সক্রিয় দুই হাজার সন্ত্রাসী-গডফাদার নির্বাচনী মাঠে, আতঙ্কে ভোটাররা

3 Lawerনিজস্ব প্রতিবেদকঃ নির্বাচনের মাঠে দুই হাজার সন্ত্রাসী ও ক্যাডার সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে গডফাদার রয়েছে ৬৩৭ জন। তারা নির্বাচনী এলাকায় বোমাবাজি, ভয়ভীতি দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করার পাশাপাশি কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ভোটকেন্দ্রে বাধা প্রদান করতে পারে। এছাড়া সন্ত্রাসীরা সক্রিয় থাকলে নির্বাচনে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। কমিশন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান বরাবর পাঠানো হয়েছে। দুই পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ও আড়াইশ পৃষ্টায় সন্ত্রাসীদের পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান শুরু হচ্ছে।

সন্ত্রাসীরা যেন ভোটকেন্দ্রে দখল না করতে পারে তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিতে সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি। এছাড়া ক্যাডার মদদদাতা গডফাদারদের বিরুদ্ধ আইননানুগ ব্যবস্থা নিতেও বলেছে।

গত ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ক্যাডারদের ধরতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসিতে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই হাজার ২৯ জন সন্ত্রাসী ও ক্যাডার নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৫৬১, বিএনপির এক হাজার ১২১ জন, জাতীয় পার্টির ৪ জন, জামায়াত শিবির ২১১ জন, জেএসএসর ১০ জন, পিসিপির ১ জন এবং অন্যান্য ১২১ জন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সক্রিয় এসব সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতা বা গডফাদার রয়েছে ৬৩৭ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২১১ জন, বিএনপির ৩১২ জন, জামায়াত শিবির ৭৭ জন, পিসিপি ১ জন ও জেএসএস একজন এবং অন্যান্য ৩৫ জন।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী বা ক্যাডারদের আটক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য সুপারিশ করেছে। এছাড়া নির্বাচনের দিন সরকারবিরোধী সন্ত্রাসীরা বা ক্যাডার ও নেতাকর্মীরা যাতে কোনো কেন্দ্র দখল না করতে পারে তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। এছাড়া ক্যাডার মদদদাতা গডফাদারদের বিরুদ্ধ আইননানু ব্যবস্থা নিতেও বলেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেন হামলার শিকার না হন তার জন্য তাদের বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে বলা হয়েছে।

এদিকে বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র প্রায় ৩৫ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। এ নির্বাচনকে কেন্দ্রে করে দলীয় আধিপত্য বিস্তার, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া দলগুলোর বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আন্তঃকোন্দলের কারণে সহিংসতার ঘটনাও ঘটতে পারে।

এদিকে নির্বাচনী সহিংসতা ও গোলযোগ রোধে সাধারণ কেন্দ্র প্রতি ১৯ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ জন ফোর্স রাখা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে কমপক্ষে ৫ জন (অস্ত্রসহ) ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কমপক্ষে ৬ জন (অস্ত্রসহ) পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া বিজিবি, র‌্যাব, এবিপিএন, বিজিবি ও কোস্টগার্ড মোতায়েন থাকবে। তারা ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাঠে থাকবে তারা। নির্বাচনে ১০২ পৌরসভায় ১ প্লাটুন বিজিবি। উপকুলীয় ৬টি পৌরসভায় এক প্লাটুন করে কোস্টগার্ড মোতায়েন থাকবে।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতে মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া থাকবে পুলিশ, এপিবিন, আনসার, র‌্যাব, বিজিবি ও কোষ্ট গার্ড সমন্বয়ে মোবাইল টিম ও স্টাইকিং ফোর্স।

Print Friendly, PDF & Email