১১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে ব্যক্তিগতভাবে সাবধান করেছিলাম: রাষ্ট্রপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক।

নিজেদেরকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

শনিবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশনে দেয়া ধারণকৃত এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু এবং তার হত্যার কথা স্মরণ করতে গিয়ে এ আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, ‘নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেকোনো দেশের জন্যই সম্পদ। তাই তাদেরকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। নিজের দেশ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে হবে। বাংলাদেশকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। আর বঙ্গবন্ধুকে জানতে হলে আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখন আর শুধু একটি নাম নয়। বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান, একটি কালজয়ী ইতিহাস ও একটি সত্ত্বা। বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু রেখে গেছেন তার রাজনৈতিক দর্শন, নীতি ও আদর্শ যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সকলকে আলোর পথ দেখাবে, উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে সাহস যোগাবে।’

জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি চাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে বেঁচে থাকুক, কারণ আমাদের জাতীয় ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান রয়েছে।’

বঙ্গবন্ধুকে তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কারাবাসসহ অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিটি আন্দোলন ও সংগ্রামে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়ন ও অগ্রগিতর ‘রোলমডেল’। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ সকল খাতেই এগিয়ে যাচ্ছে।

‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে দেশ তার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলায়’ পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছেন আর তারই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হবে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ-বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী এটাই সকলের প্রত্যাশা,’ বলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এমপি হোস্টেলে থেকে সকালে খবরটি শুনে কত যে কেঁদেছি! আক্ষেপ জেগেছে, বঙ্গবন্ধুকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সাবধান করেছিলাম। যতদূর মনে পড়ে, পঁচাত্তরের ১১ আগস্ট বিকেলে গণভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম, আমার কিছু একান্ত কথা আছে।’

১৫ আগস্টের আগের সময়ের কথা বলতে গিয়ে প্রবীণ এ নেতা এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আবদুল হামিদ বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠেছিল খারাপ কিছু একটা হতে চলেছে। ১৯৭৫ সালের ১১ আগস্ট বিকেলে গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করেছিলাম।’

‘বঙ্গবন্ধু আমাকে অপেক্ষা করতে বললেন… সন্ধ্যার পর গণভবনের বাগানে হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে জানতে চাইলেন, ‘কী বলতে চাস?’ আমি কিছু সন্দেহজনক ব্যাপার তাকে খুলে বললাম। বঙ্গবন্ধু হেসে বললেন, ‘একটু ঝামেলা ছিল, সব ঠিক হয়ে গেছে, চিন্তা করিস না,’ বলেছিলেন তিনি।

আবদুল হামিদ বলেন, ‘আশ্বস্ত হয়ে ফিরে এলাম। এটাই বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার শেষ দেখা, শেষ কথা। এখন বুঝতে পারি, কোনো কিছুই ঠিক ছিল না তখন। আমাদের অগোচরেই জাতির জনকের রক্তে কালো হাত রঞ্জিত করতে প্রস্তুত হচ্ছিল ঘাতকরা।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরাও যদি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগী হই, তাহলে নিশ্চয়ই এ দুর্যোগে থেকে দেশ মুক্ত হবে ইনশাল্লাহ্। কেটে যাবে অমানিশার অন্ধকার, আলোকিত হয়ে উঠবে সবার জীবন।’

রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছাত্রজীবন থেকেই গরীব ছেলেদের সাহায্য করতে মুসলিম সেবা সমিতি গঠন করেন। এছাড়া পঞ্চাশের মন্বন্তর, ১৯৪৭ সালের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গাসহ সকল প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে অনন্য নজীর সৃষ্টি করেছেন। আর এভাবেই বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর।’

এসময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

ডিএন/পিএন/জেএএ/১১:৩১পিএম/১৫৮২০২০২৭

Print Friendly, PDF & Email