে হয়, যার বর্ধিত হার নিম্নরূপ-

ভবিষ্যতে হয়তাে বা হাসপাতালের বিভাগের সংখ্যা আরও বাড়বে, যথা- বায়োকেমিস্ট্রি, সেরোলজি, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ইমিউনোলজি, হিস্টোপ্যাথলজি এবং আরও কত কি!!

কেবল হাসপাতালের অনুমোদন থাকলে চলবে না, হাসপাতালের প্রত্যেক বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা অনুমোদন থাকতে হবে। অনুগ্রহ করে সরকারি চাঁদা কত বেড়েছে তা লক্ষ্য করুন। হয়রানি ও দুর্নীতি একত্রে চলাফেরা করে। একটা উদাহরণ দেই। রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের জন্য অনুমোদন চাইতে হলে রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ পরিচালনার জন্য রক্ত পরিসঞ্চালন সংক্রান্ত দুই বৎসর মেয়াদি একটা ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসক থাকতে হবে। বাংলাদেশে ২০০০ এর বেশি রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র আছে। উক্ত বিষয়ে দুই বৎসর মেয়াদি ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত চিকিৎসক আছেন ৮০ এর অনধিক। এ বিভাগে উচ্চ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অন্ততপক্ষে ১০ জন চিকিৎসক অবসর জীবনযাপন করছেন। ৬০ বৎসর অধিক বয়সী চিকিৎসকদের চাকরি করার বিধান নেই। চিকিৎসকগণরা তাে বিচারপতি বা সিনিয়র সচিব নন। রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগে ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের জন্য ব্যবসায়িক দিক থেকে আকর্ষণীয় নয় বলে, তরুণ চিকিৎসকরা দুই বৎসর ব্যয় করে এই উচ্চ বিদ্যা অর্জনে আগ্রহী নন। রক্ত পরিসঞ্চালনে তিন মাসের প্রশিক্ষণ অধ্যয়নই যথেষ্ট।

বিগত ২০ বৎসর যাবৎ আমি বলে আসছি পুরানাে সহকর্মী এবং অন্য সকল রাজনীতিবিদদের সঙ্গে নিয়ে আপনাকে অগ্রসর হতে হবে। তাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে সুশাসনের লক্ষ্যে আগামী নির্বাচন হবে সুষ্ঠ পরিচ্ছন্ন নির্বাচন। কোনো চালাকির নির্বাচন নয়, দিনের নির্বাচন রাতে নয়। হয়তাে বা সফলতা আপনার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।

ঈদের দিন সময় করে সুস্বাস্থ্য কামনা করতে খালেদা জিয়ার বাসস্থানে যান, এতে দেশবাসী খুশি হবে এবং বঙ্গবন্ধু হেসে বলবেন, ভালো করেছিস মা।

আগামী মাসে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সুবিধা নিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সুবিধা সমেত করােনা সাধারণ ওয়ার্ড চালু করবে ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। রোগীদের সর্বসাকুল্যে দৈনিক খরচ পড়বে তিন হাজার টাকার অনধিক।

আপনি কি এই অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ সুবিধা সমেত জেনারেল ওয়ার্ডের উদ্বোধন করবেন?

সুস্থ থাকুন, আমলা ও গোয়েন্দাদের থেকে সাবধানে থাকুন, রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে ডেকে নিন।

ঈদের শুভেচ্ছান্তে,

জাফরুল্লাহ চৌধুরী

ডিএন/পিএন/জেএএ/৪:৪০পিএম/২৭৭২০২০২২

Print Friendly, PDF & Email