ডাকসু ভিপির ওপর ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা করা হয়েছে : মাওলানা ইসহাক

নিজস্ব প্রতিবেদক |
খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, দেশে একদলীয় ফ্যাসীবাদী দু:সাশন চলছে। সরকার তার বিরুদ্ধে ন্যূনতম সমালোচনা সহ্য করতে পারছে না। সরকার ও ছাত্রলীগের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় ডাকসু ভিপিকে ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা করা হয়েছে। শিক্ষাঙ্গণগুলোতে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্মে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। লাগামহীন দ্রব্যমূল্য, খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণ বেড়েই চলছে। বর্তমান সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় তাই জনগণের কথা চিন্তা করে না। তারা নিজেদের আখের গোছানো আর ভারত তোষণে ব্যস্ত। খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের ১০ম অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

(২৫ ডিসেম্বর) বুধবার সকালে রাজধানীর গুলিস্তান কাজী বশির মিলায়তনে মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, নায়েবে আমীর- অধ্যক্ষ মাসউদ খান, মাওলানা সৈয়দ মজিবর রহমান, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, হাফিজ মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ, মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ, যুগ্মমহাসচিব- মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন, এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, শেখ গোলাম আসগর, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের নায়েবে আশীর অধ্যক্ষ শওকত হোসনে।
সাংগঠনিক সম্পাদক- ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সলের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত অধিবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এ কে এম আইউব আলী, কে এম নজরুল হক, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শফিউল অলম, মাওলানা তোফাজ্জ¦ল হোসাইন মিয়াজী, অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল হালিম, এডভোকেট মিজানুর রহমান, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, অধ্যাপক কে এম আলম, মাওলানা শামসুজ্জামান চেীধুরী, ডা: শরীফ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক, মাষ্টার সাইফ উদ্দিন, ডাঃ এ এ তাওসিফ, মাষ্টার সিরাজুল ইসলাম, বুরহান উদ্দিন সিদ্দকিী, অধ্যাপক আবু সালমান, মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুল ইসলাম, এবিএম সিরাজুল মামুন, মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, মাস্টার আবদুল মজিদ, মাওলানা সাঈদ আহমদ, মাওলানা সৈয়দ মুশাহিদ আলী, অধ্যাপক বজলুর রহমান, মাওলানা আইউব আলী, হাফেজ মাওলানা জিন্নত আলী, মাওলানা আহমদ বিলাল, অধ্যাপক মাওলানা খুরশীদ ্অলম, মাওলানা আজিজুল হক, আলহাজ্ব সদরুজ্জামান খান, মাওলানা এসএম সালাহ উদ্দিন, প্রভাষক মোঃ আবদুল করিম, অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব আলম, মাওলানা সাঈদুর রহামন, মুফতি শিহাবুদ্দিন, মাওলানা ওযায়ের আমীন, হাজী নূর হোসেন, মাওলানা কাজী আসাদ উল্লাহ, মাওলানা আবদুল হাই প্রমুখ ।

অধিবেশনে সংগঠনের সারাদেশের জেলা, মহানগরী, থানা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ডেলিগেটরা সংগঠন, আন্দোলন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে করণীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ও বক্তব্য প্রদান করেন।

মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, দেশ আজ এক মহাসংকটের মধ্যদিয়ে অতিক্রম করছে। একদিকে জনগণের বিরুদ্ধে অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ডাকসু ভবনের ভিতরে ঢুকে ডাকসুর ভিপিকে বর্বরোচিতভাবে পিটানো হয়েছে। অন্যদিকে দেশের মানুষের ঐক্য বিনষ্ট ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত চলছে। এসব ষড়যন্ত্র ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় আছেন বা ছিলেন তার জনগণের সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। আর মানুষের মনগড় মতবাদের দ্বারা জনগণের কল্যাণ সম্ভব নয় তা প্রমানিত সত্য। তাই আল্লাহ প্রদত্ত স্বাশত: জীবন বিধান ইসলাম তথা খেলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে।

সিনিয়র নায়েবে আমীর ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈকি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি শূন্যতা বিরাজ করছে। ধন বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। গুটি কয়েক লোকের কাছে সমস্ত সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে যাচ্ছে। সে অর্থও আবার বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া টাকার পাহাড় জমছে। মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বেগম পাড়া গড়ে উঠছে। দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে কোনভাবেই স্থিতিশীল উন্নয়ন সম্ভব নয়। দুর্নীতি- অন্যায়ের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

নায়েবে আমীল মাওলানা সেয়দ মজিবর রহমান বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে হিংসার রাজনীতি পরিহার করে পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলাকে একত্রে বসে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

নায়েবে আমীর মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ বলেন, অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে সবাইকে শান্তির ধর্ম ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে হবে। আজকে ভারতের আসামে যুগ যুগ ধরে বসবাসকারী মুসলমানদের বিতাড়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। কাম্মীরের বিশেষ মর্যাদা ক্ষুন্ন করে ভারত কাশ্মীরী মুসলমানদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। পার্শবর্তী দেশের এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে সরকারকে সরব ও প্রতিবাদী হতে হবে।

নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ইসলামের বিজয়ের বিকল্প নেই। মানব রচিব মতবাদ মানুষকে মানুষের দাসে পরিনত করে। মানুষের প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আদর্শ কায়েমের সংগ্রামে সবাইকে মাঠে নামতে হবে। সংগঠন তথা দ্বীনী আন্দোলনের কাজকে জোরদার করতে হবে।

নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ বলেন, বর্তমান সরকার রাতের আধারে ভোট চুরির সরকার। বর্তমান সরকার নতজানু সরকার। যারা দিল্লীতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতা ধরেন তাদের দ্বারা দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব নয়। এ সরকারকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন বলেন, অসীম ত্যাগ আর কুরবানীর বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। সাম্য, ন্যায়, মানবাধিকার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল সে লক্ষ্য আজও অর্জিত হয়নি। সমারিক শাসন, স্বৈরশাসন, একদলীয় শাসন আর ভোটবিহিীন সরকারের শাসনের যাতাকলে পিষ্ট দেশের জনগণ।
অধিবেশনে একটি শোক প্রস্তাবসহ রাজনৈতিক সংকট ও স্থবিরতা প্রসঙ্গ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতি প্রসঙ্গ, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন প্রসঙ্গ, শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন পরিস্থিতি প্রসঙ্গ, ভারতের সাম্প্রদায়িক এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন প্রসঙ্গ ও দেশে দেশে মুসলিম নির্যাতন প্রসঙ্গে ৭টি প্রস্তাব গ্রহীত হয়।

Print Friendly, PDF & Email