• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

ব্ল্যাকমেইল করছে : এমপি

‘আমি এমপি সাহেবের রক্ষিতা বা প্রেমিকা নই, দ্বিতীয় বউ’

রাজশাহী প্রতিনিধি |

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি এনামুল হকের স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন আয়েশা আক্তার লিজা নামে এক নারী। এরই মধ্যে ওই নারী এমপি এনামুলের সঙ্গে তার বিয়ের কাবিননামার ছবিসহ দুজনের একাধিক একান্ত মুহূর্তের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এছাড়া নিজের সংসার টিকিয়ে রাখতে লিজা প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেছেন। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক।

আয়েশা আক্তার লিজা নামে ওই নারীর দাবি, দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে তাকে স্বীকৃতি দিতে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি এনামুল হক টালবাহানা শুরু করেন। পরে উপায়ন্তর না পেয়ে ওই নারী তার ফেসবুক একাউন্টে একের পর এক পোস্ট দিতে শুরু করেন।

লিজা আয়েশা নামের ফেসবুক আইডিতে দেয়া পোস্টে বলা হয়েছে, ‘আপনারা সবাই ভাবছেন আমি থেমে গেছি। আমি থেমে যাই নাই সংসদ সদস্যের ভক্তরা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে জেলে দেয়া হবে এমনও বলছেন। এবং মাননীয় সংসদ সদস্য গতকাল আমাকে বলেছেন, ‘আমি গণমাধ্যমে এসেছি তাই আমাকে আজ উনি ডিভোর্স দিবেন। সব মিলিয়ে আমি মানুষিকভাবে ভেঙে পড়েছি। তবে আমি থেমে নেই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রীর কাছে যাবো এবং এর বিচার চাইবো। আপনারা সকলেই আমাকে সহযোগিতা করেছেন পাশে থেকেছেন আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

জানা গেছে, সোমবার ওই নারী তার ফেসবুক আইডিতে এই পোস্টটি করেন। ওই নারীর বাড়ি নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায়। এর আগে তার সঙ্গে এমপি এনামুলের একাধিক অন্তরঙ্গ ছবিও ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি। যা নিয়ে এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এর আগে আয়েশা আক্তার লিজা প্রথম তার ফেসবুক আইডিতে লিখেন, এমপি সাহেবের রক্ষিতা বা প্রেমিকা নই, দ্বিতীয় বউ আমি।’ এরপরই আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেন, ‘এমপি সাহেব আমার হাজবেন্ড এই কথাটা যদি কারো কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয় তারা বিয়ের কাগজ দেখতে পারেন।’

আয়েশা আক্তার লিজা জানিয়েছেন, ২০১২ সালে সাংসদ এনামুল হকের সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেমের সূত্রপাত হয়। ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল তারা ধর্মীয় বিধিমতে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের কারণে সামনের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে সমস্যা হতে পারে- এমন আশঙ্কায় তখন বিয়ে রেজিস্ট্রি করেননি এনামুল হক। এরপর আট বছর তারা সংসার করেন। লিজা বাগমারার এমপি এনামুল হকের বাড়িতে এবং রাজশাহী ও ঢাকার বাড়িতে এনামুল হকের সঙ্গে থেকে সংসার করেছেন। তবে কোনোদিন বাইরের কারো সামনে তাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেননি এমপি এনামুল হক।

লিজা অভিযোগ করেন, তার সঙ্গে এমপি এনামুল হকের বিয়ের ব্যাপারটি এনামুল হকের প্রথম স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরাও জানতেন। এরপর ২০১৫ সালে লিজা গর্ভবতী হলে এনামুল হক তার বাচ্চা নষ্ট করান। তখন এনামুল হক তাকে আশ্বাস দেন, আবারো এমপি হতে পারলে তাকে বাচ্চাও দেবেন ও স্ত্রীর স্বীকৃতিও দেবেন। সেজন্য লিজা অপেক্ষা করছিলেন। এমপির কথামতো, ২০১৮ সালের ১১ মে তারা রেজিস্ট্রি করে আবারও বিয়ে করেন। কিন্তু এরপরও এমপি এনামুল লিজাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেননি, বাচ্চাও দেননি।

উপরন্তু লিখিত বিয়ের দুই বছর পর হঠাৎ করেই লিজাকে তালাক দেয়া হয়েছে বলে প্রকাশ করেন এমপি এনামুল। কিন্তু ওই তালাকনামা ভুয়া বলে দাবি করেছেন আয়েশা আক্তার লিজা।

ওই নারীর দাবি, ওই ভুয়া তালাক নামায় তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। এ কারণে লিজা ফেসবুকে বিয়ের পক্ষে তার কাছে থাকা সবধরণের তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করে দেন।

লিজা ফেসবুকে লিখেছেন, আমি এমপি সাহেবের স্ত্রী। আমি তার সঙ্গে সংসার করতে চাই। ভুয়া তালাকনামার বিরুদ্ধে আমি মামলা করতে চাই। আমি নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। আমার স্বামীকে না পেলে আমি আইনের আশ্রয় নেব।

এদিকে রাজশাহীর ওই এমপির সঙ্গে আয়েশা আক্তার লিজার বিয়ের কাবিননামার কয়েকটি ছবি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এসব ব্যাপারে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক বলেন, ‘আমার সঙ্গে একসময়ে ওই নারীর বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল। এখন নাই। সম্পূর্ণ দেনমোহর পরিশোধ করে আইনগত ভাবে আমি তাকে তালাক দিয়েছি। কিন্তু তারপরেও তিনি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছেন। আমিও তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

বাচ্চা নষ্ট করার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিয়েই করেছি দুই বছর আগে। ভ্রুণ নষ্ট করার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই নারী মিথ্যা বলছেন। রাজনৈতিক ভাবে আমাকে হেয় করতেই তিনি এ কাজ করছেন। ওই নারী ব্ল্যাকমেইল করে এর আগেও বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ডিএন/আরসি/বিএইচ

Print Friendly, PDF & Email