আমীরের দায়িত্ব থেকে বিদায়

জামায়াতের ইতিহাসে মকবুল আহমাদের নাম সসম্মানে লেখা থাকবে

আলী আহমদ মাবরুর |♦|

আজ বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর নতুন আমীরের শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডাক্তার শফিকুর রহমান নবনির্বাচিত আমীরে জামায়াত হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তার জন্য দোয়া করছি আল্লাহ যেন চলার পথকে সহজ করে দেন। তার সামনে কঠিন অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ। আল্লাহ যেন এই চ্যালেঞ্জগুলো তাকে সফলতার সাথে অতিক্রম করার তৌফিক দান করেন। আমিন।

এই মুহূর্তে মকবুল চাচাকে নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছা করছে। আমার বাবা-চাচাদের মধ্যে তাকে আমরা সবচেয়ে সরল এবং মোখলেস মানুষ হিসেবে জানি। আমার শহীদ পিতা যখন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল তখন তিনিও সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মগবাজারে একই জায়গায় আমাদের দুই পরিবারের বসবাস ছিল দীর্ঘদিন।

এই নরম মনের মানুষটিকেই জামায়াতে ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম কঠিন একটি সময়ে দলের হাল ধরতে হয়েছে। আল্লাহর রহমতে যিনি আনুগত্য, বিশ্বস্ততা এবং সততার পরীক্ষাগুলো সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

মকবুল আহমাদ চাচার বড় সফলতা হল, প্রচারণাকে এড়িয়ে গিয়ে এই কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি সংগঠনের মূল কাঠামোকে ধরে রাখতে পেরেছেন। তিনি দলের অখন্ডতা ও একতাকে সমুন্নত রাখতে পেরেছেন। যতটুকু তিনি পারেননি, এটাকে আমি প্রতিকূল পরিস্থিতির পরিণতি এবং তার ব্যক্তিগত ফিতরাতের সীমাবদ্ধতা হিসেবেই বিবেচনা করতে চাই। তবে তার সরলতা, সততা ও খুলুসিয়াতের কোনো ঘাটতি ছিল না। মকবুল আহমাদ চাচা আজ দায়িত্ব ছেড়ে বিদায় নেয়ার ফলে রীতিমতো একটি প্রজন্মের অবসান ঘটে গেলো। একটি সফল অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো।

মকুবল চাচা সৌভাগ্যবান। তিনি তার পূর্বসূরী মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযমের মত আমীরে জামায়াতের শপথ অনুষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে পরবর্তী আমীরের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারলেন। এটা তার সরলতার এবং সাংগঠনিক পরম প্রতিদান।

তার গোটা পরিবার বিগত প্রায় এক যুগ ধরে নানাভাবে স্যাক্রিফাইস করে যাচ্ছে। আল্লাহ তাদের সবাইকে এর জন্য উত্তম বিনিময় দান করুন। আমার চোখে অনেক স্মৃতি ভাসছে। জামায়াত অফিস যখন খোলা ছিল, তিনি আমাদেরকে ডেকেছিলেন। আব্বাদের গ্রেফতার পরবর্তী সময়ে পরিবারগুলোর খোঁজ নিয়েছিলেন। তিনি এমন একজন মানুষ, যার কাছে গেলে রাগ, কষ্ট বা অভিমান সব চলে যায়।

সাংগঠনিক কাঠামো আর মান উন্নয়নের ব্যাপারে আপোষহীন এই মানুষটিকে আমরা মিস করব। আগামীতে যদি কখনো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস রচনা করা হয়, তাহলে মকবুল আহমাদের নাম সেখানে সম্মানের সাথে লেখা থাকবে।

মকবুল চাচা, আপনি ভালো থাকবেন। খুব ভালো। আল্লাহ তাআলা আপনাকে রহমতের চাদর দিয়ে আবৃত করে রাখুন। আমিন।

  • সাংবাদিক আলী আহমদ মাবরুরের ফেসবুক পোস্ট
Print Friendly, PDF & Email